Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Pathaan Vs Bengali Films

‘পাঠান’-এর জন্য বাংলা ছবি কোণঠাসা! আঙুল উঠছে হল মালিকদের দিকেই, চিন্তায় প্রযোজকেরা

বলা হয়েছে, যে সিঙ্গল স্ক্রিনে ‘পাঠান’ দেখানো হবে, সেখানে অন্য কোনও ছবি চালানো যাবে না। হিন্দি বনাম বাংলা ছবির তরজা জারি।

 ‘পাঠান’-এর জন্য একাধিক বাংলা ছবি সিঙ্গল স্ত্রিনে জায়গা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ।

‘পাঠান’-এর জন্য একাধিক বাংলা ছবি সিঙ্গল স্ত্রিনে জায়গা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৪৮
Share: Save:

‘পাঠান জ্বর’-এ কাবু সারা দেশ। ছবি মু্ক্তির আর দু’দিন। এ দিকে অগ্রিম বুকিংয়ের নিরিখে বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে শাহরুখ খান ও দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত এই ছবি। রাজ্যের প্রায় সব প্রেক্ষাগৃহে প্রথম দিনই হাউসফুল। সময়ের সঙ্গে আরও শো হাউসফুল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু খোদ বাংলাতেই হল মালিক থেকে শুরু করে কলাকুশলীর মধ্যে ভিন্ন সুরও দেখা যাচ্ছে। ‘পাঠান’-এর জন্য বাংলা ছবি সিঙ্গল স্ত্রিনে জায়গা পাচ্ছে না।

‘পাঠান’-এর প্রযোজক যশরাজ ফিল্মস। বিভিন্ন মহলে কথা বলে জানা যাচ্ছে, প্রযোজনা সংস্থার তরফে ‘পাঠান’ নিয়ে রাজ্যে সিঙ্গল স্ক্রিনের ক্ষেত্রে ‘নো শো’ নীতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ সিঙ্গল স্ক্রিন বিশিষ্ট কোনও প্রেক্ষাগৃহে ‘পাঠান’ চললে সেখানে অন্য কোনও ছবি দেখানো যাবে না। ফলে ফাঁপরে পড়েছেন অনেকেই।

বড়দিনে মুক্তিপ্রাপ্ত দেব-মিঠুন অভিনীত ‘প্রজাপতি’ ছবিটি এখনও একাধিক সিনেমা হলে রমরমিয়ে চলছে। কিন্তু ‘পাঠান’-এর জন্য আগামী বুধবার থেকে প্রায় ১৮-২০টি হল থেকে ছবিটি তুলে নেওয়া হচ্ছে। ছবির অন্যতম প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘লোভ মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়, সেটা এখন বুঝতে পারছি। কিছু দিন পর পাঠান তো চলে যাবে। তখন তো বাংলা ছবিই সিঙ্গল স্ক্রিনকে বাঁচিয়ে রাখবে। এরা হয়তো বুঝতে পারছে না! সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যা মিটবে বলে মনে হয় না।’’ এরই বিপরীতে রয়েছে উদাহরণ। নবীনা, স্টার থিয়েটার ও অশোকা ‘পাঠান’-এর পরিবর্তে ‘প্রজাপতি’ ও ‘দিলখুশ’ দেখাতে রাজি। অশোকা সিনেমার কর্ণধার প্রবীর রায় বললেন, ‘‘রবিবার পর্যন্ত আমরা হাউসফুল পেয়েছি। সেখানে একটা চালু বাংলা ছবিকে নামিয়ে দেওয়া আমার মনে হয়েছে ঠিক নয়।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযুক্তি, ‘‘পাঠান’ নেওয়ার ইচ্ছে তো ছিলই। কিন্তু বাংলা ছবির সঙ্গে ভাগাভাগি করে চালাতে ওরা রাজি নয়, বলে আমিও না বলে দিয়েছি।’’

কিন্তু অন্য দিকে, শহরের অন্যতম জনপ্রিয় সিনেমা হল প্রিয়াতে পাঁচটা শো নিয়ে নিয়েছে ‘পাঠান’। অতনুর গলায় আক্ষেপ ধরা পড়ে, ‘‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে প্রিয়া। কিন্তু এখন যা বুঝছি, অরিজিৎ দত্তের সবটাই লোক দেখানো!’’ এই প্রসঙ্গে ‘প্রজাপতি’র পরিবেশক শতদীপ সাহার মন্তব্য, ‘‘প্রিয়া আগে পথ দেখিয়েছে! কারণ বাকি হল মালিকরা বাংলা ছবি দেখাতে চাইলেও ‘পাঠান’-এর পরিবেশকের তরফে বলা হচ্ছে, প্রিয়া পারলে আপনারা কেন পারবেন না?’’

‘কাবেরী অন্তর্ধান’ ছবির একটি দৃশ্যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

‘কাবেরী অন্তর্ধান’ ছবির একটি দৃশ্যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে ‘কাবেরী অন্তর্ধান’ এবং ‘দিলখুশ’-এর মতো বাংলা ছবি। দুটি ছবিই দর্শকের মনে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। ‘কাবেরী...’র পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘করোনার সময় কর্মীদের দু’বছর বেতন দিয়ে হল মালিকরা রেখেছিলেন। ‘পাঠান’-এর অকল্পনীয় ব্যবসা থেকে হল মালিকরা কেন বঞ্চিত হবেন? তাঁদের প্রতি আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমি হল মালিক হলে আমিও হয়তো ‘পাঠান’ চালাতাম।’’ কিন্তু তাঁর ছবিরও তো এটা প্রথম সপ্তাহ। কৌশিক বললেন, ‘‘ জানি আমার ছবির ক্ষতি হবে। মুম্বই থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে অন্য ছবি চালানো যাবে না। অর্থাৎ বাংলা ছবি। আর বাঙালি অত্যন্ত সহনশীল জাতি। এখানেই আমার রাগ। ৪০-৫০ টা হলে ব্যবসা করা আঞ্চলিক ছবি নিজের রাজ্যে দেখাতে না পারলে এর থেকে অবমাননাকর আর কিছু হতে পারে না।’’ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে অতনুর পথেই হাঁটতে চাইছেন কৌশিকও। বললেন, ‘‘সবাই একত্রিত হয়ে এটাকে বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। সঠিক সময়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ শো বাংলা ছবিকে দিতে হবে।’’

এ রাজ্যে ‘পাঠান’-এর পরিবেশনার দায়িত্বে রয়েছে ‘জালান ডিস্ট্রিবিউটর’। পরিস্থিতি নিয়ে সংস্থার তরফে কুশাগ্র জালান আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘বড় ছবির ক্ষেত্রে এই মডেলটা তো নতুন নয়। সিনেমা তো একটা ব্যবসা। সবাই চায় তার ছবিটা যেন বেশি সংখ্যক হল পায়।’’ তা হলে বাংলা ছবি যে জায়গা পাচ্ছে না বলা হচ্ছে? কুশাগ্রর কথায়, ‘‘অনেক হলেই কিন্তু ‘পাঠান’ চলবে না। তা হলে সেখানে তো বাংলা ছবিই দেখানো হবে।’’

‘দিলখুশ’ ছবির একটি দৃশ্যে অনসূয়া মজুদার এবং পরান বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘দিলখুশ’ ছবির একটি দৃশ্যে অনসূয়া মজুদার এবং পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

কলকাতায় শাহরুখ খানের একাধিক ফ্যান ক্লাব রয়েছে। বাদশার প্রত্যাবর্তনের জন্য তাদেরও উৎসাহে কোনও কমতি নেই। কিন্তু তারাও বাংলা ছবির কঠিন অবস্থাটা বুঝছে। শাহরুখের বেহালা ফ্যান ক্লাবের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘আমরাও মনে করি বাংলা সিনেমা বন্ধ করে শুধু ‘পাঠান’ চলুক, এটা হয়তো খোদ বাদশা চান না। যেখানে অতিমারির পরে বাংলা সিনেমার জন্যই সিঙ্গল স্ক্রিন কোনও মতে বেঁচে আছে।’’ অর্থাৎ কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই সিনেমার উদ্‌যাপনে আশাবাদী সকলে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy