ভরত কল-রাই সেনগুপ্তে
বলিউডে বহিরাগত, স্বজনপোষণ, জাতধর্ম তুলে বিতর্ক বা অশান্তি নতুন নয়। যখনই দেশ অসহিষ্ণু হয়েছে, বলিউডে তার ছায়া পড়েছে। তুলনায় অনেকটাই সংযত টালিগঞ্জ।
অবশেষে সেই অবাঞ্ছিত কথাবার্তাও জায়গা দখল করল টলিপাড়ায়, ভরত কল বনাম রাই সেনগুপ্তের সোশ্যাল কাজিয়ায়। দু’জনের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব অনেকখানিই যেন অনাবৃত করল টলিপাড়ার অভ্যন্তরীণ বেহাল দশাকে। এই কাজিয়াতেই প্রথম শোনা গেল ‘কাশ্মীরী পণ্ডিত’-এর মতো সংবেদনশীল ইসু। যা প্রায় হুমকির আকারে রাই শোনালেন ভরতকে।
আসল ঘটনা কী?
ভরত কল, টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় অভিনেতা, প্রথম ইপি বা এগজিকিউটিভ প্রোডিউসার, ভরতলক্ষ্মী স্টুডিওর কর্ণধার। রাই সেনগুপ্ত অভিনেতা যিশু সেনগুপ্তের দিদি। তিনিও ইপি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৫-এ প্রথম ইপি হওয়ার সুবাদে ভরতের একটি সংগঠন রয়েছে। এবং তা আর্টিস্ট ফোরামের একটি অংশ।
একই ভাবে ইপি-র কাজের সুবাদে আনলক স্তরে আলাদা একটি সংগঠন তৈরি করার পথে হাঁটা শুরু করেন রাইও। রাইয়ের ফেসবুক বলছে, সেই জায়গা থেকেই সম্ভবত বিবাদের সূত্রপাত। রাইয়ের আরও দাবি, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। নার্সিংহোম থেকে সদ্য ফিরেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নাকি ব্যঙ্গের সুরে ভরত মন্তব্য করেন, নেত্রী ফিরেছেন। তিনি শুয়ে শুয়েই সব কাজ সামলে নেবেন।
ভরতের এই কথায় আহত রাই এর পরেই ঘটনার প্রতিবাদ জানান সোশ্যাল মিডিয়ায়। কথায় কথায় তাঁর পোস্টে উঠে আসে পাল্টা হুমকি এবং কাশ্মীরী পণ্ডিত প্রসঙ্গ।
এক রাতের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায় রাইয়ের পোস্ট। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, মানসী সিংহ, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কাঞ্চনা মৈত্র-সহ টেলিপাড়ার একাধিক ব্যক্তিত্ব এর পরেই নিজেদের মত প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ধিক্কার জানান, ‘কাশ্মীর পণ্ডিত’ প্রসঙ্গ টেনে আনার।
রাইকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে আনন্দবাজার ডিজিটালকে খোলাখুলি তাঁর অভিমত জানালেন ভরত।
বিবাদের শুরু কী ভাবে? জানতে চাইতেই বিস্মিত ভরত বললেন, তিনি নিজেই বুঝে উঠতে পারছেন না, কী কারণে এত কথা জন্ম নিল! সেই সঙ্গে তাঁর অভিমত, সম্ভবত অবসাদে ভুগছেন রাই। অসুস্থ, প্লাস ‘নেতাজি’ ধারাবাহিক শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে, হাতেও হয়তো কাজ নেই। সব মিলিয়ে মিশিয়েই হয়তো আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
আবেগ এতটাই লাগামহীন হয়ে পড়ে যে, ‘কাশ্মীরী পণ্ডিতকে ছাড়ব না’ হুমকি দিতে হল রাইকে? ‘‘আমার ক্ষোভ সেখানেই। রাইকে ঠাট্টার ছলে বলেছি, এই তো তোদের নেত্রী ফিরেছে, সংগঠনের কাজ আবার হবে। সেটা বলেছি, ও আমার কাছে উজ্জ্বল সেনগুপ্তের মেয়ে বলে। কিন্তু শুয়ে শুয়ে সব কাজ করে দেবে, এই ধরনের অপমানজনক কথা কখনওই বলিনি। যার জেরে রাই আমায় হুমকি দিল!’’
আরও পড়ুন: সুশান্ত-কাণ্ডে পুলিশকে যা যা জানালেন আদিত্য চোপড়া
কথা বলতে বলতে প্রচ্ছন্ন অভিমানও ভিড় করে ভরতের কণ্ঠে, ‘‘রাইয়ের আগে বাংলায় জন্ম আমার। কাশ্মীরী পণ্ডিত হয়েও। ওর থেকে বেশি বাংলাকে চিনি। জাত-ধর্ম তোলার জন্য নয়, ওর মুখ থেকে এ ভাবে হুমকি শোনার পরে মনে হল এ বার মুখ খোলা দরকার। তাই আমিও পোস্টে আমার তরফ থেকে যা বলার বললাম।’’
ভরতের সংগঠন আছে। নতুন সংগঠন তৈরির পথে রাইও। সে সবই কি দ্বন্দ্ব-সংঘাতের জন্ম দিল? ভরত জানালেন, সংঘাতের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কাজের জায়গায় একাধিক সংগঠন থাকতেই পারে। তিনি কারও বিরোধিতা করবেন, এমন চিন্তা কোনও কালেই করেননি। উল্টে, তিনি সুরিন্দর ফিল্মসে কাজের জন্য রাইকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। যদিও রাইয়ের দাবি, তিনি নাকি সেই সময় প্রচুর ছবির কাজ করছিলেন। এবং তাঁকে নিশপাল সিংহ রানেও ডেকে পাঠান। ফলে, ভরতকে নাকি ‘না’ বলে দেন রাই। যদিও ভরতের তা মনে নেই। তবে শেষ পর্যন্ত সুরিন্দর ফিল্মসে কাজ করতে আসেন রাই।
সেই সময়েই ইপি-দের সঙ্গে ভরতের বিমা নিয়ে কথা হয়। তিনি আশ্বস্ত করেন, সুরিন্দর ফিল্মসের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ইপি বিমার কভারেজ পাবেন। এর পরেই আলাদা সংগঠনের কথা নাকি বলেন রাই।
আরও পড়ুন: স্বজনপোষণ বিতর্কে এ বার বিস্ফোরক গোবিন্দ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy