কোনও বিজ্ঞাপনের মুখ যদি সেলেব্রিটি হন, তা হলে তার ওজন এমনিতেই অনেকটা বেড়ে যায়। ওই সেলেব্রিটি ক্রেতার কাছে পণ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করেন। ঠিক সেই কারণে বলিউড স্টার বা ক্রিকেটারদের এত বিজ্ঞাপনে দেখা যায়। বাংলার তারকারাও পিছিয়ে নেই। পূর্বাঞ্চলের বাজার ধরার জন্য এখানকার তারকাদের উপরে ভরসা করছে অনেক জাতীয় স্তরের সংস্থা। যেমনটা তারা দক্ষিণ ভারতের জন্য করে থাকে। বছর কয়েক আগেও এ বঙ্গে দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে কিছু ক্যাম্পেন হতো বড়জোর। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। ব্র্যান্ডের মুখ হিসেবে টলিউডের তারকাদের চাহিদা বাড়ছে। অতএব, সিনেমার পাশাপাশি চলছে ব্র্যান্ড দখলের প্রতিযোগিতাও।
এক, দুই, তিন...
২০১৮ সালে সব মিলিয়ে এক কোটি টাকার ব্র্যান্ড এনডোর্স করেছিলেন মিমি চক্রবর্তী। বাংলার বাজারের নিরিখে টাকার অঙ্কটা চমকে দেওয়ার মতোই! বিশেষত কোনও নায়িকার পক্ষে। দীপিকা পাড়ুকোন যে গয়নার ব্র্যান্ডের মুখ, তারা পূর্বাঞ্চলের জন্য মিমিকে নিয়েছে। এই বিজ্ঞাপনের জন্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন তিনি। এনডোর্সমেন্টের সংখ্যা এবং টাকা দুইয়ের বিচারেই মিমি পয়লা নম্বরে থাকবেন। দ্বিতীয় স্থানে নুসরত জাহান। টুথ পেস্ট, শাড়ি, পানীয়, টিএমটিবার-সহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের প্রচারের মুখ নুসরত।
অভিনেতাদের মধ্যে এক নম্বরের লড়াই দেব এবং আবীর চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে। আবীরের হাতে ব্র্যান্ডের সংখ্যা যদি বেশি হয়, তা হলে টাকার অঙ্কে দেব এগিয়ে। দেব আট-ন’টি ব্র্যান্ড এনডোর্স করে থাকেন। তার অনেক ক’টিই ন্যাশনাল। দেব বা জিৎ একটি বিজ্ঞাপন থেকেই বড় অঙ্কের টাকা নেন। জিৎ যেমন একটি ব্র্যান্ডেরই প্রচার করেন। ওই ব্র্যান্ডের সর্বভারতীয় প্রচারক অক্ষয়কুমার।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে অনেক সংস্থাই আগ্রহী। তিনি বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের প্রচারের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে হয়তো খুব বেশি এনডোর্সমেন্টে তাঁকে এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। সিনেমার ক্ষেত্রে যিশু সেনগুপ্তর গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বাড়লেও, বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় তিনি এখনও অনেকটাই পিছিয়ে।
হিট কতটা জরুরি?
রুপোলি পর্দায় যিনি যত হিট, বিজ্ঞাপনের বাজারে তাঁর চাহিদা তত বেশি। সেই কারণেই আবীরকে নিয়ে অনেক ব্র্যান্ড আগ্রহী। শহরকেন্দ্রিক ইভেন্ট এবং প্রডাক্ট লঞ্চেও অভিনেতার চাহিদা বাড়ছে। আবীর যে ধরনের ছবি করেন, তার চাহিদা এখন কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে জেলার দিকেও। সেই কারণে ইভেন্ট বা প্রডাক্ট লঞ্চের জন্যও আবীরকে নিয়ে সংস্থাগুলি আগ্রহী বলে জানালেন আবীর-সহ একাধিক তারকার বিজ়নেস ম্যানেজার দেবায়ুধ। বিজ্ঞাপনের বাজারে বছর তিনেক আগেও শ্রাবন্তীর বেশ চাহিদা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে বড় কোনও হিট দিতে না পারার জন্য নায়িকা এখন অনেকটাই ব্যাকফুটে। একই কথা শুভশ্রীর ক্ষেত্রেও। সেই জায়গাটা এখন মিমি বা নুসরত নিয়েছেন।
তবে এর একটা অন্য দিকও আছে। সম্প্রতি দেবের বড় হিট নেই। কিন্তু তাতে নায়কের স্টারডমে ঘাটতি পড়েনি। একই কথা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও। তবে তিনি একটু অন্য ভাবে ডিলগুলো করেন। যে সব ব্র্যান্ড তাঁর সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, তাদের তিনি নিজের সিনেমার সঙ্গে যুক্ত করে নেন। সুপারস্টারদের অরা হিট-ফ্লপের হিসেবের বাইরে। কোয়েল মল্লিক যেমন দু’-একটি ব্র্যান্ডের বেশি এনডোর্স করেন না। বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় নামী স্টারদের বাজার যে সব সময়েই ভাল তা নিয়ে দ্বিমত নেই।
কাদের চাহিদা বেশি?
সামগ্রিক চিত্রটা বিচার করলে বিজ্ঞাপনের বাজারে কমার্শিয়াল ছবির তারকারাই এগিয়ে। মিমি, নুসরতের পরে শুভশ্রী বা শ্রাবন্তীর নাম আসে। আরবান ছবির অভিনেত্রীদের মধ্যে রাইমা সেন বেশ কিছু বিজ্ঞাপন করে থাকেন। যেহেতু রাইমা বলিউডেও কাজ করেন, তাই আরবান ক্লায়েন্টের কাছে তিনি বিশ্বাসযোগ্য মুখ। শহরকেন্দ্রিক প্রডাক্ট লঞ্চ বা ইভেন্টে রাইমা, পাওলি দাম বা পার্নো মিত্রদের চাহিদা রয়েছে।
চাহিদার দিক থেকে বিচার করলে দেব বা জিৎ শহুরে ছবির অভিনেতাদের চেয়ে এগিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ বাঙালি জনতার কাছে বাণিজ্যিক ছবির নায়িকাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তবে একটি ব্র্যান্ডের ক্রেতার উপরে নির্ভর করেছে সেই ব্র্যান্ডের মুখ কে হবেন। মিমি, পার্নোর বিজ়নেস ম্যানেজার রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘দেব বা জিৎ যে পরিমাণ অর্থ নেন সেটা অনেক সংস্থা দিতে প্রস্তুত থাকে না। তখন হয়তো তারা অন্য মুখ বেছে নেয়।’’
ব্যক্তিগত জীবন প্রভাব ফেলে?
এটাও অনেকটা নির্ভর করে ব্যক্তির ব্র্যান্ড ভ্যালুর উপরে। কোনও তারকাকে নিয়ে হয়তো অনেক গসিপ রয়েছে, কিন্তু ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টে তার প্রভাব না-ও পড়তে পারে। যেমন ধরুন, সলমন খান। একাধিক অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু তার ছাপ বক্স অফিস বা ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টে পড়েনি। কোনও ঘটনার পরে সাময়িক ভাবে কিছু ব্র্যান্ড হয়তো পিছিয়ে যেতে পারে। তবে আমাদের দেশে সুপারস্টারডমে ফাটল ধরানো অতটা সহজ নয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy