দিতিপ্রিয়া রায়
তিনি আর রানিমা নন, তিনি ‘সাজ’। ধারাবাহিকের কাজ শেষ করে তিনি এখন ওয়েব দুনিয়া ও বড় পর্দায় যাতায়াত করছেন। ‘হইচই’-এর বিখ্যাত সিরিজ ‘তানসেনের তানপুরা’-র দ্বিতীয় কিস্তিতে অভিনয় করছেন দিতিপ্রিয়া রায়। চার বছরের দীর্ঘ অভ্যেস ছেড়ে নতুন চরিত্রকে কী ভাবে তৈরি করছেন তিনি, আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে সেই গল্পই করলেন অভিনেত্রী।
প্রশ্ন: আপনি ধারাবাহিক ছেড়ে দিতেই ‘রাণী রাসমণি’-র টিআরপি নেমে গেল...
দিতিপ্রিয়া: চার বছর ধরে মানুষের অভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়েছিল। রোজ সন্ধে আমার সঙ্গে সময় কাটাতেন কিছু দর্শক। আচমকাই আমাকে দেখতে না পেলে খারাপ তো লাগবেই। অনেকে আমাকে মেসেজ করে বলেছিলেন যে, রানিমার মৃত্যুদৃশ্যের এপিসোড তাঁরা দেখতে পারবেন না। কষ্ট হবে। কিন্তু মানুষের অভ্যাসও কেটে যায়, এটাই বাস্তব। তাই সবাই ধীরে ধীরে ভালবেসে ফেলবেন নতুনদের। এটা আমার বিশ্বাস।
প্রশ্ন: সেটে যাওয়া হয় এখন?
দিতিপ্রিয়া: (খানিক উত্তেজিত হয়ে) হ্যাঁ! মাঝে মাঝেই ওরা ফোন করে ডাকে। আমি সঙ্গে সঙ্গে চলে যাই। চার বছরে ঘর-বাড়ি হয়ে গিয়েছিল তো। আমার বয়ঃসন্ধি কেটেছে ‘রাসমণি’-র সদস্যদের সঙ্গে। এখনও মন খারাপ করে। আড্ডা মেরে আসি তাই।
প্রশ্ন: সন্দীপ্তা সেনের সঙ্গে দেখা হয়েছে?
দিতিপ্রিয়া: পুচি সারদা হওয়ার পরে ওর সঙ্গে এখনও দেখা হয়নি।
প্রশ্ন: পুচি?
দিতিপ্রিয়া: হ্যাঁ। ‘দুর্গা’ করার সময় থেকেই ওকে আমি পুচি ডাকি। পুচিও আমাকে পুচি ডাকে (হেসে উঠলেন অভিনেত্রী)। সেখানে তো পুচি আর গোগোর (গৌরব চক্রবর্তী) মেয়ে হয়েছিলাম আমি। তার পরে ‘রাসমণি’-তে গোগো নাকি আমার জামাই!
প্রশ্ন: কিন্তু মানুষ তো এখনও রামকৃষ্ণ-সারদাকে আপন করে নেননি।
দিতিপ্রিয়া: নেবেন, নিশ্চয়ই আপন করে নেবেন। তাবড় তাবড় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা রয়েছেন। তাঁরা মানুষের ভালবাসা পাবেনই। তবে সময় লাগবে। চার বছর ধরে আপনি একটা প্রেম করলেন, সেটা হুট করে ভেঙে গেলে নতুন কাউকে মেনে নিতে অসুবিধা তো হবেই। কতকটা সে রকমই হয়েছে আর কি।
প্রশ্ন: রানিমার ভাবমূর্তি থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ওয়েব সিরিজ, কিন্তু মুখ্য ভূমিকায় নয়, আফসোস হচ্ছে?
দিতিপ্রিয়া: আমি কোনও দিন নায়িকা হতে চাইনি। অভিনেত্রী হতে চেয়েছি। আমি মনে করি, ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে কে মুখ্য, কে গৌণ, সেই বিষয়টা নিয়ে কেউ ভাবে না। সব থেকে জরুরি হল, আপনার চরিত্রের গুরুত্ব কতটা। তার থেকেও জরুরি হল, কী ভাবে আপনি সেই চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলছেন। ‘তানসেনের তানপুরা’-র মতো জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি, এতেই আমি আপ্লুত। সিরিজের বাকি সদস্যদের মধ্যে অনেকেই আমাকে ছোট থেকে চেনেন। তাই এখানেও খুবই আদরে কাজ করছি আমি।
প্রশ্ন: সিরিজে আপনার চরিত্রটা কী রকম?
দিতিপ্রিয়া: আমার চরিত্রের নাম ‘সাজ’। খুবই ইন্টারেস্টিং একটি চরিত্র। আমারই বয়সি একটি মেয়ে। সরল, কিন্তু বুদ্ধিমান। নানা দিক থেকে দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে মিল রয়েছে। যদিও আরও অনেক স্তর রয়েছে, কিন্তু সেগুলো এখনই বলা যাবে না। তা হলে সিরিজের রহস্য মাটি হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: গান এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু গানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়। ‘কলঙ্কিণী রাধা’ গান গাওয়ার পরই আপনাকে বিদ্রূপের সম্মুখীন হতে হয়েছে, অভিনয় করার সময় কি সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ছে?
দিতিপ্রিয়া: মেয়েটি গায়িকা নয়, তাই আমাকে গান গাইতে হচ্ছে না। কিন্তু তাতেও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ মাথায় রাখলে কাজ করতে পারব না। তাই সেই সময়কার কথা নিয়ে এক বিন্দুও ভাবছি না। গান গাইতে হলেও আমি বাস্তব আর পর্দাকে আলাদা রাখতাম।
প্রশ্ন: পর্দায় কারও সঙ্গে প্রেম করতে হচ্ছে আপনাকে?
দিতিপ্রিয়া: হ্যাঁ প্রেম করতে হচ্ছে। যদিও ‘প্রেম’ বলাটা ঠিক হবে না। এক ধরনের সম্পর্ক। খুবই সুন্দর তা। কিন্তু যাঁর সঙ্গে প্রেম করতে হবে, সেই অভিনেতার নাম আমি বলতে পারব না এখন।
প্রশ্ন: কোনও ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রয়েছে এই সিরিজে?
দিতিপ্রিয়া: না নেই। তবে থাকলে অসুবিধা হত না। চরিত্রের বা গল্পের প্রয়োজনে ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থাকলে, তা অবশ্যই করতাম।
প্রশ্ন: ধারাবাহিকে অভিনয় করতে করতেই ‘অভিযাত্রিক’, ‘বব বিশ্বাস’-এ কাজ করেছেন। তখনও নিশ্চয়ই যে কোনও দৃশ্য করার সময়ে ‘রানিমা’-র ভাবমূর্তি রক্ষা করার কথা মাথায় আসত, কিন্তু এখন তো সেই দায় নেই, তাতে কিছু সুবিধা হচ্ছে?
দিতিপ্রিয়া: একদমই। এখন আর কোনও চরিত্রের জন্য ছোট জামা পরলে অত ভাবতে হবে না, কোনও দৃশ্যে অভিনয় করলে ‘রানিমা’-র কথা মাথায় রাখতে হবে না। সেটা অবশ্যই সুবিধা হচ্ছে। কারণ রানিমা আর নেই। যদিও রানিমা চরিত্রটি চিরকাল আমার সঙ্গে থেকে যাবে, তা আমি যাই করি না কেন।
প্রশ্ন: এত বছর ধরে ‘রাসমণি’-র চরিত্রে অভিনয় করার পর কোথাও বাধো বাধো ঠেকছে?
দিতিপ্রিয়া: এখানে একটা বিষয়ে বলতে চাই। আগে ক্যামেরা চালু হলেই আমার ঠোঁটে রানিমার উচ্চারণ বেরিয়ে যেত। এখনও আমার মাথায় ‘রক্কে কর রগুবীর’ ঘোরে। কিন্তু সেটাই এখন আমার চ্যালেঞ্জ। কথাবার্তার মধ্যে সেই টানটা যাতে না আসে, তার জন্য বাড়িতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বার বার সংলাপগুলো বলি। তা ছাড়া মহড়া দেওয়ার সময়ে সতর্ক থাকি। তবে রানিমার পোশাক পরে ফেললে ওই ভাবে কথা বলাটা আরও বেড়ে যেত। যেহেতু এখানে আমার সাজসজ্জার মধ্যে রানিমার ছোঁয়া নেই, তাই কয়েক দিনের মধ্যেই অভ্যাস বদলে নিতে পারব বলেই আশা করছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy