Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

‘একসঙ্গে থাকাটা দাম্পত্য জীবনের সব নয়’

প্রসেনজিতের সঙ্গে ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবন, অভিনয় তো আছেই, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় এখন বিজনেস ওম্যানও বটেপ্রসেনজিতের সঙ্গে ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবন, অভিনয় তো আছেই, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় এখন বিজনেস ওম্যানও বটে

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৭ ০১:৩৯
Share: Save:

বলতে গেলে এখন তিনি প্রবাসী বাঙালি। ব্যবসার সূত্রে দিল্লিতেই থাকেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। শর্টস-টপ আর ছোট চুলের নায়িকাকে দেখলে বোঝা দুষ্কর, তাঁর বছর চোদ্দোর একটি ছেলে আছে। প্রসেনজিৎ-অর্পিতার ছেলে তৃষাণজিৎ ছুটিতে কলকাতায় এলেই অর্পিতাও চলে আসেন। ব্যস্ততার ফাঁকেই আনন্দ প্লাসের সঙ্গে আড্ডায় অর্পিতা।

প্র: এই সময়টা আপনাদের ফ্যামিলি রিইউনিয়নের মতো।

উ: বছরের দু’টো সময় আমরা তিনজন একসঙ্গে হই। এই গরমকাল আর শীতে। এই সময় কোনও কাজ রাখতে চাই না। এ বার ‘শব্‌’-এর প্রচারে অনেক ঘোরাঘুরি করতে হচ্ছে।

প্র: ছেলে কি এই সময় প্রচুর আবদার করে?

উ: আসলে আবদার করার আগেই আমরা সব কিছু করে ফেলি। বাড়ি এলে কিছু কিছু জিনিস খেতে চায়। সেগুলো করে দিতে হয়। মিশুকের সে ভাবে কোনও বায়না নেই। এই সময়টায় ও বাড়িতেই থাকতে চায়। কোথাও যেতেও চায় না। আমিই জোর করে বেড়াতে নিয়ে যেতাম। প্রতি বছর আমি আর ছেলে মিলে কোথাও যাই। গত বার মাসাইমারা গিয়েছিলাম। এ বার ছবি রিলিজের কারণে সেটা হচ্ছে না।

প্র: মা-ছেলের এই ট্রিপগুলোয় প্রসেনজিৎ সামিল হন না? আপনারা তিনজন বাইরে ছুটি কাটাচ্ছেন এ রকম তো দেখা যায় না!

উ: কোনও বারই নয়। বুম্বাদা আসলে এতটাই ব্যস্ত যে, আমরাও বলি না। ও নিজে যে খুব বেড়াতে ভালবাসে তাও নয়। মিশুকের যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন থেকে আমরা দু’জন ঘুরে বেড়াই। তবে মিশুককে বলেছি, শীতের ছুটিতে কোথাও যাব। যদিও না গেলে ছেলে কিছুই বলবে না। ও বাড়িতেই মজা করতে চায়।

প্র: মিশুক হস্টেলে চলে গেলে আপনি খুব ডিপ্রেসড হয়ে যান বলে শুনেছি...

উ: খুব স্বাভাবিক সেটা। আমরা সকলেই হই। হয়তো আমি একটু বেশি। তাই ছেলে যে দিন চলে যায়, আমিও দিল্লি চলে যাই। এই বাড়িতে তখন থাকাটাই অসহ্য হয়ে ওঠে!

আরও পড়ুন: সানি লিওন হতে চান সোহিনী!

প্র: ছেলেকে ঠিক কী কারণে বাইরে পাঠালেন?

উ: এই সিদ্ধান্তটা আমিই নিয়েছিলাম। মনে হতো, এই পরিবেশটা ওর পক্ষে ঠিক হবে না। ক্লাস থ্রি থেকে ও বাইরে থাকে।

প্র: প্রসেনজিৎ সাধারণত এই ঘরে বসেই সাক্ষাৎকার দেন। ওঁর এত ছবি এখানে। আপনার একটাও নেই!

উ: ঠিক উপরের একটা ঘরে আমার ছবি আছে। যদিও সেই ঘরটা সাজানো হয়নি। এই বাড়ির পুরোটাই বুম্বাদা সাজিয়েছে। আমি কিচ্ছু করিনি। এ বার বুম্বাদার যখন ইচ্ছে হবে তখন আমার ঘর সাজাবে। তবে অভিনয় করি বলেই, নিজের ছবি দিয়ে বাড়ি সাজানোর বিরোধী আমি।

প্র: আপনাদের বিয়ের ১৫ বছর হয়ে গেল। এত বছরের দাম্পত্য জীবন কী ভাবে দেখছেন?

উ: আপনি বলছেন বলে আমার মনে পড়ল। নয়তো খেয়ালই করিনি। আসলে, পাশাপাশি দুটো মানুষ থাকলেই ঘষা লাগে। সেই ঘষা থেকেই সংঘর্ষ। যদি মানুষ দুটো আলাদা থাকে তা হলে স‌ংঘর্ষের সম্ভাবনা কমে যায়। জার্নিটা মসৃণ হয়। চার বছর হয়ে গেল আমি অধিকাংশ সময়ই দিল্লিতে থাকি। মিশুক বাড়ি এলে এখানে এসে থাকি।

প্র: মানে মিশুকই এখন আপনাদের যোগসূত্র?

উ: খানিকটা তো বটেই।

প্র: জার্নি মসৃণ হবে বলে আলাদা থাকা শুরু করলেন?

উ: (জোর হাসি) না না! আমরা দু’জনেই একে অপরকে স্পেস দেওয়ায় বিশ্বাস করি। টু মাচ ওভারল্যাপিং, টু মাচ ইন্টারফেয়ারিংয়ে কোনও সম্পর্ক ভাল থাকে না। এটা অন্যের পক্ষে বোঝা হয়তো সম্ভব নয়। আমার অনেক বন্ধু, আত্মীয় এটা নিয়ে প্রশ্ন করে। আমি বলতে বলতে ক্লান্ত, একসঙ্গে থাকাটা দাম্পত্য জীবনের সব নয়। সারা জীবন পাশাপাশি থেকেও স্বামী-স্ত্রীর খারাপ সম্পর্ক আমি দেখেছি। দূরত্বটাও জরুরি। তাতে পারস্পরিক প্রয়োজনটা বোঝা যায়। আমার আর বুম্বাদার জীবনে যাই থাকুক না কেন, আমি যদি কোনও সমস্যায় পড়ি ও-ই সবচেয়ে আগে এগিয়ে আসবে। আমার দিক থেকেও তাই।

প্র: আলাদা পরিচিতি তৈরি করবেন বলেই কি ব্যবসার দিকে গেলেন?

উ: কিছুটা তো বটেই। মিশুক বাইরে চলে যাওয়ার পর আমার অনেকটা সময় ফাঁকা থাকত। তার আগে ছ’বছর কাজ থেকে দূরে ছিলাম। এটাও আমার সিদ্ধান্ত ছিল। এখন যে কাজটা আমি করি সেটা নিয়ে প্রচণ্ড খুশি। আর বুম্বাদাও আমাকে সমর্থন করেছিল। আসলে, আমাদের একে অপরের থেকে কোনও প্রত্যাশা নেই। একটু ব্যাখ্যা করে বলি। এই প্রত্যাশা জিনিসটা মারাত্মক। ধীরে ধীরে বাড়ে। প্রথমে মনে হবে, মাসে একদিন ও আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাক, তার পর প্রতি রবিবার একসঙ্গে কোথাও যেতে হবে। সেখান থেকে রোজ সন্ধে ৭টায় ফিরতে হবে। প্রত্যাশা কিন্তু দু’তরফে বাড়তেই থাকে। এটা তখনই হয়, যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন কোনও কাজ করে না। বিয়েটাই মেয়েদের সব নয়। সারাক্ষণ গালে হাত দিয়ে বরের কথা ভাবলে, উল্টো দিকের মানুষটাও বিরক্ত হবে।

প্র: আপনার প্রথম তিনটি প্রায়োরিটি?

উ: আমার ছেলে, কোম্পানি। তৃতীয় অভিনয়।

প্র: হিন্দিতে ‘চৌরঙ্গা’ আর ‘শব্‌’ করলেন। বাংলা ছবিতে আপনাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?

উ: এটা আমারও প্রশ্ন। কেন কোনও পরিচালক আমার কথা ভাবছেন না জানি না! হয়তো এখানে থাকি না বলে ভাবছেন, অর্পিতাকে পাওয়া যাবে না। তবে শৈবাল মিত্রর সঙ্গে ‘চিত্রকর’ ছবিতে কাজ করেছি। এটাও ঠিক, বছরে একটার বেশি ছবি করতে পারব না। আমার কোম্পানিকে সময় দিতে হয়। তার পর মিশুকের ছুটির সময়টা ফাঁকা রাখতে হয়। এগুলো করে একটার বেশি ছবি করা সম্ভব নয়।

প্র: বাংলা ছবি দেখেন?

উ: নাহ‌্‌, সকলকে বলতে থাকি, আমাকে একটু ডিভিডি পাঠাও (হাসি)!

প্র: তার মানে প্রসেনজিতের ছবিও দেখেন না।

উ: না।

প্র: এমন কখনও হয়েছে, কোনও ছবি দেখে ওঁকে বলেছেন, আপনার ভাল লাগেনি।

উ: কোনও দিন না। এটা আমার খুব ক্লিশেও লাগে। যদি আমার বর ব্যাঙ্কে কাজ করত কিংবা ডাক্তার হতো তা হলে কি আমি ক’টা ফাইল সই করলে, কটা অপারেশন করলে জানাতে চাইতাম? আমরা সিনেমা নিয়ে আলোচনাও করি না। আর এটা বিয়ের শুরু থেকেই।

প্র: আপনার জীবনে ঘটনার কমতি নেই। আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছে আছে?

উ: ইচ্ছে নেই। তবে লিখলে সব স্পাইসি স্টোরি লিখব (হাসি)!

প্র: প্রসেনজিৎ যেমন বলে থাকেন, নায়ক হতে হলে অনেক প্রেম করতে হয়। ওঁর প্রেমজীবন নিয়ে লিখবেন সেখানে?

উ: নিশ্চয়ই। আত্মজীবনী লিখতে গেলে সত্যি কথা লেখাই উচিত।

প্র: একটা স্পাইসি স্টোরির টিজার অন্তত দিন?

উ: আপনারা সাংবাদিক, খুঁজে বের করুন (জোর হাসি)!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy