Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Ritabhari Chakraborty Birthday

‘বহু অমিল থাকলেও আমরা একে অপরের পাশেই থাকি’, ঋতাভরীর জন্মদিনে লিখলেন দিদি চিত্রাঙ্গদা

২৬ জুন, বুধবার অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীর জন্মদিন। বিশেষ দিনে আনন্দবাজার অনলাইনের পাতায় বোনের সঙ্গে তাঁর সমীকরণ তুলে ধরলেন দিদি চিত্রাঙ্গদা শতরূপা।

Image of actor Chitrangada Satarupa and Ritabhari Chakraborty

চিত্রাঙ্গদা ও ঋতাভরী। ছবি: সংগৃহীত।

চিত্রাঙ্গদা শতরূপা
চিত্রাঙ্গদা শতরূপা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪ ০৮:০০
Share: Save:

পলিনের (ঋতাভরীর ডাক নাম) জন্মদিনে এ বার শহরেই রয়েছি। এই দিনটার জন্যই আমার কলকাতায় আসা। সারা বছর আমরা সকলে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু মা-বোনের জন্মদিন, দুর্গাপুজো বা নতুন বছর— এই বিশেষ দিনগুলি চেষ্টা করি পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে কাটাতে।

আজ পলিনকে নিয়ে লিখতে বসে ছোটবেলার অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। মা (পরিচালক শতরূপা সান্যাল) তো প্রায় আমাদের একা হাতে বড় করেছেন, কিন্তু দেখতাম, মাকে যত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়েই যেতে হোক না কেন, আমাদের দুই বোনের জন্মদিনটা সব সময়েই উৎসাহ নিয়ে পালন করতেন। জন্মদিন যে ব্যক্তির জীবনে বিশেষ একটি দিন, সেটি আমাদের ছোট থেকেই মা বুঝিয়েছিলেন। হাতে সময় থাকলে মা জন্মদিনে আমাদের জন্য নিজের হাতে পোশাকও তৈরি করে দিয়েছেন। জন্মদিন মানেই যে নতুন জামা, এই ধারণাও মায়ের থেকেই পেয়েছি।

পরবর্তী সময়ে মা যখন পরিচালনায় চলে এলেন, তখন হাতে সময় প্রায় থাকতই না। তাই মা আমাদের দোকানে নিয়ে গিয়ে জামা কিনে দিতেন। যার জন্মদিন সে তো পেতই, অন্য জনের ভাগ্যেও একটা জামা জুটত।

Elder sister Chitrangada Satarupa penned her thoughts on Bengali actress Ritabhari Chakraborty’s birthday

মায়ের সঙ্গে চিত্রাঙ্গদা এবং ঋতাভরী। ছবি: সংগৃহীত।

আমি আর পলিন, আমরা দু’জনেই একে অপরের জন্মদিন নিয়ে খুবই উত্তেজিত থাকি। আগে তো বাঙালি বাড়িতে বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করার চল ছিল না, তাই আমাদের জন্মদিনে দেখতাম, বাড়িতেই মা সকাল থেকে নিজের হাতে রান্না করছেন। লুচি, আলুর দম বা পোলাও, মাংস বা অন্য কিছু। মাকে সাহায্য করতেন আমার দিদা। ওঁরা বাড়িতেই একটা ফ্রায়েড রাইস আর চিলি চিকেন রান্না করতেন, অদ্ভুত তার স্বাদ! সেই স্বাদ এখনও মুখে লেগে রয়েছে। আমাদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অনেক বন্ধুবান্ধব আসত। মনে পড়ে, মা অন্য বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন খেলারও আয়োজন করতেন।

ছোটবেলায় আমরা দুই বোন খুব ঝগড়া করতাম। এমন কত ঘটনা যে আছে! লিখতে গিয়ে নিজেই হেসে ফেলছি। এক বার রাগের মাথায় পলিনকে চিরুনি ছুড়ে মেরেছিলাম। তার পর মায়ের ভয়ে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে সামনের পার্কে গিয়ে বসেছিলাম।

পলিনও যে শান্ত ছিল, তেমন নয়। যথেষ্ট দুষ্টু ছিল ও! এক বার আমাদের এক দাদার সঙ্গে যড়যন্ত্র করে আমাকে আর আমার মাসির মেয়েকে বারান্দায় অনেক ক্ষণ বন্ধ করে রেখেছিল পলিন। মায়ের হাতে ধরা পড়ে ও বলেছিল, ও নাকি ভিলেন-ভিলেন খেলছিল! ওরা খলনায়ক আর আমরা বন্দি।

Elder sister Chitrangada Satarupa penned her thoughts on Bengali actress Ritabhari Chakraborty’s birthday

শৈশবে চিত্রাঙ্গদা ও ঋতাভরী। ছবি: সংগৃহীত।

এ রকম দুষ্টুমি আমাদের মধ্যে চলতেই থাকত। সে সব দিন নিয়ে এখনও আমাদের দু’জনের কথা হয়। পলিন বলে, ও আমাকে আগলে রাখে, কিন্তু আমিও যে ওকে যথেষ্ট আগলে রাখি, সেটাও এই লেখায় বলেই দিলাম!

এমন একটা সম্পর্ক আমাদের, অথচ আমরা প্রতি দিন যে ফোনে একে অপরকে মেসেজ করি বা গল্প করি, তেমন নয়। তা সত্ত্বেও জানি, দু’জনেই একে অপরের খুব বড় সাপোর্ট, ভাল বন্ধু। ব্যস্ততা থাকলেও প্রয়োজনে আমরা ঠিকই একে অপরের পাশে থাকি।

আমরা দু’জনেই অভিনয় জগতের মানুষ। দু’জনেই গান শুনতে বা গাইতে এবং ছবি আঁকতে ভালবাসি। তবে শিল্পের ক্ষেত্রে আমাদের দু’জনের পছন্দ কিন্তু একদম আলাদা। দু’জনে ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার কাজে বিশ্বাস করি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, একে অপরের পছন্দ বা কাজকে ছোট করে দেখি। তাই সরাসরি একে অপরকে অনুপ্রাণিত না করলেও, কাজের প্রতি একে অপরের পরিশ্রম ও নিষ্ঠা আমাদের আরও ভাল কাজ করতে উৎসাহিত করে। কখনও মতানৈক্য তৈরি হলে, দু’জনে দুজনকে বোঝানোরও চেষ্টা করি।

মেয়েদের জীবনে ‘সেটলমেন্ট’ নিয়ে নানা কথা শুনি। আমি বিয়ে করেছি। তার পর থেকে দিদি হিসাবে পলিনেরও জীবন নিয়ে কী ভাবনা, সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। আমার মনে হয়, জীবনে ‘থিতু’ হওয়া বিষয়টি একটু সেকেলে চিন্তা। জীবনে ‘সেটলড’ হতে গেলে যে এক জন সঙ্গী থাকতেই হবে— এ রকম তো কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আমার মতে, ‘সেটলমেন্ট’ বিষয়টি আমাদের মানসিকতার উপর নির্ভর করে। মনের দিক থেকে মানুষটি কি ‘সেটলড’, সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ!

Elder sister Chitrangada Satarupa penned her thoughts on Bengali actress Ritabhari Chakraborty’s birthday

সঙ্গী না থাকলেও যেমন জীবনে থিতু হওয়া যায়, আবার তেমন সন্তানের জন্মের পরেও তো কেউ ‘সেটলড’ না-ও হতে পারেন। নিজের জীবনের লাগাম নিজেকেই ধরতে হবে। তাই বিয়ে করবে, না কি করবে না, সেই সিদ্ধান্ত একান্তই পলিনের। তবে ও যে পথেই এগোক না কেন, আমাকে ও সব সময়েই পাশে পাবে।

পলিন সাধারণত জন্মদিনে বাড়িতেই থাকতে পছন্দ করে। কাছের মানুষদের সঙ্গে দিনটা উদ্‌যাপন করতে চায়। এ বারেও আমরা সকলে মিলে সেটাই করব। তবে এই বছর ও জন্মদিন বলে বিশেষ ‘থিম পার্টির’ আয়োজন করেছে। থিম ‘পঞ্চাশের দশক’। আমার শ্বশুরবাড়ি, পলিনের বন্ধু-বান্ধব মিলিয়ে অনেকেই আসবেন। আশা করি, সকলে মিলে একটা ভাল সন্ধ্যা কাটবে।

প্রত্যেকের জন্মদিনে পলিন একটা বিশেষ জিনিস করে। এটা সম্পূর্ণ ওর নিজস্ব ‘স্টাইল’। নিজের হাতে ‘গিফ্‌ট হ্যাম্পার’ তৈরি করে উপহার হিসাবে দেয়। সেগুলি দেখতে এতটাই সুন্দর হয় যে, মনে হয়, ঠিক যেন কোনও পেশাদার শিল্পীর তৈরি। আমি তো ওকে মজা করে বলি যে, এই গুণটা ওর দ্বিতীয় পেশা হতেই পারে।

এই বছর ওর জন্মদিনে আমি প্রথম বার ওর জন্য একটি ‘গিফট হ্যাম্পার’ তৈরি করেছি। সেটা ওকে জানিয়েওছি। ও তা নিয়ে খুবই উত্তেজিত। তবে তার মধ্যে কী কী থাকছে, সেটা আর এখানে জানাতে চাই না। এমনকি আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য এই লেখাটার কথাও পলিনের কাছে একটা ‘সারপ্রাইজ়’ হিসাবেই রাখতে চাই।

সব শেষে কিছু কথা, পলিন, তোর জন্য। জীবনে কাজ, খ্যাতি সবই আসবে, আবার হয়তো চলেও যাবে। কিন্তু আমি চাই, চিরকাল তুই যেন ভালবাসায় মুড়ে থাকিস। তোর মন ভাল থাকুক। তুই সুস্থ থাক। আর অবশ্যই আনন্দে থাক। সব সময় জানবি, আমি তোর পাশেই আছি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE