‘শিবরাত্রি’ ছবির দৃশ্য। ছবিটি সংগৃহীত।
বিপ্লবে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া রক্তাক্ত শরীর। আগুনে পোড়া প্রেম আর হানাহানি। এক ক্যানভাসে সময়কে বাঁধছেন চিত্রপরিচালক রাজাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলা সিনেমার জগতে প্রথম কুর্মালি ভাষার পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এর আন্তর্জাতিক সাফল্যের পর তাঁর পরবর্তী ছবি ‘শিবরাত্রি’-র শুটিং নিয়ে ব্যস্ত তিনি।
‘‘এক জন শিল্পীর হাত কি স্টেনগান ধরতে পারে? এই খোঁজাই আমার আগামী ছবি ‘শিবরাত্রি’-র বিষয়। আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মানবশরীর ছিন্নভিন্ন করাটাও যেমন সন্ত্রাস, এক শিল্পীর শিল্পসত্ত্বাকে নীরবে নিভৃতে হত্যা করাটাও সন্ত্রাস,’’ বললেন রাজাদিত্য।
আরও পড়ুন: লেখিকা, নিউ ইয়র্ক থেকে পড়াশোনা করা এই বলি অভিনেত্রীর ডেবিউ ছবিই পায় জাতীয় পুরস্কার
এক শিল্পীর শিল্পসত্ত্বাকে নীরবে বাংলা সিনেমার জগতে প্রথম কুর্মালি ভাষার পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এর আন্তর্জাতিক সাফল্যের পর তাঁর পরবর্তী ছবি ‘শিবরাত্রি’।
পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ডের রুক্ষ মালভূমি মানুষের যন্ত্রণার ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে
ছবি করার ক্ষেত্রে কোনও রকম আপোষ চান না তিনি। বিদেশের নাট্যচর্চা তাঁর ছবির জগতেও ভিন্ন ধারা তৈরি করেছে। সেই ধারায় বাংলাদেশের নতুন মুখ আরিয়ান দত্তকে নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করিয়েছেন পরিচালক।
এ ছবিতে যে ভাবে পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ডের রুক্ষ মালভূমি মানুষের যন্ত্রণার ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা খুব কম ছবিতেই দেখা গেছে বলে জানাচ্ছেন রাজাদিত্য। ‘‘খুব প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছতে পেরেছি আমরা’’, যোগ করলেন রাজাদিত্য। প্রকৃতি বরাবরই তাঁর ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ ছবিতেও ছিল, ‘শিবরাত্রি’র গল্পও তার ব্যতিক্রম নয়।
আরও পড়ুন: সাহানা বাজপেয়ীর গলায় মুক্তি পেল ‘কণ্ঠ’ ছবির নতুন গান
পাহাড়ের কোল ঘেঁষা প্রায় জনবিরল প্রান্তর সিতানপুর আচমকাই পরিণত হয় মৃত্যু উপত্যকায়। রেললাইনের উপর পড়ে থাকা একটা মৃতদেহ এবং তার পাশে লাল কালি দিয়ে লেখা একটা পোস্টারের কিছু শব্দ আলোড়ন তোলে এলাকার গুটিকয়েক মানুষের মনে। দুর্ঘটনা? না ঠান্ডা মাথায় খুন? রহস্যেরা কুয়াশার মতোই আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে সিতানপুরকে। শুরু হয় পুলিশি তদন্ত। সিতানপুরে এসে পৌঁছন আইপিএস অফিসার সত্যেন ও তাঁর বস রামগোপালবাবু।
তত দিনে আরও কয়েকটা মৃত্যু হয়েছে এলাকায়। সব ক’টি মৃত্যুর ধরনই এক, পাশে থাকা পোস্টারের বুলিও এক। সত্যেন ডাকাবুকো মানুষ। বাইরেটা যতটা রুক্ষ, ভিতরটাও ততটাই কঠিন। তদন্তের শুরুতেই ধরে ফেলেন, এই মৃত্যু কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং কোনও রাজনৈতিক দল বা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কর্মীদের দ্বারা হওয়া খুন। রাজ্য গোয়েন্দা দফতরও সেই কথা জানায়। কিন্তু, কেনই বা এই খুন? কী তার উদ্দেশ্য? পোস্টারের ভাষাও তো বড় বিচিত্র: “আমি একটা যুদ্ধ লড়ছি। বলছি না তুমি আমায় সমর্থন করো। শুধু বলছি ভেবে দেখো, একটা মানুষকে কেন যুদ্ধ লড়তে হয়?”
যুদ্ধ! সন্ত্রাস! মৃত্যু! চরিত্রেরা সজীব হয়ে ওঠে, মোড় নেয় গল্প! আসে মধুবনের মতো মানুষ। মধুবনের চরিত্রে দেখা যাবে রাজাদিত্যকে। পুলিশ অফিসার সত্যেন আর তাঁর স্ত্রী-ও এই ছবির দুই অন্য দিক। প্রতি রাতে স্বামীর কাছে ধর্ষিতা হতে হতেও সে এক মায়ামাখা কুয়াশার স্বপ্ন দেখে, যেখানে শিবের মুখোশ পড়ে হেঁটে যাচ্ছে এক পুরুষ। কে?
শিশু অভিনেতা ও নৃত্যশিল্পী আরিয়ান
মূল গল্প সাহিত্যিক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শিবরাত্রি’ অবলম্বনে হলেও চিত্রনাট্যের সিংহভাগ ও সংলাপ লিখেছেন পরিচালক নিজেই। সত্যেনের ভূমিকায় সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়। অঞ্জলির চরিত্রে অভিনয় করেছেন আর্যা ব্যানার্জি। ছবিতে নজর কেড়েছে শিশু অভিনেতা ও নৃত্যশিল্পী আরিয়ান দত্ত।
আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক রাজাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘শিবরাত্রি’ কি তা হলে মুষ্টিমেয় চরিত্রনির্ভর ছবি? ‘‘একটা মানুষকে কেন যুদ্ধ লড়তে হয়? এ প্রশ্ন তো সারা বিশ্বের! এই ছবি সব মানুষের জন্য।’’ সাফ জানালেন পরিচালক। সেই কারণেই এই ছবির থিয়েট্রিকাল রিলিজের কথা ভেবেছেন রাজাদিত্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy