(বাঁ দিকে) দেব, চয়নিকা চৌধুরী (ডান দিকে)। ছবি: ফেসবুক।
সাল ২০০১-এর ১৮ সেপ্টেম্বর। ‘শেষবেলায়’ টেলি-নাটকের পরিচালনা দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ চয়নিকা চৌধুরীর। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ছোট পর্দার অন্যতম জনপ্রিয় কাহিনীকারও তিনি। সেই শুরু। চয়নিকার কথায়, এক দিনের জন্য তিনি পরিচালনায় বিরতি নেন। ২৪ বছরের পরিচালনার পরে ঝুলিতে ৪০০-রও বেশি নাটক, তিনটি ছায়াছবি। শিগগিরিই শুরু করবেন চতুর্থ ছবি ‘সখা সোলমেট’-এর শুটিং। বুধবার সকাল থেকেই তিনি স্মৃতিমেদুর। সমাজমাধ্যমে অতীত বিহার করেছেন। প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে? আনন্দবাজার অনলাইন ও পার বাংলার পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।
চয়নিকার কথায়, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা পংক্তি আজ খুব মনে পড়ছে। কবিগুরু লিখেছিলেন, “মনে রে আজ কহো যে/ ভাল-মন্দ যাহাই আসুক/ সত্যেরে লও সহজে’। সেই অনুভূতি থেকে বলতে পারি, আমি ভাগ্যবান। দুটো যুগের সাক্ষী আমি। নতুন-পুরনো সময়ের সব ভাল গ্রহণ করতে পেরেছি। তার সঙ্গে মিশে গিয়েছে আমার সংস্কার। আমার পারিবারিক শিক্ষা। আর সৎ আচরণ। জীবনে উন্নতি করতে গেলে ভাল আচরণ খুব জরুরি।” এর পর হাসতে হাসতে দাবি, পরিচালকের ছাত্রদশা এখনও ঘোচেনি। পাশাপাশি, ভোলেননি প্রথম দিকের লড়াই। চয়নিকার মনে আছে, একে মহিলা পরিচালক, তার উপরে আনকোরা। তাঁর প্রথম নাটকে তাই কোনও নায়ক অভিনয় করতে চাননি! তিনি অবশ্য সেই অনুভূতি ধরে রাখেননি। তবে শিক্ষা নিয়েছেন এই ঘটনা থেকে। এই ধরনের লড়াই তাঁকে আরও জেদি করেছে। তিনি পেশাজীবনকে আরও আঁকড়ে ধরেছেন।
ভারতীয় বাংলা ছবির মতো বাংলাদেশেও বাণিজ্যিক আর সমান্তরাল ধারার ছবি বানানোর চল রয়েছে। চয়নিকা কোন ধারায় স্বচ্ছন্দ? ভাবতে একটুও সময় নেননি তিনি। বলেছেন, “২৪ বছর ধরে পরিচালনার পরে আমি নিজেকে ‘মিশ্র’ বলতে ভালবাসি।” নিজের কথার পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন। তাঁর মতে, সময়ের সঙ্গে তাল মেলানো সব সময় দরকার। তার মানে এই নয়, তিনি গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসাতে ভালবাসেন। হুজুগে মেতে উঠতে চান। তাঁর ছবিতে তাই অতীত আর আধুনিকতা হাত ধরাধরি করে জায়গা করে নেয়। উদাহরণ হিসেবে চয়নিকা বলেছেন, “আগেকার পারিবারিক গল্পের সঙ্গে এই প্রজন্মের ভাবনা মিলিয়ে তাই ছবি বানানোর চেষ্টা করি।”
সমাজের এই বদল ছবিতেও ছায়া ফেলেছে, দুই যুগের সন্ধিক্ষণের সাক্ষী পরিচালক আলোচনা প্রসঙ্গে এ কথা জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “আমার সময়ে ‘নয়নমণি’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘বসুন্ধরা’-র জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল। এখন ‘তুফান’, ‘রাজকুমার’ দেখছি। আমার কিন্তু খারাপ লাগছে না। কারণ, আমরা এখন হইচই, নেটফ্লিক্স, হটস্টারের মতো ওয়েব প্ল্যাটফর্ম দেখি। ফলে, বাংলাদেশের ছবির গতিও আগের তুলনায় এখন অনেক দ্রুত।” পরিচালকের জায়গা থেকে তিনি মনে করেন, সব ছবিতে বার্তা থাকতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু, গল্প না থাকলে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে যাবেন না। একই ভাবে তিনি ভারতের ছবিও দেখেন। শাহরুখ খানের ‘কভি খুশি কভি গম’ তাঁর প্রিয়। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী’ তাঁকে কাঁদিয়েছে।
সেই সূত্র ধরে তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল, টলিউডে এসে বাংলা ছবি পরিচালনা করবেন না? করলে নায়ক-নায়িকা হবেন কে?
চয়নিকা উচ্ছ্বসিত দেবকে নিয়ে। তাঁর কথায়, “টলিউডে আমার পছন্দের একগুচ্ছ মানুষ আছেন। সব সময়ের প্রিয় উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনের ছবি। ভাল লাগে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, রেখা, কাজল, মাধুরী দীক্ষিতকে। কিন্তু, দেবকে কী যে ভাল লাগে! ওঁর মধ্যে নায়কের সমস্ত গুণ রয়েছে। খুব আপন মনে হয় ওঁকে। দেবকে নিয়ে একটা প্রেমের ছবি বানানোর স্বপ্ন দেখি। লোকে বলে, আমি নাকি প্রেমের গল্প খুব ভাল বানাতে পারি।” তিনি এর আগে টলিউডে যৌথ পরিচালনার ডাক পেয়েছিলেন। তখন ব্যস্ততার কারণে সাড়া দিতে পারেননি। এ বার তিনি একা একটি ছবি পরিচালনা করতে চান। দেবের বিপরীতে বেছে নিতে পারেন তাঁর দুই ‘মানসকন্যা’ পরীমণি কিংবা বুবলীকে। তাঁর কথায়, “আমার প্রথম মেয়ে যেমন দেখতে, তেমনই মিষ্টি স্বভাবের। দ্বিতীয় জন দুর্দান্ত পেশাদার।”
দীর্ঘ পথ পেরিয়ে চয়নিকা বুঝতে শিখেছেন, কিছু মানুষ চলার পথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। কিন্তু, কাজ কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না। আজীবন সঙ্গে থেকে যায়। দীর্ঘ দিন থেকে যায় মানুষের অন্তরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy