Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Tapas Paul

কেন দূরে চলে যাচ্ছ, তাপসদা?

তাপসের শেষ জীবন ছিল যন্ত্রণাময়। অভিষেককে বলেছিলেন, ‘‘আমাকে এখন সকলে এড়িয়ে যায়, জানিস তো! জেল খেটে এসেছি তো, তাই।’’

 ইন্দ্রাণী দত্তের সঙ্গে।

ইন্দ্রাণী দত্তের সঙ্গে।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী, রূম্পা দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:১৫
Share: Save:

অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী দত্তের আবাসনেই থাকতেন তাপস পাল। ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে তাঁর উত্তর ছিল, ‘‘আরে, তাপস পালের বাড়িটা চেনো তো? ঠিক তার উল্টো দিকেই আমার বাড়ি...’’ বলার মধ্যে খানিক গর্বও অনুভব করতেন ইন্দ্রাণী। শেষ এক মাসে অভিনেতার ফ্ল্যাটের জানালার পর্দাটুকুও সরতে দেখেননি অভিনেত্রী। গত ক’বছরে তাঁর চারপাশের মানুষের কাছ থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছিলেন অভিনেতা। পার্থিব মান-অভিমানের ঝুলি শূন্য করে মঙ্গলবার ভোররাতে সেই দূরত্বই কয়েক যোজন বাড়িয়ে দিলেন তাপস পাল। তাঁর অকালপ্রয়াণে সহ-শিল্পীদের স্মৃতিচারণে বারবার ফুটে উঠছে সেই আক্ষেপ, অব্যক্ত অনুভূতি।

তাপস খুব আমুদে মানুষ ছিলেন। খেতে এবং খাওয়াতে ভালবাসতেন। নিজের জন্মদিন, স্ত্রী-মেয়ের জন্মদিন ছাড়াও বাড়িতে অনুষ্ঠান লেগেই থাকত। ‘‘আউটডোর শুটিংয়ে বাঙালি খাবার ওঁকে বেশি খেতে দেখেছি,’’ বলছিলেন ইন্দ্রাণী। সেটে অন্যদের সঙ্গে খুনসুটিও করতেন। ‘‘বাবা এক দিন সেটে একটি রঙিন জ্যাকেট পরে গিয়েছিলেন। তাপসদার খুব ভাল লেগেছিল। বাবার কাছে চেয়েছিলেন ওটা পরবেন বলে। বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওকে দিয়ে দিলে?’ বললেন, ‘তাপস চাইলে ওকে না দিয়ে থাকতে পারি?’ স্মৃতির পাতা ঘেঁটে বললেন অঞ্জন চৌধুরীর কন্যা চুমকি চৌধুরী। বছর দুয়েক আগেও চুমকির সঙ্গে ‘এ আমার গুরুদক্ষিণা’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তাপস।

প্রতিবেশী তাপসের চেয়ে নায়ক তাপসকে বেশি পেয়েছেন ইন্দ্রাণী। ‘‘আমার বেশির ভাগ ছবিতে নায়কের চরিত্রে ছিলেন তাপসদা। ‘সে দিন চৈত্রমাস’ ছবিতে ওঁর নায়ক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। অভিমান হয়েছিল। এর পরই তরুণদার (মজুমদার) শুটিংয়ে আউটডোরে চোদ্দো দিন একসঙ্গে ছিলাম। তাপসদা আমার সঙ্গে কথা বলেননি...’’ বললেন ইন্দ্রাণী। অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ওঁর মতো ভার্সেটাইল অভিনেতা কম দেখা যায়। কে এগিয়ে গেল, কে পিছিয়ে পড়ল, তাতে বিচলিত হতেন না।’’

তাপসের শেষ জীবন ছিল যন্ত্রণাময়। অভিষেককে বলেছিলেন, ‘‘আমাকে এখন সকলে এড়িয়ে যায়, জানিস তো! জেল খেটে এসেছি তো, তাই।’’ তবে এড়িয়ে যাওয়া শুধু একতরফা নয়। ‘‘তাপসদা ছিলেন না বলেই আমরা আবাসনের দুর্গাপুজো এক বছর বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু পরের বছর ফিরে এসে নিজের ঘরে ছোট করে পুজো করলেন। অনেকেই দুঃখ পেয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হত, কেন আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছ তাপসদা? কিন্তু পারিনি,’’ আক্ষেপ ইন্দ্রাণীর। অভিষেক বলছিলেন, ‘‘সে দিনও কথা হল। ফোনে জিজ্ঞেস করল, ‘কত দিন দেখিনি তোকে। কবে আসবি?’ বলেছিলাম, শিগগিরই...’’

কাজেকর্মে দূরত্ব বাড়ালেও, সামনে দেখা হলে কাছের মানুষদের তাঁর সিনেমায় ফেরার কথাও বলতেন তাপস। সে ফেরা আর হল না!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy