মিমি চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
গাড়ি বার করতে গিয়ে দেখি সারি সারি আলুর বস্তা। আমাদের পাড়ায় যে বিরিয়ানি বানায়, সে সামনে দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার? বলল, “পুজো আসছে। আলুর স্টক করছি দিদি।” ঠান্ডা গাড়ির কাচ তুলে দিয়ে যেতে যেতে মনে হল, পুজো তো আসলে এঁদেরই।
মায়ের আগমনের আবহাওয়াটাই অন্য রকম। আমরা যাঁরা তিন বেলা খেতে পাই তাঁদের বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন মানুষ মনে করি। যাঁরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন, পুজোয় বাবা একখানা শাড়ি উপহার দেবেন, তাঁদের কথা ভিন্ন। কাজেই পুজো কে কী ভাবে কাটাবেন, উৎসবে যোগ দেবেন কি না, তা সেই ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। আমার সিদ্ধান্ত এক রকম হতেই পারে কিন্তু আমি অন্যকে আমার পছন্দ অনুযায়ী চালনা করতে পারব না। সেই অধিকার নেই আমার। যাঁরা মণ্ডপে বাঁশ বাঁধছেন, যাঁরা রোল, ফুচকার স্টল দিচ্ছেন, ঢাকিরা এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকেন। আমরা যেমন ফেসবুকে বসে বসে কমেন্ট করি, ওঁরা কিন্তু সেই সময়টুকু পান না। তাঁরা সর্ব ক্ষণ এই চিন্তায় থাকেন, কী ভাবে দুটো পয়সা রোজগার করবেন। আমাদের মধ্যে এত ভদ্রতা, নম্রতার অভাব!
আচ্ছা বলুন তো, শিভ্যালরি আসলে কী? বর্তমান সময়ে ঔদ্ধত্য এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে রাস্তায় লোকজনদের উপর ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বান্ধবী পটাতে চায় লোকজন। পুজোয় পৌরুষের বহর যেন আরও বেড়ে যায়! সাঁ করে জোরে বাইক চালিয়ে বেরিয়ে যায়! এই পুরুষই প্রেম করে বিয়ের পরে অত্যাচারী হয়ে ওঠে।
প্রতি বছরের মতো এই বছরও কসবার বাড়িতেই থাকব। এই পুজোটা আমরাই প্রথম শুরু করেছিলাম। লাল-হলুদ রঙের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। রোজ জিম থেকে ফেরার সময় এক চক্কর দিয়ে আসি। দেখি কতটা কী কাজ হল। মন ভাল হয়ে যায় এতে। মা-পাপাও এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত। উদ্বোধনী সঙ্গীত থেকে শুরু করে তাঁরা পুজোর বিভিন্ন বিষয়ে যুক্ত থাকেন প্রতি বছর। প্রাথমিক ভাবে পুজোয় বাইরে যাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল করলাম। এক মাস আগেই আমার দিদির মেয়ে থেকে বাড়ির পরিচারিকার বোনের মেয়ের জামা কেনা হয়ে গিয়েছে। তাঁদের দেওয়াও হয়ে গিয়েছে।
নিজেকে কী দেব? এমন একটা জীবন দিতে পারি না, যেখানে আমি খুব আনন্দে থাকতে পারব আর ভাল করে ঘুমোতে পারব। এটাই উপহার। পৃথিবীতে থাকা মানেই দুশ্চিন্তা ঘাড়ে চড়ে বসে। কে কী বলল, আমি কাকে কী বললাম সে সব নিয়ে প্রভাবিত হলে চলবে না। আমি এই মুহূর্তে ভাল থাকতে চাই। দশ বছর পরে কী হবে তা আগাম ভাবতে চাই না। একজন মহিলা একা জীবন কাটান, তাতে অনেকগুলো বিষয় জড়িয়ে থাকে। এর অর্থ যে একাকীত্ব গ্রাস করে এমন নয়। আমার মনে হয় যদি কেউ একবার একা থাকা শিখে যায়, তা হলে তাঁর থেকে শক্তিশালী মহিলা আর কেউ নেই। নিজের মতো করে জীবন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আমার শোয়ার ঘর আর পোষ্য সারমেয় ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও থাকতে চাই না আমি। ওদের মুখ দেখে ঘুমোতে যাই, ওদের মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠি। এর বাইরে কিচ্ছু চাই না আমি। এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয় না, আমার একটা বিয়ে হোক, সংসার করব। আমি নিজেই পরিপূর্ণ। স্বাধীন ভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy