সামনাসামনি তাঁদের দু’জনকে দেখলেও বোঝ দায় যে, এঁদের মধ্যেই এত টক্কর।
রাত পোহালেই তাঁর বয়স আরও একটা বছর বেড়ে যাবে। ৩৩-এ পা দেবেন অভিনেতা রণবীর সিংহ। কখনও অভিনয় তো কখনও আবার ব্যক্তিগত জীবন— প্রায় রোজই শিরোনামে থাকেন রণবীর সিংহ। আর এই কারণগুলির মধ্যে অন্যতম, রণবীর কপূরের সঙ্গে তাঁর টক্কর। নাম দু’জনেরই এক, তফাৎ শুধুই উপাধিতে। অন্য দিকে একজনের প্রাক্তন গার্লফ্রেন্ড আবার আরেকজনের বর্তমান।
টক্কর অনেক দিনেরই। তবে খুব সম্প্রতি ‘সঞ্জু’র গগনচুম্বী সাফল্যে বহু দিন পর বক্স অফিসে হিটের মুখ দেখলেন রণবীর কপূর। এতটাই হিট যে দু’দিনে ‘বাহুবলী’র মতো ম্যাগনাম ওপাসের রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে ‘সঞ্জু’। দুই রণবীরের অভিনয়ের তুলনা অনেক দিন ধরে চললেও দু’জনের কেউই এত দিন কিছুই বলেননি এ বিষয়ে। অতঃপর কথাটা বলেই দিলেন রণবীর কপূর। বললেন, “আমি রণবীর সিংহের সঙ্গে কাজই করতে চাই।”
‘সঞ্জু’র জন্য বিধু বিনোদ চোপড়ার প্রথম পছন্দ ছিলেন কিন্তু রণবীর সিংহই। পরে ছবির রাফ কাট দেখে রণবীর কপূরের পাওয়ার প্যাক্ট পারফরম্যান্সে ক্লিন বোল্ড হয়ে যান প্রযোজক বিনোদ চোপড়া। বিধু নিজেই স্বীকার করে বলেছিলেন, “আমি বোকা! তাই রণবীর সিংহকে চেয়েছিলাম।”
আরও পড়ুন
ক্যানসারে আক্রান্ত সোনালি বেন্দ্রে, টুইটারে জানালেন নিজেই
আপাতত টিনসেল টাউনের জোর জল্পনা, চলতি বছরের অ্যাওয়ার্ড শো’গুলি নিয়ে। তা কাদের মধ্যে সেই লড়াই? নিন্দুকদের সোজা উত্তর দুই রণবীর। এক জন আলাউদ্দিন খিলজির ভূমিকায় আর আরেক জন সঞ্জয় দত্তের ভূমিকায় বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিলেন। মুখ বন্ধ করেছেন সমালোচকদেরও।
‘পদ্মাবত’-এ আলাউদ্দিন খিলজির ভূমিকায় রণবীর সিংহ।
কিন্তু কেন এই টক্কর? ২০০৭ সালে রণবীর কপূর ‘সাওয়ারিয়া’ ছবিটি দিয়ে বলিউডে পা রেখেছিলেন। আর অন্য দিকে রণবীর সিংহের প্রথম ছবি ‘ব্যান্ড বাজা বরাত’ মুক্তি পায় ২০১০ সালে। অর্থাৎ বয়স এবং ইন্ডাস্ট্রিতে আগমণ— দু’দিক থেকেই কপূর বেশ খানিকটা সিনিয়র। শুধু তাই নয়, এহেন রণবীর কপূরের যাপনই তো অভিনয়ের সঙ্গে। তাঁর মা থেকে শুরু করে বাপ-ঠাকুরদা সক্কলে অভিনেতা। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আর কে স্টুডিয়োতে তাঁর আনাগোনা, অভিনয়ের সঙ্গে পরিচয়টাও সেই তখন থেকেই।
সেই দিক থেকে রণবীর সিংহ স্টারকিডও নন। সুতরাং ছোটবেলায় তাঁর অভিনয়ের সঙ্গে আলাপ হওয়ার কোনও চান্সই ছিল না।
আদতে বিষয়টা অন্য জায়গায়। রণবীর কপূরের জীবনের বেশ কয়েকটি ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এমনকী রণবীরের অভিনয় জীবনের শুরু যে ছবিটা দিয়ে, সেটাই ফ্লপ। সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘সাওয়ারিয়া’ বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি। তার পর ‘রকেট সিংহ: সেলসম্যান অব দ্য ইয়ার’, ‘ওয়েক আপ সিড’, ‘আজব প্রেম কি ঘজব কাহানি’, পরবর্তী কালে ‘রাজনীতি’, ‘রকস্টার’, ‘বরফি’ এই ছবিগুলি বক্স অফিসে হিট হয়। আর সেই সব ছবিগুলো দিয়ে সমালোচকদেরও চুপ করিয়ে দেন রণবীর কপূর।
উল্টো দিকে রণবীর সিংহের প্রথম ছবিই সুপার ডুপার হিট। তার পর থেকে একের পর এক হিট দিয়েই চলেছেন। তাঁর ঝুলিতে হিট ফর্মূলার ছবিতো রয়েইছে, সঙ্গে রয়েছে কন্টেন্ট নির্ভর ছবিও। যে রকম ‘রামলীলা’, ‘বাজিরাও মস্তানি’, ‘পদ্মাবত’— এই সব ছবিগুলোর পর সমালোচকরাও রণবীর সিংহের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
কিন্তু মাঝে আবার রণবীর কপূরের বেশ কয়েকটি ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। যেমন ‘বম্বে ভেলভেট’। বিরাট বাজেটের এই ছবির সাফল্য নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন রণবীর কপূর। কিন্তু সেখানেও ডাহা ফেল। আর তখন টুক টুক করে নানান ঘরানার ছবি করে চলেছেন রণবীর সিংহ। তাঁর ছবি নিয়ে বলিউড থেকে দর্শক মহলে উন্মাদনা তুঙ্গে। তার উপর ভর করেই সাপ-লুডো খেলার মইটি দিয়ে তরতর করে উপরে উঠে পড়েন রণবীর সিংহ।
আরও পড়ুন
বৃষ্টিভেজা নায়িকা হিসেবে তিনিই নাকি প্রথম পছন্দ!
‘সঞ্জু’তে সঞ্জয় দত্তের ভূমিকায় রণবীর কপূর।
কিন্তু আদৌ কি টক্কর রয়েছে দু’জনের? কপূর তো না হয় কাজও করতে চাইছেন এক সঙ্গে, কিন্তু সিংহমশাই?
এ নিয়ে রণবীর সিংহকে আজ অবধি মুখ খুলতে দেখা যায়নি। তবে ইশারায় এটুকু বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, কপূরের অভিনয়ের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে তাঁর। সামনাসামনি তাঁদের দু’জনকে দেখলেও বোঝ দায়, যে এঁদের মধ্যেই এত টক্কর। তবে খুব সম্প্রতি মুখ খুলেছেন রণবীর কপূর। বলছেন, “পদ্মাবত-এ রণবীর সিংহের অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আর এখন তো আমি ওঁর সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে চাই। এই প্রতিযোগিতাই আমাদের দু’জনকে ভাল অভিনয় করতে প্রেরণা যোগায়।”
এখানেই থেমে থাকেননি রণবীর কপূর। আরও যোগ করেছেন, “কখনও ওঁর ছবি বক্স অফিসে ছক্কা হাঁকায়, কখনও আমার। কিন্তু এই বিষয়টাই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতেও তাই হবে।”
দু’জনে যে এক সঙ্গে কাজ করার ডাক পেয়েছিলেন, সে কথাও অকপটে স্বীকার করে নেন রণবীর কপূর। দু’জনের এক সঙ্গে অভিনয় করতেও কোনও অসুবিধা নেই সে কথাও বললেন। তা হলে এক ছবিতে দুই রণবীরকে আটকাচ্ছে কে?
রণবীর কপূরের সোজা উত্তর, “আমাদের দু’জনেরই একটা স্বাধীনচেতা মনোভাব আছে। খালি একটা প্রজেক্টের জন্য আমরা এক হতে পারি না। বরুণ আর টাইগারের সঙ্গেও আমি কাজ করতে চাই। এক ছবিতে দু’জন নায়ক থাকলে, সেটা একটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আবার ভালও, কেননা সেটে খুনসুটি করার জন্যও তো একজনকে দরকার।”
সিংহের জন্মদিন। আর এই জন্মদিনের আগেই আরেকটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ যেন তাঁর দরজায় আরও একটু বেশি করেই টোকা মারছে। কেননা এত দিন একটা অঘোষিত টক্কর ছিল। আর এখন গ্রিন সিগন্যালটা এসেছে খোদ প্রতিপক্ষেরই কাছ থেকে। তা হলে কি রণবীর সিংহের এই জন্মদিন এই রণবীর কপূরের সঙ্গে লড়াইয়ের দ্য এন্ড? নাকি আবার শুরু?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy