Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mithun Chakraborty’s Birthday

মুম্বইয়ের রাস্তায় অনাহার থেকে পদ্মভূষণ, মিঠুন চক্রবর্তীর জন্মদিনে লিখলেন পুত্র মিমো

রবিবার মিঠুন চক্রবর্তীর জন্মদিন। অভিনেতার ৭৪তম জন্মদিনে আনন্দবাজার অনলাইনের পাতায় বাবার কথায় মিঠুন-পুত্র মহাক্ষয় (মিমো) চক্রবর্তী।

Bollywood actor Mahaakshay Chakraborty writes about his father Mithun Chakraborty on his 74th birthday

মহাক্ষয় (মিমো) চক্রবর্তী এবং মিঠুন চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

মিমো চক্রবর্তী
মিমো চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪ ০৮:০০
Share: Save:

এই বছর ১৬ জুন তারিখটা আমার জীবনে সত্যিই অন্য রকম। এক দিকে, বাবার জন্মদিন। পাশাপাশি, আজ পিতৃদিবস। তাই আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে বাবাকে নিয়ে লেখার প্রস্তাব আসতেই খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু বাবা তো আমার একমাত্র গুরু। তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে গিয়ে শুরুতে একটু ভয়ই পাচ্ছিলাম। কারণ, বাবাকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে শেষ হবে না। আরও একটা জিনিস মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বাবা এই লেখাটা পড়লে কী বলবেন, সেটাও ভেবে চলেছি।

অদ্ভুত বিষয়, এই মুহূর্তে আমি একটা হিন্দি ওয়েব সিরিজ়ের শুটিংয়ে কলকাতায় রয়েছি। হোটেলের ঘরে লিখতে বসে বাবাকে নিয়ে একগুচ্ছ ভাবনা মাথায় আসছে। জানি না, কতটা গুছিয়ে লিখতে পারব। জন্মদিনে বাবা বেঙ্গালুরুতে রয়েছেন। আমাদের হোটেলের নতুন শাখা খোলা হবে। বাবা জোরকদমে তার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সকালেই বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেই আমাকে বুক ভরে আশীর্বাদ করলেন। বাবা খুব খুশি যে, আমি এখন কলকাতায় শুটিং করছি। যত দূর জানি, চলতি মাসেই বাবা আবার শুটিংয়ের কাজে কলকাতায় আসবেন।

আমাদের পরিবারের সদস্যেরা বরাবরই ব্যক্তিগত জীবনকে প্রকাশ্যে আনতে নারাজ। বাড়িতে কারও জন্মদিন পালনের আলাদা কোনও রেওয়াজ নেই। কারও জন্মদিনে পরিবারের সকলে একসঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করি মাত্র। তবে অনেকেই হয়তো জানেন, বাবা খুব ভাল রান্না করেন এবং রান্না করতে পছন্দও করেন। জন্মদিনে বাবা আমাদের জন্য নিজের হাতে রান্না করেন। নিজের হাতে পরিবেশন করেন। এই বছর তো আমরা সবাই কাজে ব্যস্ত। নমশি মুম্বইয়ে ওর স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির কাজে ব্যস্ত। আমার ভাই এবং বোন, দু’জনেই আমেরিকায় রয়েছে। মা মুম্বইয়ে। তাই এই বছর বাবার জন্মদিনে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতে পারব না। কিন্তু আমি নিশ্চিত, তাঁর জন্মদিনে সন্তানরা যে কাজ করছে, এটা জেনে বাবা খুশিই হবেন।

বাবা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আজকে আমি যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, তাঁর সবটাই ওঁর জন্য। বাবার জন্মদিনে আলাদা করে কোনও স্মৃতিচারণ করতে চাই না। আমার মতে, জীবনের যদি কোনও বিশ্বকোষ থাকে, সেটা তা হলে আমার বাবা। ওঁর সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম, ত্যাগ, পরিবারের প্রতি ভালবাসা এবং সবচেয়ে বড় কথা, মানবিকতা আমাকে মুগ্ধ করে। তাই প্রত্যেকটা দিন ওঁর থেকে নতুন কিছু শিখি। নতুন করে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ভরসা পাই। তার কারণ, বাবা জীবনের যে সব বিচিত্র মোড় দেখেছেন, আমার মনে হয় খুব কম মানুষের সেই সৌভাগ্য হয়েছে। উত্তর কলকাতার একটা সরু গলি থেকে মুম্বই যাওয়া। খালি পেটে দিনের পর দিন সেখানে রাস্তায় ঘুমিয়ে দিন কাটানো থেকে বলিউডের সুপারস্টার! দেশ থেকে বিদেশের মানুষের কাছে আইকন হয়ে ওঠা—অকল্পনীয়! সত্যিই অকল্পনীয়। আর না বললেই নয়, চলতি বছরে দেশের সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করেছে। বাবাকে নিয়ে সত্যিই প্রতি দিন আমার গর্ব হয়।

দীর্ঘ দিন ধরেই কলকাতায় আসা-যাওয়া করি। এই শহরে বাবার জন্যই আমার আলাদা খাতির। সেই ‘রকি’র (মিমোর প্রথম বাংলা ছবি) দিন থেকেই। অনেক দিন পর আবার কলকাতায় শুটিং করছি। এখনও একই রকম ভালবাসা পাচ্ছি। যাঁর সঙ্গেই দেখা হচ্ছে, একটাই কথা— “ওই যে মিঠুনদার ছেলে।” বাবার প্রতি বাংলার মানুষের সম্মান ও ভালবাসা দেখে আমিও আপ্লুত হই। বুঝতে পারি, বাংলা কী ভাবে একজন মানুষকে আপন করে নেয়। শুধু বাবার কাছে নয়, পশ্চিমবঙ্গ আমাদের প্রত্যেকের পরিবারের কাছেই ‘বাড়ি’। বাবার জন্মদিনে এই শহরে রয়েছি বলে আমার নিজেরও খুব ভাল লাগছে। নিজের শহরেই তো রয়েছি।

বাবা কাজপাগল মানুষ। অভিনয় ওঁর ধ্যান এবং জ্ঞান। কয়েক মাস আগে কলকাতায় শুটিং করতে গিয়ে বাবা অসুস্থ হন। খবর পেয়েই ছুটে চলে এসেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, বাবা বিরতি নেবেন। কিন্তু সুস্থ হয়েই আবার শুটিং শুরু করে দিলেন। অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, মিঠুন চক্রবর্তীর এই অফুরান এনার্জির নেপথ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। আসলে, বাবা গত ৪০ বছর ধরে অভিনয় করছেন। আর স্বাভাবিক ভাবেই এ রকম একটা মানুষকে বললেও তিনি অবসর নিতে চাইবেন না। বাবাও ঠিক সে রকমই। নিজেই বুঝতে পেরেছেন, শরীরের যত্ন নিলে, শরীরও তাঁকে আরও অনেক কিছু ফিরিয়ে দেবে। বয়সের কথা ভেবেই বাবা এখন খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখেন। নিয়মিত ওযুষপত্র খান। অনেক বেশি বিশ্রাম করেন। কারণ, তিনি আরও অনেক বছর কাজ করে যেতে চান।

বাবার জন্মদিনে আলাদা করে কোনও উপহারের কথা ভাবিনি। কারণ যে মানুষটা জীবনে এত কিছু অর্জন করেছেন, তাঁকে আর নতুন কী-ই বা উপহার দিতে পারি। তবে আমার বিশ্বাস, ওঁর পরিবারের সকলে সুস্থ এবং আনন্দে রয়েছেন, এটাই মনে হয় বাবার কাছে সেরা উপহার হবে। বাবার যদি অর্ধেকও কখনও হয়ে উঠতে পারি, তা হলে বুঝব, আমি একটা সম্পূর্ণ জীবন যাপন করতে সমর্থ হয়েছি। আনন্দবাজার অনলাইনের মাধ্যমেই বাবার উদ্দেশে কিছু কথা বলে লেখাটা শেষ করা যাক। বাবা, জন্মদিনে তোমার থেকে দূরে রয়েছি। কিন্তু জানি, তোমার মনের মধ্যেই রয়েছি। আরও ভাল থাকো বাবা, সুস্থ থাকো। তোমার দীর্ঘায়ু কামনা করি। আমার প্রণাম নিয়ো। খুব দ্রুত তোমার সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy