বাংলা সিনেমায় এখন গোয়েন্দার মরসুম। ব্যোমকেশ, ফেলুদা হলে হাজির, তারই মধ্যে এসে পড়ল শবর গোয়েন্দা। কৌতূহলীরা জানতে চাইবেন ইনি কে? কার হাতে মামলা পড়ল?
শবর দাশগুপ্ত এসেছে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাহিনি থেকে। কাহিনির চিত্রনাট্য মেলেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত ও অরিন্দম শীল। শবরের ভূমিকায় নেমেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। তাকে নিয়ে ছবির পরিচালনায় অরিন্দম শীল। ব্যোমকেশ বা ফেলুদার মতো খুব ধারালো মগজের গোয়েন্দা সে নয়। একটু মধ্যবিত্ত ধরনধারণ, তবে গতর লড়াতে কসুর নেই।
এক বড়লোকের বাড়ির মেয়ের খুনের তদন্তে নামতে হল শবরকে। সঙ্গে তারও এক ‘অজিত’-গোছের সহকারী, যার মাঝেমাঝেই টুকটাক সমস্যা হয় ইংরেজি নিয়ে। সাফাই হল ‘জগবন্ধু ইস্কুলের ছাত্র তো!’
খুন হল যে মিতালি সে বেশ কিছু কাল স্বামী মিঠুর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ছবি শুরু হল যখন, তখন সে পুদুচেরির বাসিন্দা। একদিন সমুদ্র পাড়ে জগিং করতে গিয়ে এক খুন হওয়া সাহেবকে পড়ে থাকতে দেখল পাথরের ওপর।
তার পর কাট টু কলকাতা। মিতালির বাড়িতে জমকালো সান্ধ্য পার্টি। হুইস্কি, ভদকা, শেরি সব রকম পানীয় সেবন করে টালমাটাল মিতালি নিজের ঘরে ঢুকে গেল। এবং পেছন থেকে কার যেন ছুরির কোপ খেল। এবং মারাও গেল। অতঃপর প্রবেশ শবরের...পুদুচেরি খুন এবং কলকাতার খুনের কী সম্পর্ক, এই সব নিয়ে ভাবছে যখন দর্শক তখন একের পর এক চরিত্রের প্রবেশ কাহিনিতে। মিতালি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মিঠু তো আছেই, আছে বোন জয়িতা। আছে মিতালির প্রথম মোটর মেকানিক স্বামী। যেহেতু ছবিটা অতীত ও বর্তমানকে এক নিঃশ্বাসে মিলিয়ে করা তাই মিতালির প্রয়াত পিতা বরুণ ঘোষও এসে যায়। এবং... না চরিত্রতালিকা সহজে শেষ হওয়ার নয়।
কিন্তু খুন একটাইমিতালির। সে খুনে কার কী লাভ ও স্বার্থ এই তদন্তে নেমে নেমে একটার পর একটা সাবপ্লট বেরোতে থাকল এবং কাহিনিবৃদ্ধি হল। শবর নিজেও এক সময় হতাশার সঙ্গে অনুভব করল যে তদন্তে খুনের জায়গাটা ক্রমশ দখল করছে একটা প্রেমের গল্প।
‘এবার শবর’কে একটা প্যাশন ক্রাইম হিসেবে দেখানো হয়েছে। যদিও এখানে অর্থকরী লাভ লোকসানের প্রশ্ন এসে গিয়েছে বারবার। গল্পের চরিত্রদের তুলে আনা হয়েছে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে। ফলে সেখানেও মানমর্যাদা, অভিসন্ধির সংঘাত আছে। ভেঙে ভেঙে দেখানো বলে আমরা নানা ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে ঢুকে পড়ি। সেখানে বরুণ ঘোষের আভিজাত্যও আছে আবার জুন মাল্য অভিনীত চরিত্রের গণিকাবৃত্তিও আছে।
ডিটেকটিভ কাহিনি ও চলচ্চিত্রের এই এক সঙ্কট। যখন গল্প স্থির করতে পারে না, তখন ফ্যাশনে ভর করবে না ক্রাইমে। ছবিতে রকমারি চরিত্র ও গল্পের ভিড়ে রহস্য উৎকণ্ঠা গুরুতর জখম। ছবির গতি তখন ধরে রেখেছে স্মার্ট, সরস সংলাপ এবং স্বস্তিকা (মিতালি) আবির (মিঠু) ঋত্বিক (পান্তু), দীপঙ্কর (বরুণ), পায়েল (জয়িতা), রাহুল (সমীরণ) ও জুন মাল্যর অভিনয় প্যাশন ক্রাইম হিসেবে ভেবে নেওয়া বলেই স্বস্তিকা, দেবলীনা ও জুনের চেহারা, চরিত্র যৌন আকর্ষণকে সুন্দর ভাবে প্রয়োগ করা গেছে। মিঠু চরিত্রে আবিরের স্টার ভ্যালুও কিন্তু যথেষ্ট নজর কাড়ে।
শাশ্বতের শবর কিছুটা নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সারাক্ষণ শিকারদৌড়ে। ধমকাধমকি এবং বন্দুক নাচানো তার স্টাইল। তাতে দর্শক মনে যে খুব রেখাপাত হয়, তা নয়। কিন্তু এও তো শবর এবং শাশ্বতের নিয়তি। যদিও অভিনেতার চেষ্টায় বিন্দুমাত্র খেলাপ নেই।
এর পরেও বলব ‘এবার শবর’ কিন্তু চোদ্দো আনা বাংলা ছবির থেকে আলাদা। চমৎকার চিত্রগ্রহণ (শীর্ষ রায়), চকচকে সেট ডেকর, পরিচ্ছন্ন সুর সংযোজনা (বিক্রম ঘোষ) এবং নিপুণ সম্পাদনা (সুজয় দত্ত রায়) ছবিকে উন্নত মানের বিনোদন করেছে। মসৃণ ভাবে পরিচালিত ছবিতে অরিন্দম রহস্য বিস্তার ও মোচনে আরও পাকা কাজ দেখালে ‘এবার শবর’ হয়তো এক নতুন ধরানার গোয়েন্দা ছবির সূূচনা করত। আমরা কিন্তু আশা ছাড়ছি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy