অপরাজিতা আঢ্য। গ্রাফিক : সনৎ সিংহ।
এই মুহূর্তে ছোট পর্দায় কোজাগরী বসুর চরিত্রে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। ছেলে, মেয়ে, বৌমা, জামাই নিয়ে ভরা সংসার তাঁর। তবে সামনেই পয়লা বৈশাখ। সেই নিয়ে চূড়ান্ত ব্যস্ততা ‘জল থই থই ভালবাসা’ সিরিয়ালের সেটে। বাংলা নববর্ষে কোজাগরীর বাড়িতে আসবেন একঝাঁক অতিথি। এর মাঝেই আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে মুড়ি-আলুর দম খেতে খেতে আড্ডা দিলেন অপরাজিতা আঢ্য। পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের পরিকল্পনা থেকে ধারাবাহিকের সেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানোর মুহূর্ত, নিজের সংসার জীবন, টলিপাড়ার বিয়ে বিতর্ক থেকে শাড়ি বিতর্ক— নিজের অবস্থানের কথা জানালেন অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: কোজাগরীর সংসারে জোরকদমে পয়লা বৈশাখের প্রস্তুতি চলছে। অপরাজিতার পরিকল্পনা কী?
অপরাজিতা: হ্যাঁ, কোজাগরীর সংসারে তো প্রস্তুতি চলছেই। কিন্তু আমার সংসারে তথৈবচ অবস্থা। আমার তো ১৪ জনের সংসার। এ ছাড়াও উৎসবের দিনগুলোতে আরও বন্ধুরা আসে। তবে এ বার আমার স্কুলের বন্ধুদের রিইউনিয়ন হবে। কেউ নেপাল থেকে আসছে, কেউ আবার দিল্লি থেকে। বন্ধুরা বহু বছর পর একজোট হচ্ছি। দুপুরে খাওয়াদাওয়া করব, আড্ডা হবে। তাই ওই দিন কোনও কাজ রাখছি না।
প্রশ্ন: সিরিয়ালে আপনি ভাল শাশুড়ি, বাস্তব জীবনে শাশুড়ি-বৌমার সম্পর্ক ভাল থাকে কোন গুণে?
অপরাজিতা: আমার কেরিয়ারের বয়স ২৮। আমার বিবাহিত জীবন ২৭ বছরের। বিয়ে হয়ে ১৪ জনের সংসারে আসি। বর্তমানে শ্বশুর ও দিদিশাশুড়ি মারা যাওয়ার পর সদস্য সংখ্যা ১২। এই পেশায় থেকে ১২ জনের একান্নবর্তী পরিবারে এত বছর ধরে আমি আছি। আমার মনে হয়, বিয়ে মানে কোনও ভাল লাগা নয়, কোনও ভালবাসা নয়। বিয়ে মানে লাভ নয়, বিয়ে মানে দায়িত্ব। তুমি যদি দায়িত্ব নিতে পারো, তোমার দায়িত্বও সবাই নেবে। বিয়ের পর থেকেই এই কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছি। আসলে যখন আমার বিয়ে হয়, সেই সময় আমার সংসার এত বড় ছিল না। তিন জনের পরিবার। শ্বশুর রাইটার্সে চাকরি করতেন, শাশুড়িমা চাকুরিরতা ছিলেন। স্বামী তো এই ইন্ডাস্ট্রির মানুষ। আমি দেখতাম যে যার মতো বাড়িতে আসে, খায়-দায় ঘুমিয়ে পড়ে। এ দিকে আমি যে হেতু ছোট থেকেই একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছি, বিয়ের পরেও মনে হয়েছিল এটা কোনও সংসারই নয়। একটা সংসার তৈরি করতে হবে। তখনই খুড়শ্বশুর, ননদ সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকা শুরু করি। দায়িত্বের সঙ্গে তৈরি হয় অভ্যাস।
প্রশ্ন: ব্যক্তিগত জীবনে শাশুড়ির সঙ্গে আপনার সুসম্পর্কের কথা এখন অনেকেই জানে।
অপরাজিতা: আসলে উনি আমার জীবনের যশোদা মা। আমার যেখানেই বিয়ে হোক না কেন, শাশুড়ি জীবনে না এলে আমার কিছুই হত না। তেমনই ওঁর কাছে ভগবান বলো, বিশ্বাস বলো, ভালবাসা সবটাই ‘মনা’ (অপরাজিতার ডাকনাম)। একটা বয়সে এসে মানুষের আত্মবিশ্বাস টলে যায়। সেই সময় আমি ওঁকে ভরসা দিয়েছি। এখনও তিনি সারা পৃথিবী একা ঘুরে বেড়ান। আমি মনে করি, কারও চলে যাওয়া অন্য কারও জীবনের প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না। এক সময় সবাইকে চলে যেতে হবে। তার মানে আমাদের থেমে থাকলে হবে না। আমি যখন শাশুড়িকে স্মার্ট ফোন এনে দিই, সে সময় আমার বর ভেবেছিল শাশুড়ি হয়তো সেটা ব্যবহার করতে পারবেন না। আমি বলেছিলাম, ‘‘মা তোমার-আমার থেকে বেশি স্মার্ট।’’ আমার শাশুড়ি রোজ সকালে ৬ টায় ঘুম থেকে ওঠেন। আমি শুটিং না থাকলে ১১টায় উঠি। ওঁর দায়িত্ববোধ আমার থেকে অনেক বেশি। আমার শাশুড়ি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দেন, হইহই করেন, বিয়ার খান। আমি বলি, বেশ করেছ।
প্রশ্ন: আজকাল তো প্রেম ভাঙা, বিয়ে ভাঙা অনেকটাই জলভাত। ‘পারফেক্ট রিলেশনশিপ’-এর কোনও সংজ্ঞা হয় কি?
অপরাজিতা: আমরা ‘পারফেকশন’ খুঁজতে গিয়ে গোলমালটা করে বসি। এই জীবন, প্রকৃতি কোনও কিছুই কি নিখুঁত? আসলে আমরা ভালবাসি যখন-তখন, কোনও মানুষের গুণ দেখে। কিন্তু ভালবাসি বলেই কোনও মানুষের শর্তাধীন নই। একে অপরের মর্জি মতো চলা, বা সারাক্ষণ পছন্দ-অপছন্দ মাথায় নিয়ে চলা মানে তো চুক্তির মতো। আমি যদি আশা করে থাকি আমার বর হৃতিক রোশনের মতো দেখতে হবে, তা হলে তো আমার সংসারে অশান্তি হবে। সে তার মতো করে সুন্দর করে বাঁচবে। আমিই তাকে সাহায্য করব।
প্রশ্ন: বর্তমানে সময়ে কি মানুষের ধৈর্য কমছে?
অপরাজিতা: হ্যাঁ। এখন কেউ কেউ কারও উপর নির্ভরশীল নয়। আগে মেয়েদের ভয় ছিল বিয়ে হয়ে গিয়েছে মানেই মা-বাবা তো দায়িত্ব নেবে না। সবটাই মুখ বুজে মেনে নিত। এখন সবাই লেখাপড়া করে, বুদ্ধি রাখে। স্মার্টফোনের দৌলতে সবাই জীবন বুঝে গিয়েছে। তাই এখন মেয়েরা লজ্জা, অপমান ও আত্মসম্মানের এই আঘাত আর মেনে নেয় না। আত্মসম্মানে আঘাত করলে কেন মেনে নেব? মোটেই মানব না।
প্রশ্ন: এখন তো সিরিয়ালে অনেকগুলো ঘণ্টা দিতে হয় বলে অনেকে অভিযোগ করেন। আপনার একঘেয়েমি আসে কখনও?
অপরাজিতা: আমি কাজটা আনন্দ করে করি। কারণ আমার এতগুলো ঘণ্টার জন্য নির্মাতারা আমাকে পারিশ্রমিক দিচ্ছেন। তাই আমার দায়িত্ব ২০০ শতাংশ দেওয়া। সচিন এক দিন খারাপ খেলতে পারেন, কিন্তু আমি আমার দায়িত্ব থেকে সরি না। সব দিন হয়তো সমান পারফর্ম করতে পারি না। কিন্তু চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে টলিপাড়ায় তারকাদের বহুবিবাহ আলোচনার কেন্দ্রে। আপনি কি বিশ্বাসী?
অপরাজিতা: দেখুন, সম্পর্ক টেকা না টেকা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। এমনকি পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপরেও নির্ভর করে। সম্পর্ক কেন নষ্ট হয়, সেটা একসঙ্গে না থাকলে বোঝা যায় না। আমার যদি সম্পর্ক না টেকে বা বঞ্চিত হই, তা হলে কি আমার জীবনে প্রেম আসতে পারে না! তা না হলে তো আমি নিজেই বিশ্বাস হারাব। আমি একটা ক্লাসে ফেল করতেই পারি, তা বলে সারা জীবন পড়াশোনা করব না এমন তো নয়। সুতরাং এক সম্পর্কে যখন ফেল করেছি, সেখান থেকে বেরিয়ে আর একটা সম্পর্ক যদি বিশ্বাস জোগায়, সেটা আমাকে নতুন করে পথ দেখাতে পারে। যদি সেটাও ফেল করে তা হলেও আশা শেষ হয় না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেউ এক জন প্রয়াত হলে, তখন যদি তাঁর জীবনে অন্য কেউ আসেন। কেউ যদি সুন্দর করে জীবনটা গুছিয়ে দেন, ক্ষতি কী! সেই তো একদিন মরে যেতেই হবে, যদি চলার পথে একটু আনন্দ পাই তাতে অপরাধ তো কিছু নেই।
প্রশ্ন: আচ্ছা সাংসারিক কথা তো বললেন। কিন্তু মুড়ি-আলুর দম খাচ্ছেন! ডায়েট?
অপরাজিতা: আমি সব খাই। ভাত খাই, লুচি খাই। আমি ভাত না খেয়ে এক দিনও থাকতে পারব না। আমার তো ‘জ়িরো ফিগার’-এর দরকার নেই। এই ফিগারেই ২৭ বছর চলে গেল (হাসি)। শুধু তাই নয়, ভীষণ ভাবে গ্রহণযোগ্য। আমি রোগা হয়ে গেলে খুব চিন্তা হয়, খুব খারাপ দেখতে লাগে। রোগা চেহারা আমার পছন্দ নয়, আমি ‘মেদিনী দেবী’ হয়ে থাকতে চাই (হাসি)। পৃথিবীর মেদ হচ্ছে তার গাছপালা, খনিজ। আর পৃথিবীতে যত মেদ থাকবে ততই সুন্দর হবে। তবে আমি রোজ যোগাসন করি। ধ্যান করি।
প্রশ্ন: এত বছর কাজ করছেন, ছোট পর্দায় আপনাকে বেশির ভাগ সময় শাড়ি পরেই দেখা গিয়েছে। কিন্তু এই যে এখন চারিদিকে ‘শাড়ি বিতর্ক’। আপনার কী মত?
অপরাজিতা: শাড়ি পরার এই ধরন নিয়ে কিছু একটা চলছে। তবে কে কী বলেছেন, সেটা না জেনে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমার মনে হয়, কে কী ভাবে শাড়ি পরবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে। আমার খুব ভাল চেহারা, আমি চাই মানুষের প্রশংসার তীব্রতা আমাকে আকর্ষণ করুক। তার চোখে দারুণ দেখতে লাগছে। কেউ যদি লো কাট ব্লাউজের সঙ্গে শিফন শাড়ি পরেন, তিনি যদি আত্মবিশ্বাসী হন, তা হলে পরবেন। আমরা তো নিজের জন্য জামাকাপড় পরি না, অন্যের আমাকে ভাল লাগবে বলে পরি। মানুষ যদি শুধু নিজের জন্য জামাকাপড় পরত, তা হলে তো ম্যাক্সি পরেই কেটে যেত। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মত, আমি নিজে এমন পোশাক পরব যা সর্বজনগ্রাহ্য। পোশাকের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি কী ধরনের বার্তা দিতে চাইছেন, সেটা তাঁর মানসকিতার উপর নির্ভর করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy