ভারতবর্ষ যতটা হিন্দুদের ততটাই মুসলিমদের এবং সেই বিশ্বাসটা অমূলক নয়, সেই বিশ্বাসটা ভুল নয়। ছবি: সংগৃহীত।
‘সত্যমেব জয়তে’ নাম কেন?
একটা জায়গায় গিয়ে এ রকম কথাও আছে যে সত্যের জয় আর অন্য কোনও ভাবে হয় না। তখন বলা হয় যে সারা জীবন ধরে যদি কেউ মিথ্যের সঙ্গে লড়াই করে তা হলে আসল সত্যিটা কী সেটা বোধহয় মানুষ ভুলে যায়। স্বাধীনতার তিয়াত্তর বছর পর আমরা বোধহয় কোথাও একটা গিয়ে আসল সত্যটা ভুলে গেছি। এবং ভুলে গেছি বলেই আজকে এই রকম একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি যেখানে স্বাধীনতার তিয়াত্তর বছর পর আমাদের ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করতে হচ্ছে। স্বাধীনতার তিয়াত্তর বছর পরে তুমি হিন্দু না তুমি মুসলিম, এটা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। স্বাধীনতার তিয়াত্তর বছর পর তোমার রং কোন দিকে সেটা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে!
সেই জন্যই কি মনসুর, ইয়াসমিনদের গল্প বলতে চেয়েছেন?
হ্যাঁ... একদম। একটা হিন্দু লোকালিটিতে এক জন মুসলিম দোকানদার... তারা দেশভাগের সময়ে যায়নি... কারণ তারা মনে করেছে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা বিশ্বাস করেছে যে, ‘এটাই আমাদের দেশ’। ভারতবর্ষ যতটা হিন্দুদের ততটাই মুসলিমদের এবং সেই বিশ্বাসটা অমূলক নয়, সেই বিশ্বাসটা ভুল নয়।
মনসুর বলছে উত্তরপ্রদেশের নিজের গ্রামে সবাই তার নামের পাশে পদবির মতো ‘বাঙালি’ জুড়ে দেয়। তার মেয়ে শবনম রবীন্দ্রনৃত্য করে। মানে ‘তুমি বাঙালি না মুসলিম?’ বা একটি সম্প্রদায়ের গায়ে দগদগে করে দাগিয়ে দেওয়া কিছু আপত্তিকর তকমা— এই মানসিকতা ভাঙতে চেয়েছেন?
হ্যাঁ। অসম্ভব ভাল স্ক্রিপ্ট লিখেছে অরিজিত বিশ্বাস। সারা ছবি জুড়ে নানা ভাবে এটা আছে।
প্রত্যেক অভিনেতা এত ভাল যে...
অ্যাক্টররা প্রত্যেকে অসাধারণ অভিনয় করেছে। বিপিন শর্মা থেকে দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, জয়ন্ত কৃপালনি, অর্জুন (চক্রবর্তী), প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল, সৌরসেনী (মৈত্র), সুদীপ্তা (চক্রবর্তী)... প্রত্যেকে অসাধারণ অভিনয় করেছে। ন’দিনের মধ্যে আঠেরো শিফট-এ একটা নব্বই মিনিটের ছবি তৈরি করা... কারণ একটা ভীষণ টাইট বাজেটের মধ্যে ছবিটা করতে হয়েছে। কিন্তু আমি কোথাও কম্প্রোমাইজ করতে পারিনি বলে... বা চাইনি। তার পরেও একটা ছবি এই ভাবে বানানো যায়... সেটায় খুব চাপ পড়ে, কষ্ট হয়। কিন্তু কী করব? আমাদের দেশে এই ভাবেই ছবি করতে হবে।
কোয়েল একজন প্রচণ্ড ডেডিকেটেড, প্যাশনেট এক জন অভিনেত্রী: অরিন্দম শীল
থিয়েটারের জন্য তৈরি ছবির শুটিংয়ের দিন কমে যাচ্ছে। আমার এক পরিচিত পরিচালকের কাছে থিয়েটারের জন্য সাত দিনে ফিচার ফিল্ম করার প্রস্তাব এসেছে। ওয়েবেও নব্বই মিনিটের জন্য ন’দিন আঠেরো শিফট। বাংলা ইন্ডাস্ট্রি কোন দিকে যাচ্ছে?
না... দেখুন... আমি অত্যন্ত ডিসিপ্লিনড এবং আমার প্রি-প্রোডাকশন সেই ভাবে করি বলে এটা সম্ভব হয়। সবার পক্ষে তো এটা সম্ভব হয় না, ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট... এবং আমার ক্ষেত্রেও এ ভাবে একটা ছবি করলে মনে হয় আমার জীবনের দু’বছর কমে গেল। কারণ সমস্তটাকে একটা সময়ের মধ্যে আনা।
নিংড়ে নেয়?
হ্যাঁ, সবটা নিংড়ে নেয়। নিয়মের প্রেশার আছে, চোদ্দো ঘণ্টার প্রেশার আছে... তার মধ্যে পরের দিন আমার সেট ভেঙে ফেলা হবে... কী করব ভেবে উঠতে পারছি না। তো... তার মধ্যেও কাজটা করলাম।
এই মুহূর্তে ওয়েব প্ল্যাটফর্মকে সিনেমার অন্যতম ভবিষ্যৎ বলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু আপনাকে এ রকম টাইট স্কিডিউল ও বাজেটের মধ্যে...
আমার পরের ছবি এ ভাবে করছি না। পরের যে কাজটা করছি এক একটা এপিসোড চল্লিশ মিনিটের। সেটা আমি সাত দিনের কমে শুট করতে পারবো না। এক একটা এপিসোড মিনিমাম সেভেন ডেজ শুট করব। তার কারণ, এটা একটা সুযোগ ছিল ভীষণ একটা রিয়েলিস্টিক অ্যাপ্রোচে ছবিটা করা। তো সেটায় প্রচণ্ড অবদান হচ্ছে আমাদের ডিওপি অয়নের (শীল)। অয়ন যদি এই ভাবে... অয়নকে বলতাম, ‘ক্যামেরা এখানে। লাইট রেডি?’ ও বলত, ‘হ্যাঁ, লাইট রেডি।’ মানে এই ভাবে কাজ করেছি, একদম রিয়েল লাইটে শুট করেছি এবং ফ্রেম, ছবি, প্যালেট সমস্ত আগে থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেটা না হলে কাজটা করা সম্ভব ছিল না এবং আর্টিস্টরা যে অসাধারণ অভিনয় করেছে... প্রত্যেকে... সেই অভিনয়টাও যদি না পেতাম তা হলে...
মানে এতগুলো হিট দেওয়ার পরেও ওয়েবের প্রথম ফিল্মে বেশ ভালই পরীক্ষা দিতে হল?
না... দেখুন... আমি জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে পরীক্ষা দিতেই চাই। আমার আগের আটটা ছবি সুপারহিট হয়েছে বলে ওয়েবে প্রথম কাজ করতে এসে অবহেলা করতে পারি না। আমি জানি যে ওয়েবে আমার থেকে অর্ধেক বয়সী লোকজনেরা ডিরেক্টর, আমার কম্পিটিটর। তো সেখানে আমাকে তাদের ওপরে যেতে হবে, তাদের থেকে বেটার কাজ করে দেখাতে হবে।
অর্ধেক বয়সীদের থেকে বেটার পেরেছেন?
দর্শকের এক্সপ্রেশন দেখে তো মনে হচ্ছে যে... অনেকে বলতে বলতে বেরলো যে ‘এ বছরের শ্রেষ্ঠ ছবি দেখলাম।’
আপনার ফিল্মে, শবরকেই যদি ধরা যায়, শবর কনস্ট্যান্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড পাল্টাচ্ছে। শবরের ওই মুহূর্তের মানসিক স্তর ওই টেকনিকের মধ্যে। টেকনিকটা হয়তো পুরনো, কিন্তু...
পুরনো টেকনিক যদি নতুন ভাবে ইউজ করা যায়... মানে আমি নিও ক্লাসিকাল ওয়েতে ছবি শুট করি। যদিও এটা অ্যাবসোলিউটলি মডার্ন টেকনিক অব ফিল্ম মেকিং যেটা ‘সত্যমেব জয়তে’-তে করা হয়েছে এবং আমার আগের ন’টা ছবির সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। এবং এর পরে আমি ‘মিতিন মাসি’ শুট করলাম, তারও কোনও মিল নেই। মানে এটা অ্যাবসোলিউটলি ডিফারেন্ট।
কোন দিক থেকে ডিফারেন্ট?
ছবির ট্রিটমেন্টের দিক থেকে। কোথাও একটা মাথার মধ্যে ‘ডানকার্ক’ (ক্রিস্টোফার নোলানের শেষতম ফিল্ম)... কোথাও একটা মিলেমিশে... এই ছবির মিউজিক লক্ষ্য করবেন, কোথাও একটা ‘ডানকার্ক’-এর মিউজিকের মতোই।
উন্নাও, কাশ্মীর, সাম্প্রতিক মেলোড্রামাটিক জাতীয়তাবাদের প্রেক্ষাপটে ‘সত্যমেব জয়তে’ বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে। কিছু বলতে চান?
কিছু বলার নেই। এখন বলা বন্ধ করে দিয়েছি। যা বলার ঠিক করেছি ছবির ভাষাতেই বলবো।
ইন্ডাস্ট্রিতে দলবদল...
এগুলো একদম ভেরি ট্রিভিয়াল ম্যাটারস। দে হ্যাভ টেকেন ব্যাকসিটেড ইন মাই লাইফ। দে রিয়েলি ডোন্ট বদার মি।
কোয়েলের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
অসম্ভব ভাল। প্রচণ্ড ডেডিকেটেড, প্যাশনেট এক জন অভিনেত্রী, আন্ডার ইউটিলাইজড। কোয়েল এক্স্যাক্টলি কী রকম কাজ করেছে সেটা ‘মিতিন মাসি’ ২ অক্টোবর রিলিজ করলে বোঝা যাবে!
আরও পড়ুন: ‘ওই শব্দগুলো আমার নয়’
আরও পড়ুন: ‘এ বার দেখছি বিয়েটা করতেই হবে’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy