স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
একের পর এক সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেছেন। তাড়া রয়েছে? প্রশ্ন করতেই উত্তর এল, ‘‘আগামী মাসে মেয়ের কাছে যাব। তাই সময়ে সব কাজ শেষ করে নিতে চাইছি।’’ এখনও স্পষ্টবক্তা। চেনা স্রোতে গা ভাসাতে নারাজ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি এক বিকেলে আনন্দবাজার অনলাইনের রেকর্ডারের সামনে কেরিয়ার এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আড্ডা দিলেন অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: এ বারে তো ভোট দিতে পারলেন না।
স্বস্তিকা: দেড় ঘণ্টা বুথে ছিলাম। কাউন্সিলরকে জানিয়েছিলাম। আমার জনসংযোগ খুব খারাপ। হয়তো চার জনকে চিনি, প্রয়োজনে তাঁদেরই ফোন করি। সে দিন রাজ (রাজ চক্রবর্তী) ও সায়নীর (সায়নী ঘোষ) সঙ্গেও কথা হয়েছিল। আসলে, কোনও ভাবে ভোটটা দিতে চেয়েছিলাম। সবাই চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কিছু করা গেল না। হাতে একটু সময় পেলেই কাজগুলো করিয়ে নেব।
প্রশ্ন: আপনার জনসংযোগ খারাপ! এখন তো দেখা যায়, নতুনেরাও মরিয়া হয়ে পিআর করতে ব্যস্ত।
স্বস্তিকা: (হেসে) আমার প্রয়োজন হয় না। বাবা আমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন— ‘‘স্রোতে গা ভাসিয়ো না!’’ রোজ এটা এক বার করে আউড়ে নিই। পিআর বা স্ট্র্যাটেজি, কোনও দিনই এ সবে বিশ্বাস করিনি। ছোট থেকেই চেয়েছিলাম, অভিনয়টাই আমার পরিচিতি তৈরি করবে। সে দিকেই এগিয়েছি। প্রত্যেকটা কাজ আরও ভাল করার চেষ্টা করি। মানুষ আমাকে চেনে, সেটাই অনেক। আমার সকলকে না চিনলেও চলবে।
প্রশ্ন: ভোটের সময় দেব ও সায়নীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করেছিলেন। তা নিয়েও সমাজমাধ্যমে জল্পনা শুরু হয়।
স্বস্তিকা: হ্যাঁ, মানুষ এখন কাউকে গালাগাল করার সুযোগ খোঁজে। আমি এ সব নিয়ে মাথা ঘামাই না।
প্রশ্ন: ‘বিজয়া’ বাস্তব ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৈরি। যার সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনার যোগ রয়েছে। আপনি কেন রাজি হলেন?
স্বস্তিকা: কারণ, একটা ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদের জায়গা শুধু ফেসবুক হতে পারে না। কোনও কিছু ঘটলেই সেটা নিয়ে ফেসবুকে লিখতে হবে বা কোনও চ্যানেলের আলোচনায় যোগ দিতে হবে— এগুলো আমার পছন্দ নয়। আমি শিল্পী। কাজের মাধ্যমেই আমার প্রতিবাদ। সমাজমাধ্যমের প্রতিবাদ মানুষ ভুলে যায়। এই কাজটা থেকে যাবে।
প্রশ্ন: তারকারা এখন যে কোনও ঘটনাতেই সমাজমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান। এই প্রবণতা কি ভাল?
স্বস্তিকা: দেখুন, আমাদের জীবনগুলো তো এখন রিল-সর্বস্ব হয়ে গিয়েছে! সেখানে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখতে হবে বা প্রচারে থাকতে হবে, এই মানসিকতা থেকেই এগুলো হচ্ছে। আমি জানি, সমাজমাধ্যমে কিছু লিখলেই তা নিয়ে চর্চা হবে। আমাকে নিয়ে অনেক দিন আলোচনা হচ্ছে না— এই ভাবনা থেকেই এগুলো হচ্ছে।
প্রশ্ন: অণ্বেষা (স্বস্তিকার মেয়ে) তো পড়াশোনা সবে শেষ হয়েছে। মা হিসেবে ওকে নিয়ে কখনও র্যাগিংয়ের ভয় কাজ করেছে?
স্বস্তিকা: ও এখন আপাতত এক বছর চাকরি করবে। তার পর পিএইচডির পড়াশোনা শুরু করবে। ঈশ্বরের আশীর্বাদে ওকে কখনও এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। কিন্তু আমি তো একজন মা। তাই সব সময় একটা চিন্তা লেগেই থাকে।
প্রশ্ন: এখন অল্প বয়সেই ছোটরা স্বাধীনতা চায়। অভিভাবকদের কাছে লুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকেই কি আত্মকেন্দ্রিকতা জন্মায়? আর তার জন্যই কি র্যাগিংয়ের মতো অপরাধ আড়ালেই রয়ে যায়?
স্বস্তিকা: কথা বলাটা খুবই প্রয়োজন। আমি জানি, ওরা বলতে ভয় পায়। কিন্তু ছোটদের মাথায় রাখা উচিত, ওরা যা-ই করুক না কেন, শেষ পর্যন্ত পরিবার কিন্তু পাশেই থাকবে। পরিবারের যে কোনও কাছের একজন, যাঁর সঙ্গে আড়াল ছাড়াই কথা বলা যায়, তাঁকে অন্তত সমস্যাটা জানালে, তিনি নির্দিষ্ট জায়গায় সেটা পৌঁছে দিতে পারবেন।
প্রশ্ন: মেয়ের সঙ্গে আপনার তো বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
স্বস্তিকা: আমি তো ওকে রোজ বলি যে, আমাকে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। মা কী ভাববে, তা ভেবে যেন কিছু লুকিয়ে না যায়। সমস্যা হলে দু’জনে মিলে তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করব। এখনও পর্যন্ত আমাদের সম্পর্কটা খুবই ভাল। ও কবে কার সঙ্গে ডেটে গিয়েছে, সেটাও আমি জানি। সন্তানকে এই কমফোর্ট জ়োনটা বাবা-মাদেরই দিতে হবে। জুলাইয়ে প্রায় সাত-আট মাস পর মেয়ের সঙ্গে দেখা হবে। ভেবেই মনটা আনন্দে ভরে উঠছে।
প্রশ্ন: বাংলায় নারীকেন্দ্রিক কাজ মানেই কি নির্মাতাদের আপনার কথা মনে পড়ে?
স্বস্তিকা: ভাবতেই হবে (হাসি)।
প্রশ্ন: টাইপকাস্ট হওয়ার ভয় কাজ করে না?
স্বস্তিকা: প্রত্যেকটা চরিত্র তো আলাদা। ‘নিখোঁজ’-এর চরিত্রের সঙ্গে ‘বিজয়া’র চরিত্রের কোনও মিল নেই। তার সঙ্গে ‘টেক্কা’ বা ‘দুর্গাপুর জংশন’-এরও কোনও মিল নেই। তাই টাইপকাস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। আমার একটাই প্রচেষ্টা থাকে, যেন সেখানে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে না দেখে দর্শক চরিত্রটিকে দেখেন।
প্রশ্ন: কিন্তু ইদানীং একাধিক প্রজেক্টে আপনি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন।
স্বস্তিকা: বিভিন্ন শেড রয়েছে। এক রকম তো নয়।
প্রশ্ন: এক সময়ে প্রথম সারির নায়িকারা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হতেন না। এখন কি কনটেন্ট বদলে গিয়েছে বলে পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগ বেড়েছে?
স্বস্তিকা: এখনও অনেকেই ২২-২৩ বছরের বড় বাচ্চার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে চান না। খবর পাই বলে জানি। ‘মোহমায়া’ সিরিজ়ে তো আমি ২৮ বছরের বাচ্চার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। দর্শক তো বিশ্বাস করেছিলেন। আমার অভিনীত চরিত্রগুলো দেখে অন্তত ‘‘এটা ঠিক হল না’’ বা ‘‘ওকে ঠিক মানায়নি’’ গোছের মন্তব্য শুনতে হয়নি। এটাই হয়তো আমার সাফল্যের জায়গা।
প্রশ্ন: মাঝে টলিপাড়ায় শোনা যাচ্ছিল, আপনি নাকি মুম্বইয়ের কাজে বেশি মনোযোগ দিতে চাইছেন। এ রকম কোনও ভাবনা আছে নাকি?
স্বস্তিকা: গত বছর মুম্বইয়ে একটু বেশি কাজ করেছিলাম। সেগুলো এই বছর এক এক করে মুক্তি পাচ্ছে। তাই হয়তো সকলে এ রকম ভাবছেন। এই বছর জানুয়ারি থেকে তো বাংলাতেই কাজ করছি। মুম্বইয়ের অনেক কাজে আবার না-ও বলেছি।
প্রশ্ন: বলিউডে কাজের জন্য টলিপাড়ার সকলে মুখিয়ে থাকেন। সেখানে আপনি না-ও বলছেন!
স্বস্তিকা: (হেসে) দেখুন, ওখানে অনেকগুলো কাজ করেছি বলে একটা দরজা খুলেছে। কিন্তু তার মানে সেই দরজা দিয়ে যা-ই আসবে, সেটাই লুফে নেব, এটা চাই না। আমি তো মরাঠি ছবিও করেছি। তার পর তো মরাঠি ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও কাজই করিনি।
প্রশ্ন: আপনি আগেও বলেছেন ইন্ডাস্ট্রির ইঁদুরদৌড়ে বিশ্বাস করেন না। আপনার কাছে তা হলে প্রতিযোগী কে?
স্বস্তিকা: আমার প্রতিযোগী আমি নিজেই। মন থেকে এটা বিশ্বাস করি। আমার লড়াই এটাই, যেন আগের কাজের থেকে পরের কাজটা আরও ভাল হয়। অন্য কারও সঙ্গে নয়, নিজের সঙ্গেই আমার লড়াই। আর অন্যকে সেটা জানান দেওয়ার আমার কোনও প্রয়োজন নেই।
প্রশ্ন: কেরিয়ারের এই মোড়ে দাঁড়িয়ে কম বা বেশি কাজের ইচ্ছে...
স্বস্তিকা: কোনও ভাবনা নেই। ভাল কাজ করতে চাই। আরও বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে চাই।
প্রশ্ন: সামনে আর কী কী কাজ আসছে?
স্বস্তিকা: অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ‘সেকশন ৮৪’ করেছিলাম। আরও কয়েকটা হিন্দি কাজ মুক্তি পাওয়ার কথা। পুজোয় ‘টেক্কা’ আসবে। বাংলাদেশেও শরিফুল রাজের সঙ্গে একটা ছবি করছি। সেপ্টেম্বরে শুটিং শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy