‘খাইকে পান বনারসওয়ালা’—এই গান এখনও সিনেমাপ্রেমিকদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। পাঁচ হাজার বছরের পুরনো শহর বেনারস অমিতাভ বচ্চনের ‘ডন’ সিনেমায় উঠে এসেছিল শিরোনামে।
তবে বাংলা ছবিতে বেনারস বহু দিন ধরেই জায়গা করে নিয়েছে তার নিজের মহিমায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘অপরাজিত’ ছবিতে বেনারসের সাদা কালো ছবি আজও মাস্টারপিসের সম্মান পায়। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবিতে আমরা দেখি আর এক রকম বেনারস। মন ছেয়ে থাকে মগনলাল মেঘরাজের স্মৃতি। বেনারস বললে মনে আসতে পারে ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’।
সম্প্রতি ফের সিনেমা পরিচালকেরা এই শহরে শ্যুটিং করতে আসছেন। এক দিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ক্ষেত্র হিসেবে বেনারসের গুরুত্ব বেড়েছে, অন্য দিকে সিরিয়াল আর ছবির শ্যুটিং লোকেশন হিসেবেও জনপ্রিয় হচ্ছে বেনারস। তাই রাজ্য সরকারও পরিকাঠামোগত ভাবে নানা উন্নয়নমূলক কাজ করছেন বেনারসে। খুব শিগগির মেট্রো রেল চালু হবে। ভারতের সেরা ডিজাইনারেরা আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছেন বেনারসের বিখ্যাত তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য।
বেনারসের পটভূমিতে তৈরি ‘মাসান’ সম্প্রতি ৬৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়েছে। নীরজ ঘেওয়ান পরিচালিত এই ছবি রিলিজ হতে চলেছে এ মাসের শেষের দিকে। শ্যুটিংয়ের সময় রিচা চাড্ডা স্বচ্ছ ভারত অভিযানে সামিল হয়ে ঘাট পরিষ্কার করে রেখেছিলেন। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেছিলেন। পরিচালক সুজিত সরকারের ‘পিকু’ তেও বেনারসের একটা ছোট্ট সিন আছে। দিল্লি থেকে কলকাতা যাবার পথে বেনারসে রাত কাটান অমিতাভ বচ্চন, দীপিকা পাড়ুকোন, আর ইরফান খান। শোনা যায় রাত্রে ঘাটে শ্যুটের সময় ভোজপুরী গান গেয়ে ইরফান আর দীপিকার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিল স্থানীয় বাসিন্দারা।
‘মহল্লা অসসি’ ছবির একটি দৃশ্যে সানি দেওল।
বেনারসের পটভূমিতে সানি দেওল অভিনীত ‘মহল্লা অসসি’ ছবিটি রিলিজ হতে চলেছে এই বছরের শেষে। সিনেমার নামকরণ হয়েছে বেনারসের বিখ্যাত অসি ঘাটের নামে। সাক্ষী তনোয়ার এই ছবিতে সানি দেওলের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। পরিচালক হলেন চন্দ্রপ্রকাশ দ্বিবেদী। যিনি এর আগে ‘পিঞ্জর’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন। এর আগেও সানি দেওল অভিনীত দুটি ছবির শ্যুটিং বেনারসে হয়েছিল। একটি হল রাজকুমার সন্তোষী পরিচালিত ‘ঘাতক’। ‘ঘাতক’য়ে সানি ছিলেন বেনারসেরই এক কুস্তিগিরের ভূমিকায়। অন্য ছবিটি হল ‘ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা’। সানি ছাড়াও এই ছবিতে ছিলেন ধর্মেন্দ্র এবং সানির ভাই ববি দেওল।
অন্য যে সব ছবি বেনারসে হয়েছে
এর আগে মণীশ তেওয়ারির ‘ইশক’ ছবিতে বেনারসের বিখ্যাত রামলীলার দৃশ্য দেখানো হয়েছিল। যুগ যুগ ধরে বেনারসে এই রামলীলা হয়ে চলেছে। কিন্তু কোনও দিন এর আগে শ্যুটের অনুমতি মেলেনি। বেনারসের মহারাজা মণীশের আত্মীয় হওয়ায় রামলীলা শ্যুট করার সুযোগ পাওয়া গিয়েছিল। প্রতীক বব্বর-আময়রা দস্তুর অভিনীত ছবিটি শেকসপিয়রের ‘রোমিও জুলিয়েট’ অবলম্বনে তৈরি।
‘রাঞ্ঝানা’ ছবিতে দক্ষিণ ভারতের অভিনেতা ধনুষ।
‘রাঞ্ঝানা’রও শ্যুটিং হয়েছিল বেনারসে। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন দক্ষিণ ভারতের অভিনেতা ধনুষ আর সোনম কপূর। অভিষেক বচ্চন অভিনীত ‘বাস ইতনা সা খোয়াব হ্যায়’ ছবিতে অমিতাভের সেই বিখ্যাত ‘ছোড়া গঙ্গা কিনারেওয়ালা’ ভাবমূর্তি ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে ছবি তেমন ভাল চলেনি।
বহুচর্চিত ছবি ‘লাগা চুনরি মে দাগ’য়ে নায়িকা রানি মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন বেনারসের বাসিন্দা। ছবির অনেকটা অংশ বেনারসে শ্যুট করা। প্রদীপ সরকারের এই ছবিতে ছিলেন কঙ্কণা সেনশর্মা, কুণাল কপূর, অনুপম খেরও।
দীপা মেহতার বিতর্কিত ট্রিলজির অন্যতম ‘ওয়াটার’য়ের শ্যুটিং হয়েছিল বেনারসে। বেনারসের বিধবাদের জীবনযন্ত্রণা নিয়েই এই ছবির শ্যুটিংয়ে যথেষ্ট ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল ইউনিটকে।
‘লাগা চুনরি মে দাগ’ ছবির একটি দৃশ্যে রানি মুখোপাধ্যায়।
‘বেনারস আ মিস্টিক লভ স্টোরি’—প্রকাশ ঝায়ের এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে পুরনো বেনারসের নস্টালজিয়া। ঊর্মিলা মাতণ্ডকর লিড রোলে থাকলেও বক্স অফিসে ছবিটি সুবিধা করতে পারেনি। বহু বছর আগে ‘রাম তেরি গঙ্গা ম্যায়লি’ ছবির ক্লাইম্যাক্স রাজ কপূর শ্যুট করেছিলেন বেনারসে। বেনারস শহরকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল এই ছবিতে।
বেনারস শহরের একটা শৈল্পিক আবেদন ছিল বরাবরই। সেই জন্য পরিচালক-প্রযোজকেরাও আকৃষ্ট হয়েছেন। এখন আবার সেই বেনারসে শ্যুটিং করার ধারা আবারও ফিরে আসছে।
ছবি: ফেসবুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy