Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Badshah Moitra

Badsha Moitra: গসিপ নেই মানে সম্পর্কও নেই, তা তো নয়, তবে সে সব একান্ত ব্যক্তিগত: বাদশা

ঝুঁকি নিয়ে বাঘের ডেরায় নামি, ভাগাড়ের দুর্গন্ধে শকুনের ছবি তুলি, অভিনয়ের বাইরে আমার জগৎটা অনেক বড়

আন্দবাজার অনলাইনের কাছে একেবারে নিজস্ব ঢঙে  ধরা দিলেন বাদশা মৈত্র।

আন্দবাজার অনলাইনের কাছে একেবারে নিজস্ব ঢঙে ধরা দিলেন বাদশা মৈত্র।

পরমা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:১৩
Share: Save:

ইন্ডাস্ট্রিতে পঁচিশ বছর পার। বাংলা ধারাবাহিকের জনপ্রিয় মুখেদের অন্যতম। তাঁর পরিচয় বাম রাজনীতির অলিন্দেও। এ সবের বাইরে বাদশা মৈত্র ঠিক কেমন? আন্দবাজার অনলাইনের কাছে ধরা দিলেন একেবারে নিজস্ব ঢঙে।

প্রশ্ন: ধারাবাহিকের দুনিয়াকে চেনেন পঁচিশ বছর। কতটা পাল্টেছে?

অনেকটাই। ‘জন্মভূমি’তে যখন শুরু করেছিলাম, তখন দূরদর্শন আর এক-আধটা চ্যানেলের জন্য কাজ হত। যত্ন করে, সময় এবং ভাবনা দিয়ে করা হত সবটাই। এখন চ্যানেলও বেড়েছে, ধারাবাহিকের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে অনেক। যে দ্রুততায় এখন ধারাবাহিকের শ্যুটিং হয়, তাতে আগের মতো যত্ন নেওয়ার সুযোগ কই? এন জি-র পর এন জি হয়ে ওকে শটে পৌঁছতে যে পরিশ্রম লাগে, নিখুঁত অভিনয় পেতে যতখানি সময় বা যত্ন দিতে হয়, সেটা আজকাল দেখা যায় না। ফলে ধারাবাহিকের কাজের মান অনেকটাই কমেছে আগের তুলনায়।

প্রশ্ন: ঠিক কোথায় কোথায় সেই যত্নের অভাব?

আগে ধারাবাহিকে যাঁরা অভিনয় করতে আসতেন, তাঁরা অভিনয়টা শিখে আসতেন, কাজে পরিশ্রমের পাশাপাশি অভিনয় জানাটা স্পষ্ট হয়ে উঠত। এখন অনেককেই দেখি, অভিনয় না জেনেও দিব্যি ধারাবাহিকে কাজ করছে। এখনকার ধারাবাহিকে ভাল অভিনেতা বা অভিনয় জানা মানুষ অবশ্যই আছেন, তবে সংখ্যাটা কম। যে ধাঁচে আজকাল কাজ হয়, তাতে নিয়মিত নতুন মুখ তুলে আনতে গিয়ে এই হয়তো আপোসটা করা হয় । যদি চ্যানেল বা প্রযোজক সোজাসুজি বলতে পারেন, অভিনয় শিখে না এলে নেব না, তবে হয়তো সমস্যাটা মেটানো যাবে। তা ছাড়া, এখন এতগুলো ধারাবাহিকের কাজ করতে গিয়ে শ্যুটিংয়ে যে তাড়াটা থাকে, তাতে আগের মতো সময় নিয়ে পরিচালনা বা অভিনয়ের সুযোগটাই কম। ফলে নিজে অভিনয়টা শিখে এলে কাজের মান ভাল হবে।

ইন্ডাস্ট্রিতে পঁচিশ বছর পার করলেন বাদশা মৈত্র।

ইন্ডাস্ট্রিতে পঁচিশ বছর পার করলেন বাদশা মৈত্র।

প্রশ্ন: আপনাকে ছবিতে সে ভাবে দেখা যায় না কেন?

ঠিক বলতে পারব না। এটুকু বলতে পারি, আমি অভিনয়টা যত্ন করে শিখেছি। এখনও রোজ শিখি। অভিনয়, এক্সপ্রেশন নিখুঁত করতে পরিশ্রম করি। ছবির দর্শককে তাই আমার অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। অভিনয়ের ফারাকে নানা ধরনের চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার ইচ্ছে ছিল। তার সুযোগ পাওয়া হয়ে ওঠেনি। যে কারণেই হোক।

প্রশ্ন: আপনার রাজনৈতিক পরিচয় কি কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াল?

এর উত্তরটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। আর নতুন করে কিছু বলব না। কে কোন দল, কে কার লোক, কার কত নম্বর— ইন্ডাস্ট্রিতে আজকাল এ সবের গুরুত্ব অনেক বেশি। থিয়েটারের মতো অলাভজনক ক্ষেত্রেই এত ছড়ি ঘোরানো চলে, সেখানে ছবির জগৎ তো আরও অনেক বড়, অনেক বেশি টাকার ব্যাপার। টলিউডে এখনও পেশাদারিত্বের বড্ড অভাব। মুম্বই বা বলিউড কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে অনেক বেশি পেশাদার।

প্রশ্ন: এই মুহূর্তে কী কী রয়েছে আপনার হাতে?

ধারাবাহিক ‘ধুলোকণা’য় কাজ করছি। ওটিটি-র জন্য একটা ছবির শ্যুটিং করে এলাম পুরুলিয়ায়। বেশ ভাল লাগল কাজটা। মার্চে আর একটা কাজ করার কথা। তবে যত ক্ষণ শুরু না করছি, তত ক্ষণ সেটা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই।

প্রশ্ন: অভিনয় শেখার কথা বলছেন, কোনও পরামর্শ দেবেন তার জন্য?

শেখার সুযোগ তো চার দিকে ছড়িয়ে। ইনস্টিটিউট আছে প্রথাগত শিক্ষার জন্য। তার বাইরে থিয়েটার, যাত্রা— সবই অভিনয় শেখার ব়ড়সড় মঞ্চ। তিন দিকে দর্শকের সামনে অভিনয় করাটাই তো একটা আলাদা চ্যালেঞ্জ। কী ভাবে, কখন, কোন এক্সপ্রেশন দেওয়া যায়, তা শিখতে বা ঘষামাজা করে নেওয়া যায় তাতেই। তা ছাড়া, বাইরের পৃথিবীটাকে চিনতে হবে, সব রকম পেশার, সমাজের সব রকম স্তরের মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। তবেই তো প্রত্যেকের আলাদা আলাদা রকমের অভিব্যক্তি, আবেগ, অনুভূতিকে নিজের অভিনয়ে তুলে আনা সম্ভব হবে। প্রিয় জনকে হারানোর দুঃখ একেক ধরনের মানুষের এক এক রকম হয়। চরিত্র অনুযায়ী সেই ফারাকটা অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলতে হয়। বাইরের পৃথিবীটা না দেখে শুধু নিজের দুনিয়াতেই সময় কাটালে তো সংলাপ, অভিব্যক্তি সবই কৃত্রিম হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: আপনি নিজেও তেমনটা করেন?

অবশ্যই। অভিনয়টা আমার পেশা। আমি যেখানে যত রকমের অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি, কাজে লাগিয়েছি, নিজেকে ঘষামাজা করি যত রকম ভাবে সম্ভব। ধারাবাহিক, টেলিফিল্ম, বড় পর্দা, ওটিটির কাজ তো আছেই। থিয়েটার করতাম নিয়মিত। নামকরা যাত্রাদল ‘নট্টকোম্পানি’র ডাক পেয়ে আর দু’বার ভাবিনি। যাত্রাও করেছি অনেক। থিয়েটার বা যাত্রা কিন্তু অভিনয় দক্ষতাকে পোক্ত করতে খুব কাজে লাগে। কারণ একেবারে শেষ সারিতে বসা দর্শকের কাছেও অভিনয়টাকে নিখুঁত করে পৌঁছে দিতে হয়। এ ছাড়া, কাজের ফাঁকে আমি প্রচুর বেড়াতে যাই, বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেখানকার নানা ধরনের মানুষের সঙ্গে মিশি। যাতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের সময়ে সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগাতে পারি।

প্রশ্ন: অভিনয়ের বাইরে আর কী কী করেন?

অনেক কিছু। ভারতবর্ষে অনেক রকম মেলা হয়। বাংলার নানা ধরনের মেলা তো আছেই, বিভিন্ন প্রদেশে কুম্ভ মেলা, পুষ্করের মেলা, দশেরা— যেখানে যত রকম মেলা হয়, আমি পৌঁছে যাই। নানা ধরনের মানুষ দেখি, তাঁদের আচরণ-অভিব্যক্তি দেখি। বাউলদের নিয়েও বিভিন্ন সময়ে কাজ করি। এ ছাড়া আমাদের একটা দল একটা গ্রামের জন্য কাজ করে। তার চাষবাস থেকে অন্যান্য উন্নয়নে সবাই মিলে হাত লাগাই। এর পাশাপাশি ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফি আমার শখ, ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়ি যখন-তখন। সুন্দরবনে যাই নিয়মিত। ওখানে কুমির গণনা, বাঘ গণনার কাজে আমি যুক্ত। একেবারে বাঘের ডেরায়, কাদার মধ্যে, শ্বাসমূলের মধ্যে নিজেরা নেমে পড়ে, ক্যামেরা বসিয়ে ঘোরাঘুরি করেছি।ঝুঁকি প্রচুর, কিন্তু কী যে সাঙ্ঘাতিক উত্তেজনা আর ভাল লাগার সেই অভিজ্ঞতা— বলে বোঝানো যাবে না!

প্রশ্ন: আরেব্বাস!

শুনবেন? আমার ঝুলিতে কিন্তু আরও আছে এমন অন্য রকম অভিজ্ঞতা। রাজস্থানে এক বার শকুনের ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। একটা ভাগাড়ে মরা গরু-মোষ, সেখানে শকুনের ঝাঁক এসে বসে। পচা মাংসের প্রবল দুর্গন্ধের মধ্যে পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলেছি। অভিনেতা বা তারকা বললেই সবাই যে রকম একটা ঝাঁ-চকচকে দুনিয়ার কথা ভাবেন, তার সঙ্গে আমার মিল পাচ্ছেন?

প্রশ্ন: আর তার বাইরে? বাড়িতে?

বাড়িতে স্ত্রী আছে, মেয়ে ক্লাস সেভেন। মায়ের মতো এক জন আছেন, আমাদের সঙ্গেই থাকেন। পরিবার, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আর জগৎ।

প্রশ্ন: আপনাকে নিয়ে কোনও গসিপও শোনা যায় না। সত্যিই কি কিছু নেই?

থাকবে না কেন? (হাসি) গসিপ না থাকলে কি সম্পর্ক থাকতে নেই? এত ক্ষণ একসঙ্গে কাজ করলে সম্পর্ক তো গড়ে ওঠারই কথা। তবে কি জানেন? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গসিপ তাঁদের নিয়েই রটে, যাঁরা রটাতে চায়। আমাদের পেশায় প্রচারের আলোয় থাকতে অনেকে অনেক কিছুই তো করেন! আমি আমার যে কোনও সম্পর্ককে একেবারে ব্যক্তিগত রাখতেই পছন্দ করি। তাই বাইরের মানুষের কাছে সে খবর পৌঁছয় না। আমার স্ত্রী বা মেয়ে জানতে চাইলেও এই একই কথা বলব।

অন্য বিষয়গুলি:

Badshah Moitra Tollywod Actor Interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE