Bollywood still remembers the infamous rivalry between Sridevi and Jaya Prada dgtl
Sridevi
‘প্লাস্টিক সুন্দরী’ বলে শ্রীদেবীকে কটাক্ষ করেছিলেন জয়াপ্রদা, দীর্ঘ ২৫ বছর কথা বলেননি দু’জনে
একসঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয় করলেও, সংলাপ আওড়ানোর বাইরে একে অপরের সঙ্গে কখনও একটি কথাও বলতে দেখা যায়নি তাঁদের।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ১৮:৪৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
‘নায়িকারা কখনও একে অপরের বন্ধু হতে পারেন না’, বলিউডে এই প্রবাদের সূচনা করেছিলেন শ্রীদেবী এবং জয়াপ্রদা। দক্ষিণী ছবিতে একসময় চুটিয়ে অভিনয় করেছেন এই দু’জন। বলিউডেও পা রাখেন একই সঙ্গে। তা সত্ত্বেও কখনও পরস্পরের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেননি তাঁরা। একসঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয় করলেও, সংলাপ আওড়ানোর বাইরে একে অপরের সঙ্গে কখনও একটি কথাও বলতে দেখা যায়নি তাঁদের।
০২১৬
স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়ের জোরে শ্রীদেবী যেমন বলিউডের প্রথম মহিলা সুপারস্টার তকমা হাসিল করতে পেরেছিলেন, সেখানে অসামান্য সুন্দরী তকমা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে জয়াপ্রদাকে। তবে তাঁদের রেষারেষির গল্প মায়ানগরীর অন্দরে এখনও মুখে মুখে ফেরে।
০৩১৬
মাত্র চার বছর বয়সে দক্ষিণী ছবিতে হাতেখড়ি শ্রীদেবীর। ১৩ বছর বয়সে নায়িকা হিসেবে আবির্ভাব তাঁর। সেখানে অভিনয় জগতে জয়াপ্রদার প্রবেশ কিশোরী বয়সে। দক্ষিণী ছবির সব তাবড় তারকার সঙ্গেই কাজ করার সুযোগ হয় দু’জনের। আর তখন থেকেই দু’জনের মধ্যে রেষারেষি শুরু হয় বলে জানা যায়।
০৪১৬
শোনা যায়, জয়াপ্রদার দাদার একাধিক সিনেমা হল ছিল। শ্রীদেবীর চেয়ে জয়াপ্রদার ছবিকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন তিনি। এমনকি শ্রীদেবীর কোনও ছবিকেই নিজের হলে চলতে দিতেন না। কমল হাসান এবং রজনীকান্তের সঙ্গে ছবি করা নিয়েও দু’জনের মধ্যে রেষারেষি চলত।
০৫১৬
১৯৭৯ সালে অমল পালেকরের বিপরীতে ‘সোলওয়া সাওয়ান’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শ্রীদেবী। সেই বছরই ঋষি কপূরের বিপরীতে ‘সরগম’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন জয়াপ্রদা।
০৬১৬
কিন্তু প্রথম রাউন্ডে শ্রীদেবীকে মাত করে দেন জয়াপ্রদা। ‘সোলওয়া সাওয়ান’ বক্স অফিসে সাড়া ফেলতে না পারলেও, ‘সরগম’ সুপারহিট হয়। তাতে রাতারাতি বলিউডে জায়গা করে নেন জয়াপ্রদা।
০৭১৬
এতে মরিয়া হয়ে ওঠেন শ্রীদেবী। বলিউডে যেন তেন প্রকারে জয়াপ্রদাকে ছাপিয়ে যাওয়াই তাঁর লক্ষ্য ছিল। কিন্তু তার জন্য সে ভাবে হাতে কাজ পাচ্ছিলেন না তিনি। এই অবস্থায় ১৯৮৩ সালে জিতেন্দ্রর বিপরীতে ‘হিম্মতওয়ালা’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান শ্রীদেবী। তার জন্য নিজের লুক আমূল পাল্টে ফেলেন তিনি। তার ফলও মেলে হাতেনাতে। ‘হিম্মতওয়ালা’ সুপারহিট হয়।
০৮১৬
‘হিম্মতওয়ালা’র পর শ্রীদেবী এবং জয়াপ্রদাকে নিয়ে নতুন করে তুলনা শুরু হয়। তাতে বেজায় চটে যান জয়াপ্রদা। সত্যজিৎ রায় স্বয়ং তাঁকে সেরা সুন্দরী বলে উল্লেখ করেছিলেন। তাই শ্রীদেবীর সঙ্গে তুলনা পছন্দ হয়নি তাঁর। তাই শ্রীদেবীর ‘হিম্মতওয়ালা’র লুক নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলে বসেন, ‘‘আমি জন্মগত ভাবে সুন্দরী। ও ছুরি-কাঁচি চালিয়ে সুন্দর হয়েছে।’’
০৯১৬
শোনা যায়, ‘হিম্মতওয়ালা’ক জন্য নাকে সার্জারি করিয়েছিলেন শ্রীদেবী। তাই জয়াপ্রদার এই মন্তব্যে আহত হন তিনি। ঠিক করে ফেলেন, কখনও জয়াপ্রদার সঙ্গে কথা বলবেন না তিনি।। সেই মতো ‘তোফা’, ‘অওলাদ’, ‘মজাল’, ‘মাওয়ালি’র মতো একের পর এক ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করলেও, জয়াপ্রদার সঙ্গে কথা বলতেন না তিনি। জয়াপ্রদাও তাঁর সঙ্গে আলাপ জমানোর কোনও চেষ্টা করেননি।
১০১৬
সেইসময় জিতেন্দ্র-শ্রীদেবী এবং জয়াপ্রদাকে নিয়ে একসঙ্গে ছবি করার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল বলিউডে। ১৯৮৪ সালে রাজেশ খন্না, জিতেন্দ্র, শ্রীদেবী এবং জয়াপ্রদাকে নিয়ে ‘মকসদ’ ছবির শুটিং শুরু করেন কে বাপ্পায়া। কিন্তু শুটিং চলাকালীন দুই নায়িকার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন জিতেন্দ্র।
১১১৬
দু’জনের মিল করিয়ে দিতে সেটের বাকি লোকজনের সঙ্গে পরামর্শ করে শ্রীদেবী ও জয়াপ্রদাকে একটি ঘরে পুরে বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে দেন তিনি। জিতেন্দ্র ভেবেছিলেন, এ ভাবে এক সঙ্গে অনেকক্ষণ থাকলে আপনা থেকে কথা বলতে হবে তাঁদের। কিন্তু ঘণ্টা খানেক পর দরজা খুলে দেখেন, কথা বলা তো দূর, বরং ঘরের দুই কোণে একে অপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে রয়েছেন দুই নায়িকা। জিতেন্দ্রকে দেখে রাগে ঘর ছেডে় বেরিয়ে যান দু’জনেই।
১২১৬
এর পর যত দিন যেতে থাকে বলিউডে ততই জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেন শ্রীদেবী। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া,’ ‘নাগিনা,’ ‘চাঁদনি,’ ‘লমহে’-র মতো ছবির দৌলতে শ্রীদেবী তখন বলিউডের প্রথম মহিলা ‘সুপারস্টার’-এর তকমা পেয়ে গিয়েছেন। সেই তুলনায় জয়াপ্রদা ক্রমশ পার্শ্বনায়িকার চরিত্র পেতে শুরু করেন।
১৩১৬
১৯৯৪-এ রাজনীতিতে প্রবেশ করেন জয়াপ্রদা। সেখানে অমর সিংহকে ‘গুরু’ হিসেবে পান তিনি। অমর সিংহের সঙ্গে আবার ভাল সম্পর্ক ছিল শ্রীদেবীর স্বামী বনি কপূরেরও। দীর্ঘ কয়েক দশকের টানাপড়েনের পর ২০১২ সালে শ্রীদেবীর জন্মদিনে বিশেষ পার্টি দেন অমর সিংহ। সেখানে জয়াপ্রদাকেও আসার অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু জয়াপ্রদা তা ফিরিয়ে দেন।
১৪১৬
এ নিয়ে প্রশ্ন করলে সংবাদমাধ্যমে জয়াপ্রদা বলেন, ‘‘শ্রীদেবী আমাকে হিংসা করত। একসঙ্গে শুটিং করলেও আলাদা আলাদা কোনায় বসে থাকতাম আমরা।’’ ‘তোফা’ ছবিতে একটি দৃশ্যে জয়াপ্রদার কোলে শ্রীদেবী মারা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শ্রীদেবীর মা তা নিয়ে পরিচালকের সঙ্গে ঝামেলা করেন বলেও দাবি করেন জয়াপ্রদা। জয়াপ্রদা বলেন, ‘‘শ্রীদেবীর মা বলেন, আমার মেয়ে জয়ার কোলে মরবে না। আপনি দৃশ্য পাল্টান।’’
১৫১৬
তবে জয়াপ্রদা তাঁকে নিয়ে মন্তব্য করলেও, এ নিয়ে প্রকাশ্যে কখনও মুখ খোলেননি শ্রীদেবী। বরং প্রায় ২৫ বছরের তিক্ততা কাটিয়ে, ২০১৫ সালে জয়াপ্রদার ছেলে সিদ্ধার্থের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুম্বই থেকে হায়দরাবাদ উডে় যান তিনি। সেখানে তাঁর কাঁধে মাথা রেখে হাসতে দেখা যায় জয়াপ্রদাকে।
১৬১৬
২০১৮ সালে দুবাইয়ের একটি হোটেলে শ্রীদেবী যখন মারা যান, সেই সময় সংবাদমাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেন
জয়াপ্রদা। মেয়ে জাহ্নবীকে সিলভারস্ক্রিনে রাজত্ব করতে দেখা শ্রীদেবীর স্বপ্ন ছিল বলে জানান তিনি।