Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
coronavirus

কোভিড-দাপটে আবার বন্ধ হচ্ছে সিনেমা হল, কী বলছেন মালিকরা?

করোনার দাপটে বড় বাজেটের কোনও ছবি মুক্তি পায়নি গত পুজোর পর থেকে। বাংলায় যে কয়েকটি ছবি মুক্তি পেয়েছে আনলক পর্বে, সেগুলির ব্যবসায়িক ফলাফল খুব ভাল নয়।

করোনার ছায়া ছায়া পড়ছে বিনোদন দুনিয়ায়।

করোনার ছায়া ছায়া পড়ছে বিনোদন দুনিয়ায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২১ ১৬:৫৬
Share: Save:

বাড়ছে করোনা, নেই বড় কোনও রিলিজ। এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হতে চলেছে শহরের বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহ। অতিমারির কবলে গোটা দেশ। করোনা ঠেকাতে ইতিমধ্যেই রাত কার্ফু চালু একাধিক রাজ্যে। লকডাউনের আশঙ্কায় অনিশ্চিত জনজীবন। স্বাভাবিক ভাবেই তার ছায়া পড়ছে বিনোদন দুনিয়ায়।

করোনার দাপটে বড় বাজেটের কোনও ছবি মুক্তি পায়নি গত পুজোর পর থেকে। বাংলায় যে কয়েকটি ছবি মুক্তি পেয়েছে আনলক পর্বে, সেগুলির ব্যবসায়িক ফলাফল খুব ভাল নয়। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়েই তাই আবার সাময়িক ভাবে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহের মালিক। সেই অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নবীনা, প্রিয়া, মেনকা, জয়ার মতো প্রেক্ষাগৃহ। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তেমনটাই জানিয়েছেন হল মালিক নবীন চোখানি, প্রণব রায়। খবর, বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বসুশ্রী, প্রিয়া-র মতো সিনেমার হল মালিকেরাও।

প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পরে হল বন্ধ রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। বড় বাজেটের ছবি এলে তবেই হল খুলবে। যা অবস্থা হয়েছে, ছোট বাজেটের ছবিতেও আর হল খুলতে পারব না। আর এ বার কর্মীদের সাহায্য করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। সরকার তো কিছুই সাহায্য করল না আমাদের।" লকডাউনের সময় থেকে কর্মীদের ন্যূনতম বেতন দিয়ে আসছেন ‘জয়া’ সিনেমার মালিক মনোজিৎ বণিক। তিনি বললেন, ‘‘নিজের ব্যবসা কি কেউ বন্ধ করতে চায়? হলে ছবি নেই। আর দর্শকের প্রেক্ষাগৃহে এসে ছবি দেখার অভ্যেসও চলে গিয়েছে। আর সরকার হল নিশ্চয়ই খুলে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু বিদ্যুতের বিল বা পৌরসভার করের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে পারতেন। তা করেননি। সব দিক দেখে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।"

নবীনা সিনেমা হলের মালিক নবীন যদিও জোর দিয়েছেন বর্তমান পরিস্থিতির উপর। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে ক্রমশ সংক্রমণ বাড়ছে। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তাই সাময়িক ভাবে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখছি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার খুলে যাবে প্রেক্ষাগৃহ।’’ তিনি এও জানিয়েছেন, প্রতি দিন কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর হারও। এই পরিস্থিতিতে কেউ হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মানসিকতায় নেই। তা ছাড়া, এতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই সব মিলিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

হল বন্ধের কারণ হিসেবে অতিমারির থেকেও বড় বাজেটের ছবি মুক্তি না পাওয়াকে আগে রাখতে চান মেনকা হলের মালিক প্রণব রায়। তাঁর যুক্তি, 'সূর্যবংশী’, ‘থালাইভি’, ‘চেহরে’, ‘রাধে’ বলিউডের বড় বাজেটের ছবি। ৪টি ছবির মুক্তিই আপাতত বিশ বাঁও জলে। বাংলা বড় বাজেটের ছবির তালিকায় ‘গোলন্দাজ’, ‘কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘বেলাশুরু’। সেগুলোও এক্ষুনি মুক্তি পাবে না। তা হলে কিসের টানে হলে দর্শক আসবেন?’’ প্রযোজক-পরিবেশক যদি নিজের ভালমন্দ নিয়ে চিন্তা করতে পারেন, তা হলে হল মালিক কেন পারবেন না? প্রশ্ন তাঁর।

পাশাপাশি, তিনি দায়ী করেছেন রাত কার্ফুকেও। অনেক রাজ্যেই অতিমারি ঠেকাতে রাত ৮টা থেকে কার্ফু জারি হচ্ছে। এতে মার খাচ্ছে সন্ধে আর রাতের শো। প্রণবের দাবি, তেলুগু রিমেক বা ছোট বাজেটের ছবিও যদি পর পর মুক্তি পেত, তা হলেও ব্যবসা করা যেত। সেটাও হচ্ছে না। ফলে, অনির্দিষ্ট কালের জন্যই হল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।


বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রাচী সিনেমা হলের মালিক বিদিশা বসুও। আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁর হল। চলতি বছরের মার্চে সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছেন তিনি। বিদিশার কথায়, ‘‘সেই কাজ এখনও চলছে। হলের সিলিং ভেঙে পড়েছে। সেটা সারানো হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন স্ক্রিন লাগানোর কথাও ভাবছি। সমস্ত মিটতে আরও ২ মাস লেগে যাবে।’’ সংস্কারে এত দেরি কেন? তিনি বলছেন, "নির্বাচনের জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। কাজ করতে করতেই তাঁরা দেশে ছুটছেন ভোট দিতে।" বিদিশার আশা, আগামী ২ মাসের মধ্যে পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটবে। তিনি হল সংস্কার করে নতুন ছবি আনার কথা তখনই ভাবতে পারবেন।

অনির্দিষ্ট বিরতিতে কি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কর্মীরা? হল মালিকেরা কি বিষয়টি সরকারের নজরে আনার কথা ভেবেছেন? নবীনের কথায়, লকডাউনের সময়েও তাঁর হলের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হননি। এ বারেও হবেন না। প্রণবের সাফ জবাব, কর্মীরা নিজেরাই বুঝে গিয়েছেন, পরিস্থিতি সত্যিই সংকটজনক। ফলে, তাঁদের আলাদা করে কিছু বলার নেই। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, ২ মে ফল ঘোষণার পর সরকার গঠন হবে। শপথ নিয়ে মন্ত্রিসভার কাজ শুরু হতে সময় লাগবে আরও কিছুটা। তাঁর প্রশ্ন, তত দিন পর্যন্ত হল চলবে কী দিয়ে? দাবি, ‘গর্জিলা ভার্সেস কং’ দিয়ে আর যাই হোক সপ্তাহের পর সপ্তাহ ব্যবসা চালানো যায় না।

অন্য বিষয়গুলি:

Cinema Hall Coronavirus in West Bengal coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy