একজোট: ফিল্ম দুনিয়ায় মহিলাদের সমানাধিকারের দাবিতে তখন সরব অস্ট্রেলীয় অভিনেত্রী কেট ব্ল্যাঞ্চেট। ৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘পালে দে ফেস্টিভালস’ থিয়েটারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সবাই শুনছেন সে কথা। এএফপি
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সমানাধিকারের দাবিতে মহিলারা একজোট হলেন কান চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে। এমনিতেই এ বার #মিটু নিয়ে সরব ছিল গোটা হলিউড। প্রাক্তন প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনেস্টেইনের যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পাশাপাশি এ বার সারা বিশ্বের ৮২ জন অভিনেত্রী, মহিলা পরিচালক, মহিলা প্রযোজক মনে করিয়ে দিলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধ-স্বর তাঁরা। শনিবার রাতে ওই জমায়েতে হলিউড অভিনেত্রীদের সঙ্গে ছিলেন ভারতের দুই অভিনেত্রী নন্দিতা দাস এবং রসিকা দুগল। কান-এ তাঁরা তৈরি করেন ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত।
প্রতিবাদীদের এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন কেট ব্ল্যাঞ্চেট, এ বার কান চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি প্রেসিডেন্টও তিনি। ‘পালে দে ফেস্টিভালস’ থিয়েটারের সিঁড়িতে পরপর হাত ধরে দাঁড়িয়ে যান সালমা হায়েক, ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট, জেন ফন্ডার মতো অনেক নামী অভিনেত্রী। ছিলেন পরিচালক প্যাটি জেনকিন্স-সহ আরও অনেকে। কিন্তু শুধু ৮২ জন কেন?
দু’বারের অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট বলেন, ‘‘আমরা ৮২ জন প্রতিনিধিত্ব করছি একটি সংখ্যার। ১৯৪৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসব। তার পর মাত্র ৮২ জন মহিলা পরিচালক এই সিঁড়ি ভেঙেছেন। আর এই সময়সীমার মধ্যে ১৬৮৮ জন পুরুষ পরিচালক পেরিয়ে গিয়েছেন এই সিঁড়ি।’’ কেট বোঝাতে চেয়েছেন, দীর্ঘ সাত দশকের কান-এ মনোনয়ন পেয়েছে শুধু ৮২ জন মহিলা পরিচালকের ছবি। সেখানে ১৬৮৮ জন পুরুষ পরিচালকের ছবি পৌঁছেছে দর্শকের আঙিনায়। এই অনুপাতটা পাঁচ শতাংশেরও কম। তাই এই অসাম্যের বিরুদ্ধে শনিবার ফিল্ম দুনিয়ার ৮২ জন একসঙ্গে নিঃশব্দে ধীরে ধীরে হেঁটে দাঁড়িয়ে যান ‘পালে দে ফেস্টিভালস’ থিয়েটারের লাল কার্পেট বিছোনো সিঁড়িতে।
পাম দ’ওর সম্মানপ্রাপ্ত ফরাসি চিত্রপরিচালক আগনেস ভার্দার পাশে দাঁড়িয়ে জুরি প্রেসিডেন্ট কেট ব্ল্যাঞ্চেট বলে চলেন, ‘‘একই ভাবে পাম দ’ওর-এর মতো সম্মান পেয়েছেন অন্তত ৭১ জন পুরুষ পরিচালক। যে খেতাব গিয়েছে কেবল দুই মহিলা পরিচালকের ঝুলিতে।’’ তার পরেই কেটের সংযোজন, ‘‘মহিলা হিসেবে আমাদের অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। এই সিঁড়িতে আমরা আজ একজোট আমাদের দৃঢ়তা এবং দায়বদ্ধতা বোঝাতে। আমরা চাই কাজের জায়গায় বৈচিত্র্য থাকুক, সমানাধিকার থাকুক। যাতে বোঝাতে পারি, আমরা সেই দুনিয়ায় বাঁচি, যেখানে ক্যামেরার সামনে এবং পিছনে পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারি।’’
কান-এ কেট ব্ল্যাঞ্চেট। এএফপি
আগনেস ভার্দা সেই সূত্রেই বললেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রির সিঁড়িগুলো যেন সবাই পেরিয়ে যেতে পারে। চলো সবাই উঠি।’’ প্রতিবাদের পরেই ছিল ইভা হাডসনের তৈরি ছবি ‘গার্লস অব দ্য সান’-এর (কুর্দিশ সংগ্রামী মহিলাদের নিয়ে) প্রদর্শন। ইভা বলেছেন, ‘‘আমার আশা, এ বারের কান সেই প্রশ্নগুলোই তুলুক, যা খুবই দরকারি। অনেক হয়েছে। এই প্রতিবাদ সুস্থতা। প্রতিবাদ ভয় জাগায়। পিতৃতন্ত্র আগে দেখেনি এমনটা। তাই ভয় পাচ্ছে। দৃষ্টিভঙ্গির বড়সড় বদল ঘটে গিয়েছে।’’ ক্যামেরার ঝলকানি, ভাল ভাল পোশাকে অভিনেত্রীদের দাঁড়িয়ে ছবি— কান শুধু এটাই নয়। সেই বার্তাও দিতে চেয়েছেন প্রতিবাদীরা। এ বার এই উৎসবে হেনস্থার অভিযোগ জানাতে তৈরি হয়েছে হটলাইনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy