রাজ-শিবপ্রসাদ-অরিন্দম-অতনু-পাভেল
এমন অখণ্ড অবসর সচরাচর মেলে না। পরিস্থিতি যতই জটিল হক, লকডাউন পিরিয়ডকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন টলিউডের পরিচালকেরা। প্রায় প্রত্যেক পরিচালকই কোনও না কোনও ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কারও শুটের পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে, কারও রিলিজ় ডেট নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তা-ও পরিস্থিতির একটা সদর্থক ভূমিকা খোঁজার চেষ্টা করছেন সকলে। এই নিশ্ছিদ্র অবসরকে কাজে লাগিয়ে অনেক পরিচালকই নতুন কনসেপ্ট, চিত্রনাট্য লেখায় মন দিয়েছেন।
এপ্রিল মাস থেকেই অরিন্দম শীলের ‘খেলা যখন’ ছবির শুট শুরু হওয়ার কথা ছিল। লকডাউনের জেরে সে সব আপাতত শিকেয়। বলছিলেন, ‘‘আমার ছবির শিডিউল একেবারে তৈরি। শুধু ডেট বসাতে পারছি না। এর পর একসঙ্গে সকলের দিন কী ভাবে ম্যানেজ হবে জানি না।’’ এ সময়টা নষ্ট না করে ‘মিতিন মাসি’র চিত্রনাট্যের খসড়া চূড়ান্ত করছেন পরিচালক। পাশাপাশি আরও একটি নতুন কনসেপ্ট ভেবেছেন। জানালেন, সেটি থ্রিলার। চিত্রনাট্যকার-পরিচালক অরিজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে মিলে তার স্ক্রিপ্ট করছেন অরিন্দম। একই সঙ্গে চলছে নেটফ্লিক্সে তাঁর হিন্দি প্রজেক্টের কাজ। লকডাউনের ঠিক আগেই মুম্বই গিয়ে ওয়েব ফিল্মের বিষয়টি চূড়ান্ত করে এসেছেন। এর মধ্যে চলছে ‘মহানন্দা’ ছবির চিত্রনাট্যের কাজও। তবে এই মুহূর্তে অরিন্দম সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত ‘ঝড় থেমে যাবে একদিন’ শর্ট ফিল্মটি নিয়ে, যা টেকনিশিয়ানদের করোনা রিলিফ ফান্ডের জন্য তিনি পরিচালনা করছেন।
মার্চ মাসেই শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ছবি ‘হামি টু’র শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে লকডাউন ঘোষণার আগেই তাঁরা শুটিং বাতিল করে দেন। এই সময়টা কী ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন শিবপ্রসাদ? ‘‘লেখালিখির কাজ করছি। ‘হামি থ্রি’ আর ‘অন্ত্যেষ্টি’র চিত্রনাট্য লেখাও চলছে,’’ জবাব তাঁর। মার্চের শুরুতে তাঁদের প্রযোজনা সংস্থার ছবি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ রিলিজ় করেছিল। হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছবিটি তুলে নিতে হয়। প্রযোজকেরা চান, সব স্বাভাবিক হলে ফের রিলিজ় করতে। কিন্তু টলিউডের ছবি রিলিজ়ের টাইমটেবল এতটাই ঘেঁটে গিয়েছে যে, কোন ছবি কবে মুক্তি পাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।
একই সমস্যায় জর্জরিত রাজ চক্রবর্তীও। এপ্রিলের গোড়ায় মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল তাঁর ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’র। এখন ছবিটি কবে মুক্তি পাবে তা নিয়ে ধন্দে পরিচালক। তার উপরে দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির বিচারে তৈরি এই ছবি এর পর কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। সমস্যা থাকলেও রাজ বাড়িতে চুপচাপ বসে নেই। ‘‘মাথায় কিছু কনসেপ্ট ঘুরছে। সেগুলো নোটডাউন করছি। একটা সিরিজ় লিখেছি এর মধ্যে,’’ বললেন পরিচালক। তবে সিরিজ়টি কোন প্ল্যাটফর্মের জন্য তা খোলসা করলেন না। লকডাউন উঠলেও বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি কবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তাঁর, ‘‘মানুষের হাতে টাকা থাকলে তো তাঁরা হলে গিয়ে সিনেমা দেখবেন। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির স্বাভাবিক হতে অন্তত এক বছর লাগবে, বলে আমার মনে হয়। সে তুলনায় সিরিয়াল ইন্ডাস্ট্রির তাড়াতাড়ি রিকভার করার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘ধর্মযুদ্ধ’ আর ‘হাবজি গাবজি’ দুটো ছবি তৈরি রয়েছে আমার। তাই সিনেমার বদলে সিরিয়ালের প্রজেক্ট আনার কথা ভাবছি। একটা কনসেপ্ট ভেবেওছি এর মধ্যে।’’
‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’-এর শুট সেরে সাউথ আফ্রিকা থেকে ফিরে চোদ্দ দিনের কোয়রান্টিন কাটিয়েছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ঘরবন্দি অবস্থায় মন দিয়েছিলেন চিত্রনাট্য লেখার কাজে। স্বাধীনতা সংগ্রামী বীণা দাসকে নিয়ে ছবি তৈরির কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন পরিচালক। এর মধ্যে সেই ছবির চিত্রনাট্য সম্পূর্ণ করেছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়াতেই সে কথা জানিয়েছিলেন সৃজিত।
দ্রুত স্ক্রিপ্ট লিখতে তাঁর জুড়ি নেই। একরাতের মধ্যে লিখে ফেলতে পারেন গোটা ছবির চিত্রনাট্য। এই লকডাউনের সময়ে পাভেল যে সুযোগের সদ্বব্যবহার করবেন, তা বলাই বাহুল্য। পরিচালককে ফোন করতে জানালেন, গোটা দুয়েক ছবির চিত্রনাট্য তিনি লিখেও ফেলেছেন। ‘‘ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনের সঙ্গে আমার দুটো ছবি অনেক দিন ধরেই ফ্লোরে যাওয়ার জন্য তৈরি। তা ছাড়া আরও দুটো বাংলা ছবির স্ক্রিপ্ট লিখেছি। সঙ্গে একটা হিন্দি ছবিরও,’’ বক্তব্য পাভেলের।
গত মার্চেই মা মারা গিয়েছেন পরিচালক অতনু ঘোষের। লকডাউনের এই দিনগুলো তাঁর কাছে যেন আরও দীর্ঘ হয়ে গিয়েছে। বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলার স্মৃতিগুলো যেন এখন বড় বেশি জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সেইগুলো টুকটাক লিখছি। অন্যান্য কিছু ভাবনাচিন্তাও মাথায় আসছে। চিত্রনাট্যের মতো করে কিছু লিখছি না, ছোট ছোট গল্পের মতো করে লিখে রাখছি।’’ এই কাহিনির মধ্য থেকে হয়তো কোনও একটা বড় পর্দায় জায়গা করে নেবে। অতনু পরিচালিত দু’টি ছবি ‘বিনিসুতোয়’, ‘বাহাত্তর ঘণ্টা’ মুক্তির অপেক্ষায়।
পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না। কিন্তু আগামীর অপেক্ষায় সকলেই...
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy