চলছে নাট্যোত্সব।—নিজস্ব চিত্র।
কখনও নারীর সম্মানরক্ষায় শিল্পীর পা খোয়ানোর কথা, কখনও বা আবার বৃদ্ধ দম্পতির ভরসা হিসাবে দুই পেয়িং গেস্টের এগিয়ে আসা। রবিবার সারাদিন ব্যাপী নাট্য উত্সবে এমনই বিভিন্ন মুহূর্ত দেখা গেল বার্নপুরের ভারতী ভবনের মঞ্চে। নাট্যসংস্থা দিশারী ও ভারতীভবনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত নাট্য উত্সবে কুশলী থেকে পরিচালক সকলেই চাইলেন হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধগুলোকে আরও একবার ঝালিয়ে নিতে।
একদা নোবেলজয়ী ফরাসি সাহিত্যিক রোমাঁ রোঁলা ‘দ্য পিপ্লস থিয়েটর’ বইতে মানুষের সাম্প্রতিকতম কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন নাটকের বিষয়কে। রবিবার ভারতীভবনে সকাল ১০টা থেকে রাত পর্যন্ত চলা একের পর এক নাটক দেখতে দেখতে মনে হতেই পারে মানুষের ‘বাঁচা-মরা’ এখনও যথেষ্ট ভাবিয়ে তোলে পরিচালকদের। বর্ধমানের ‘প্রয়াস’ নাট্যসংস্থা প্রযোজিত ও উদয় মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘সীমান্ত’ নাটকটি পূব থেকে পশ্চিমে যাত্রা অর্থাত্ দেশভাগের পটভূমিতে গড়ে উঠেছে। নাটকের একটি দৃশ্যে বাউল শিল্পীর জবানবন্দিতে জানা যায়, তিনি কীভাবে উদ্বাস্তু এক নারীর সম্মানরক্ষা করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের মারে পা হারান। অনুষঙ্গে পুলিশ, মন্ত্রী প্রভৃতি চরিত্রও নজর কাড়ে দর্শকদের।
মঞ্চের পর্দা পড়তে না পড়তেই শুরু হয় আরও এক মূল্যবোধের গল্প। দীপঙ্কর চক্রবর্তীর পরিচালনায় আয়োজক সংস্থার নাটক ‘শুধু একটি ঠিকানা’য় দেখা যায় স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় ছেলের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ জোগাড় করতে গিয়ে হতোদ্যম ফুটপাথবাসী এক বাবার অসহায়তা এবং শেষ পর্যন্ত এক সহৃদয় পরিবারের কথা। সমীর দত্তের পরিচালনায় আয়োজক সংস্থার আরও একটি নাটক ‘বিষন্ন মধ্যাহ্ণ’-এ উঠে এসেছে মধ্যবিত্তের জীবন-সমস্যা। একাকী বাবা-মায়ের ভরসা হয়ে উঠেছেন পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকতে আসা দুই ছাত্রী।
১৫তম নাট্য উত্সবের অন্যতম আয়োজক ভারতীভবনের সম্পাদক সম্পদ বসু বলেন, “এ বারের উত্সবের মূল লক্ষ্যই ছিল হারানো মূল্যবোধের কথা বলা।” অভিনেতা বাণিব্রত রাজগুরু আবার নাটককে “সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই” হিসাবে দেখতে চাইলেন। তবে খানিকটা আশঙ্কার কথাই শোনা গেল পরিচালক সমীর দত্তের গলায়, “মূল সমস্যা হল এতকিছু করার পরেও নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy