অনেক ছবির ভিড়ে ১২ অক্টোবর রিলিজ করছে ‘ব্যোমকেশ গোত্র’। কতটা তৈরি টিম? শেয়ার করলেন ক্যাপ্টেন অরিন্দম শীল।
পুজোয় একসঙ্গে এত ছবি রিলিজ হচ্ছে। ‘ব্যোমকেশ গোত্র’র কেমন ভাইব পাচ্ছেন?
ভাল, বেশ ভাল। কয়েকটা ভাল ছবি পুজোতে একসঙ্গে রিলিজ হচ্ছে। সেটার সুবিধের দিকটাই দেখতে চাই।
কী সুবিধে?
পজিটিভ জায়গাটা হল, পুজোর সময় বাংলা ছবির চল চলে গিয়েছিল। সেটা আবার ফিরেছে। সেটা ‘ব্যোমকেশ’, ‘কিশোর কুমার’ বা ‘এক যে…’ হোক। এগুলো মিলিত ভাবে গত বারের থেকে বেশি মার্কেট শেয়ার যাতে পায়, সেটাই আমরা চাইছি।
অন্য ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা নেই আপনার?
দেখুন, সৃজিতের ছবি আমার থেকে ২০ লক্ষ টাকা বেশি সেল হল না কি কম, সেটা অন্তত আমার ভাবার জায়গা নয়। সেটা করে আমি বড় বা ছোট ডিরেক্টর হয়ে যাব না। যাঁদের আমাদের বড় ডিরেক্টর বলা হচ্ছে, তাঁদের ছবি যদি সম্মিলিত ভাবে বেশি ব্যবসা করতে পারে তা হলে ইন্ডাস্ট্রির লাভ। আর আমাদের বড় ডিরেক্টর বলা সাজে।
আরও পড়ুন, ‘কিশোর কুমার জুনিয়র’-এ আমার একটা ভেতরের লড়াই আছে: প্রসেনজিৎ
এত ছবির সঙ্গে রিলিজে কোনও নেগেটিভিটি নেই?
আমি তো সবই পজিটিভ দেখি। আমার জীবনে নেগেটিভ কিছু নেই। আমি একটা সময় এত নেগেটিভ দেখেছি যে আমি জানি, যদি আপনি আপনার কাছে নেগেটিভিটি আসতে দেন তা হলে নিজেও নেগেটিভ হয়ে যাবেন। ওটাকে একটা ঢাল হিসেবে রেখে দিন। যেখান থেকে আসছে সেখানে ফেরত চলে যায়। আজকাল খুব মজা পাই (হাসি)।
কেন?
অরিন্দম শীল কেমন ব্যোমকেশ বানায়, কতটা ফেলিওর অ্যাজ আ মেকার, এ সব নিয়ে অন্য ইউনিটে আলোচনা হয় শুনেছি। জয়েন্ট ডিসকাশন। আমার ইউনিটের যে কোনও মেম্বারকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন অন্য আলোচনা হয় না এখানে। অন্য যাঁরা ছবি করছেন সে ব্যাপারে আমরা সবাই সজাগ। রিলিজ হলে তাঁদের ছবি দেখবও। কিন্তু যখন আমরা নিজেরা কাজ করি তখন অন্যে কী করছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই না। কিন্তু আমি জানি তো, কারা এ সব বলছে। এত ছোট্ট জায়গা এটা…।
‘ব্যোমকেশ গোত্র’র অজিত এবং ব্যোমকেশ।
যাঁরা এ সব বলছেন, তাঁদের ওপর রাগ হয়?
না! এ ধরনের কথা যাঁরা বলছেন দেখুন তাঁদের ছবির কী অবস্থা। আমি কিন্তু দেখা হলে জড়িয়ে ধরে সেই ওয়ার্মথ ফিল করানোর চেষ্টা করি। যদি কখনও ভাবে, আগের দিন রাতেই এই অরিন্দমকে নিয়ে এ সব বলেছি, ঠিক করিনি…। গত এক বছরে লক্ষ্য করেছেন, কতটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছি?
কেন চুপচাপ থাকছেন?
কারণ আমার ওপর এত দায়িত্ব বেড়েছে এখন, নানা রকম কাজ নিয়ে আলোচনা চলছে, এত পড়াশোনা করতে হচ্ছে, আমার পুরো ফোকাস এখন সেখানে। এর বাইরে পরিবার আর বন্ধু। দেখুন ৪৮ বছর বয়সে এসে প্রফেশন বদলেছি। অ্যাক্টর বা লাইন প্রোডিউসার থেকে ডিরেক্টর হয়েছি। এটার জন্য একটা দম লাগে। আর সেই দমটাকে দম দিয়ে রাখার জন্য আরও দম লাগে।
ঠিকই। কিন্তু অরিন্দমের এই ‘দম’কেই হয়তো কেউ কেউ বলছেন ‘ম্যানেজ’?
মানে?
আরও পড়ুন, বিয়ে কবে? রাইমা বললেন…
এত দিন আপনাকে ‘পাল্টি’শীল বলতেন অনেকে, আপনি নিশ্চয়ই জানেন। এখন নাকি ‘ম্যানেজ’শীল বলা হচ্ছে?
এক জন ডিরেক্টরকে তো সবচেয়ে ভাল ম্যানেজার হতে হয়। তার জন্য একটা শিক্ষা লাগে। আমার শিক্ষাটা হল আমার এমবিএ ডিগ্রি। আর মানুষের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করে রাখা। শুধু ফ্লোরে ঢুকল ডিরেক্টর, অ্যাকশন কাট বলল, বেরিয়ে এল, তাতে হয় না। আমার ইউনিট মেম্বার খেল কি না, ব্রেক পেল কি না, কারও শরীর খারাপ হল কি না,আমি সেটা ম্যানেজ করি। এটা করার জন্য হৃদয় লাগে। এটা একটা আর্ট। এটার জন্য একটা লিডারশিপ কোয়ালিটি লাগে। সেটা সবার মধ্যে থাকে না। ফলে লোকে যেটাকে ম্যানেজ বলছে আমি সেটাকে লিডারশিপ বলছি।
আপনার এই সাফল্য কি অনেকে মেনে নিতে পারছেন না?
আমার একমাত্র ছবি ‘আবর্ত’ বক্স অফিস সাফল্য পায়নি। আজ ‘আবর্ত’ নিয়ে লাফালাফি হচ্ছে। তার পরের প্রত্যেকটা ছবির প্রোডিউসার পয়সা ফেরত পেয়েছে। ‘এ বার শবর’ করলাম ‘আবর্ত’র পর। কেউ জানত না শবর দাশগুপ্ত কে? সেটা হিট হল। তার পর এসভিএফ আমাকে ডেকে ব্যোমকেশ করতে বলল। আমি আমার মতো করে করলাম। হ্যাঁ, বড়জোর এটুকু ম্যানেজ করতে পেরেছিলাম প্রযোজককে বলেছিলাম একটু বেশি বাজেট দিন। শ্রীকান্ত মোহতা নিজে থেকে বলেছিলেন, এটা বেনারসে গিয়ে করুন। ছবিটার পর দ্বিগুণ পয়সা ফেরত দিলাম। তার পর থেকে আমাকে পর পর ছবি দিল এসভিএফ। এ বার যদি বলেন, শ্রীকান্তকে ম্যানেজ করে অরিন্দমের চলছে…। ওঁকে ম্যানেজ করা যায় না। যাঁরা তেল দিয়ে কাজ পেয়েছেন প্রথমে, পরবর্তী কালে তাঁরা আর কাজ পাননি। আমি কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছি। আমি বেস্ট ব্যোমকেশ বানাতে চেয়েছি। আমার মনে হয় সেটা পেরেছি। আমার তিনটে ব্যোমকেশের মধ্যে এটা বেস্ট। শুধু আমি বলছি না। অঞ্জন দত্ত বলছেন। অঞ্জনদা বলছেন, সব ব্যোমকেশের মধ্যে সেরা।
‘ব্যোমকেশ গোত্র’র ঊষাপতি।
এই যে অঞ্জন দত্ত ব্যোমকেশ করবেন না আর, আপনি করবেন, এটা নিয়ে তো বহু প্রশ্ন উঠছে…
অঞ্জনদাকে ম্যানেজ করার কোনও ব্যাপার নেই। উনি পাবলিকলি বলেছেন, অরিন্দম আমার থেকে বেটার ব্যোমকেশ বানায়। আসলে অঞ্জনদা নিজে যে যে কাজ করতে চাইছেন সেগুলো এখন পারছেন বলে ব্যোমকেশ করা ছেড়ে দিয়েছেন। জানেন, আমাকে সব সময় হেল্প করতেন। আমার ফ্লোরে অবজারভারের সঙ্গে বসে পরের দিনের কলশিট বানাতেন। এই অঞ্জন দত্তকে দেখেছেন? আমি দেখেছি যখন বং কানেকশন করেছি। ইগো, রাগ সব ঝেড়ে ফেলে সেই অঞ্জন দত্ত ফিরেছেন। আমাদের মধ্যে যে মনোমালিন্য ছিল, সেটা মনে রাখেননি। ভালটাই তো মনে রাখা ভাল। আমি তো পরম আর অঞ্জনদার ঝামেলাও মিটিয়েছি।
তাই?
হ্যাঁ। পরমব্রতকে ‘বং কানেকশন’-এ কাস্ট করানোর মূলে আমি ছিলাম। তখন ওরা দু’জন কথা বলত না। এটা একটা বারে হয়েছিল। আমি জোর করে বলেছিলাম পরমব্রতকে নিতেই হবে। ওদের বসিয়েছি একসঙ্গে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছে। তার পাঁচ মিনিটের মধ্যে কেঁদেছে ওরা। সেটা কেউ মনে রাখেনি। এমন অনেক কিছু হয়। একটা পার্টিতে অঞ্জনদাই প্রথম এসে বলেছিলেন, তুমি দারুণ ব্যোমকেশ বানিয়েছ খাজা গল্প থেকে। ‘দুর্গরহস্য’ তোমাকে দিয়ে দিলাম। কিন্তু ‘রক্তের দাগ’টা আগে কর। আমাকে ঊষাপতি (‘ব্যোমকেশ গোত্র’য় অঞ্জন দত্তর চরিত্রের নাম) করতে দেবে? আবির ছিল। ওকে ডেকে বললাম, ঢপবাজ কী বলছে দেখ। তোকে সাক্ষী রাখলাম। তখন বলছিল, না বিশ্বাস কর, আমার বয়স হয়ে গিয়েছে। আমি আর মিথ্যে কথা বলি না। আমার সঙ্গে এমনই সম্পর্ক অঞ্জনদার।
আরও পড়ুন, ‘মৌলিক ছবির জন্যই তো অভিনয় শিখেছি, কত কপিক্যাট করব বলুন?’
এই ছবিটা তৈরি করতে এত সময় নিলেন কেন?
‘রক্তের দাগ’ ওয়ান অব দ্য বেস্ট স্টোরিজ। এখানে ফ্যামিলি আছে, চাপা সেক্সুয়াল টেনশন আছে। সময়ের থেকে প্রচুর এগিয়ে। আমার মনে হয়েছে, সম্পর্কে ভাইবোন হলেও ‘সত্যকাম’ এবং ‘চুমকি’র সম্পর্ক হওয়া উচিত। ভারতীয় পরিবারে এটা আকছার ঘটে। সে সময় হয়তো লেখক হাত খুলে লিখতে পারেননি। আমি ছবিতে দেখিয়েছি। প্রত্যেকটা চরিত্রের ব্যাকস্টোরি তৈরি করেছি। আমাদের ব্যোমকেশটা এখন ট্রাভেলগ হয়ে গিয়েছে। সেটা মেনটেন করতে চেয়েছিলাম। এই সাপোর্ট প্রোডিউসার আমাকে দেন, এ বারেও দিয়েছেন। গল্পে ছিল ১৯৫৬। আমি করলাম ’৫২। কারণ ওই বছর ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। কিউবায় বাতিস্তা সেকেন্ড টাইম প্রেসিডেন্ট হলেন। আর রিফিউজি প্রবলেম বেড়ে গেল। পুরো ছবি জুড়ে এই রেফারেন্স রয়েছে। আবোল তাবোল, কালিদাসের রেফারেন্স রয়েছে। অজিতের ওপর রবীন্দ্রনাথের ইনফ্লুয়েন্স থাকতে বাধ্য। আবার অজিত যেন কোথাও শরদিন্দু। ফলে তুঙ্গভদ্রার একটা রেফারেন্স…।
‘ব্যোমকেশ গোত্র’র চুমকি।
ডিটেলিংয়ে অনেক জোর দিয়েছেন…
হ্যাঁ। এর আগে ব্যোমকেশকে মেস বাড়িতে দেখেছি আমরা। এ বার কেয়াতলায় বাড়ি দিয়েছি। সে বাড়ি অন্য ভাবে সাজানো। সত্যবতী মহাদেবের পুজো করে, দূরে সেই ছবিটাও রয়েছে। প্রথমে ব্যোমকেশের গলা ভেসে আসছে, ‘পত্র দিল পাঠান কেশর খাঁরে…’। সত্যবতী তখন খোঁপায় পলাশ গুঁজছে মানে, সময়টা আমি দেখিয়ে দিলাম। একটা সিনের এই ডিটেলিং তৈরি করতে কত সময় লাগে…। তার আগে ক্যামেরা, কালার প্যালেট সব ডিসাইড হয়ে গিয়েছিল। আর শুভঙ্কর ভড় (চিত্রগ্রাহক) যা যা চেয়েছি তাই দিয়েছে। অভিষেক কস্টিউমে যা বলেছি করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন, আমার কাছে প্রচুর সিনেমার অফার নেই, বলছেন ইশা
ভাষার বদলটাও রেখেছেন ছবিতে?
যে মেয়েটি আশ্রিতা বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারে না ‘চুমকি’ সে পিয়োর কুমিল্লার ভাষা, কথা বলে। ভাষা না বুঝলেও ভাব বুঝতে অসুবিধে হবে না। সৌরসেনীকে যখন সাজিয়েছি ওই চরিত্রে চেনা যায়নি। আবার ‘সুপ্রভাত’ মিশ্র ভাষায় কথা বলছে। কখনও কুমিল্লা, কখনও পশ্চিমবঙ্গীয়। কারণ ও একটু বেরোয়। আবার আর এক জন (ঊষাপতি) অক্সফোর্ডের ভাষায় কথা বলে। বাংলাটাও সে ভাবে বলে। এটা কনট্রাস্ট হিসেবে ইউজ করি। কারণ অন্য দিকে শরীর, কামনা। কেন একটা মানুষ সারা দিন মদ খায় বা শরীর খোঁজে, অর্থাত্ সত্যকামকেও জাস্টিফিকেশন দিয়েছি। সেটা উপন্যাসে নেই। দর্শক এটা উপভোগ করতে পারলে আমার পরিশ্রম সার্থক।
আপনি কি আবির-সোহিনীকে একটু বেশিই ভালবাসেন? অন্যদের নিয়ে কাজ করছেন না…
কেন? জয়া, পায়েল, মিমি, তনুশ্রীকে নিয়ে তো কাজ করেছি। মিমি, নুসরতকে নিয়ে আবার কাজ করতে চাই। তিনটে ‘ব্যোমকেশ’ হয়ে গেল বলে ওরা একটু বেশি। আর ওদের তো বেশি ভালবাসিই। ওরা ভাল কাজ করে তো। একটা সময় অনেকে বলত আবির অভিনয় করতে পারে না, তারাই এখন ওকে কাস্ট করছে। ওর উইকনেস ও জানে। সেটা আমরা খুব পরিষ্কার ডিসকাস করতে পারি। আবির-সোহিনী ফ্লোরে থাকলে আমাদের চোখে চোখে কথা হয়। শট দেওয়ার পর আমি তাকালেই ওরা জানে, আমার পছন্দ হয়েছে না হয়নি। অনির্বাণও রয়েছে। তবে ওকে আরও খাটতে হবে। অর্জুনের কথাও বলব…
বিক্রম ঘোষ এই ছবিতে ম্যাজিক তৈরি করেছেন।
অর্থাত্ আপনার সত্যকাম?
হুম। ওর দাদা গৌরব আমার চিরকালের প্রিয়। অর্জুনের কাজ খুব যে ফলো করেছি এমন নয়। বোলপুরে ওর একটা শট দেখছিলাম মনিটর বসে। তখনই আবিরকে ডেকে বলেছিলাম ‘সত্যকাম’। আমি ওর চোখে একটা দ্যুতি দেখেছি। যেটা এক জন অ্যাক্টরের ভীষণ ভাবে থাকা উচিত। আর এই মুহূর্তে সৌরসেনীর কথা বলব। ওকে নিয়ে আমি আরও কাজ করতে চাইব।
সৌরসেনী তো মডেলিং করেন। এই যে মডেলদের দিয়ে অভিনয় করানোর সিক্রেটটা কী?
আমার সব সিক্রেট বলে দিলে হবে কী করে? হা হা হা…বেশ, বলছি। মডেলদের একটা নর্মাল স্মার্টনেস, ইনহিবিশনলেস থাকে। এমনিতে বাঙালিরা ভ্যাবলা টাইপ। ফলে সেই গ্রুমিংটার বড়় অভাব আমাদের। সোহিনী এত কাজ করছে, তবে এখনও ওর গ্রুমিং দরকার। মিমিরও একটা প্রবলেম আছে। সেটা আমি আর ও জানি। ও কারেকশন করেছে কিন্তু। আমি বলার পর কসমেটিক কারেকশন করেছে। এ বার এই মডেলদের ভিতর থেকে ভাল অ্যাক্টর বের করে নিতে পারলে তো, আমার অর্ধেক কাজ করা…।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy