Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
kaushik gangopadhyay

Koushik Ganguly: অতিমারি বুঝিয়েছে সময় কম, জটিল মানুষদের জীবন থেকে ছেঁটে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ: কৌশিক

'মাস' না থাকলে 'ক্লাস' নেই। আবার ছবির 'ক্লাস' না থাকলে বাংলা ছবি অধঃপতনে যাবে।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

উপালি মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:২৪
Share: Save:

প্রশ্ন: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় নাকি ক্যামেরা ছেড়ে বন্দুক বেছে নিয়েছেন?

কৌশিক: (মৃদু হাসি) খেলনা বন্দুক বলে তাই তুলে নিয়েছি।

প্রশ্ন: ‘বন্দুকবাজ’ হয়ে কেমন লাগছে?

কৌশিক: আমি কিন্তু অভিনয় সূত্রে এর আগেও হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছি। রিভলবার থেকে বড় বন্দুক! সব এসেছে আমার কাছে। দর্শকও দেখেছেন বন্দুক নিয়ে। এবারের চরিত্রও খুবই আকর্ষণীয়। তাই আবারও বন্দুক তুলে নিলাম। ভাল লাগছে নতুন ধরনের চরিত্র করে। মনে হয় দর্শকদেরও ভাল লাগে আমার অভিনয়। তাই হয়তো ‘অভিনেতা’ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ডাক পড়ছে ঘনঘন। আমার কথা ভেবে চরিত্র লেখা হচ্ছে। এটা আমার বহু দিনের স্বপ্ন ছিল। একটু একটু করে যেন সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।

প্রশ্ন: একটানা পরিচালনার ফাঁকে অভিনয়ও তা হলে উপভোগ করছেন?

কৌশিক: ভীষণ ভাবে উপভোগ করছি। এটা আমার একটি আলাদা সত্তা। পরিচালনা করতে করতেও অভিনয় করেছি। তবে তার জন্য বাড়তি চাপ নিতে হয়। একটি ছবির খুঁটিনাটি সব নজরে রাখতে হয়। শ্যুট ঠিকমতো হচ্ছে কিনা। বাজেটের মধ্যে কাজ উঠে যাচ্ছে কিনা থেকে শুরু করে সবাই খেলো কিনা এটাও। অন্য ছবিতে অভিনয় করলে এত কিছু ভাবতেই হয় না। ফুরফুরে মেজাজে মন দিয়ে শুধু অভিনয় করতে পারি। এটা মন ভাল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তারপরে ভাল দৃশ্য গ্রহণের পরে যখন পরিচালক প্রচণ্ড আনন্দ পায় সেটাও ছুঁয়ে যায়। পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে।

প্রশ্ন: সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়ের সিরিজে ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’কেমন?

কৌশিক: ভীষণ সাধারণ এক প্রৌঢ়। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি, কালো শাল, চোখে চশমা। পরিস্থিতির শিকার হয়ে সেই আপাত নিরীহ ব্যক্তির হাতেই বন্দুক! তখনই বোঝা যায়, অতি সাধারণও প্রয়োজনে কতখানি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। যদিও এই বদলও খুবই মানবিক কারণে। রহস্য ধরে রাখতে আপাতত এটুকুই।

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: আপনার এই বিশেষ ‘সাজ’ দেখে অনেকেই ‘শঙ্কর মুদি’কে মনে করছেন...

কৌশিক: তাই? এই একই সাজে কিন্তু আমার ছবি ‘বাস্তুশাপ’-এও অভিয় করেছি। কিন্তু কোনও চরিত্রের সঙ্গে কোনও চরিত্রের মিল নেই। প্র্যাঙ্কেনস্টাইন-এর চরিত্রের সঙ্গে তাই আগে অভিনীত কোনও চরিত্রের কেউ মিল খুঁজতে গেলে বোধহয় ভুলই করবেন।

প্রশ্ন: আপনিও আপাতদৃষ্টিতে খুবই নিরীহ, প্রয়োজনে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন?

কৌশিক:
হ্যাঁ। আমিও প্রয়োজনে ভীষণ ভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারি। তা বলে বন্দুক হাতে তুলে নিতে পারি, ভাববেন না (হাসি)। আমার প্রতিবাদ খুবই অহিংস পথে চলে। প্রয়োজনে আমি কোনও মানুষকে নিজের জীবন থেকে বাদ দিয়ে দিতে পারি। যদি সেখানে কোনও অবমাননা থাকে। সেখানে যদি কোনও কুৎসা থাকে। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি মানুষের জীবন খুব অল্প সময়ের। অতিমারি এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে। কোভিড বুঝিয়ে দিয়েছে, যে কোনও মুহূর্তে আমাদের ডাক এসে যেতে পারে। প্রচুর স্বজন বিয়োগ ঘটেছে আমার। যা মনেও ছাপ ফেলেছে। ভিতরের আমি বারবার যেন ডেকে বলছে, কঠিন মানুষদের সঙ্গে দিনযাপন করে সময় নষ্ট করার মতো পরিস্থিতি আর নেই। তাই কাউকে বদলানোর চেষ্টা করার বদলে তাঁকে ছেঁটে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। তিনি তাঁর মতো করে বাঁচুন। আমি আমার মতো করে।

প্রশ্ন: নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করছেন জাতীয় পুরস্কার পাওয়া পরিচালক, কেমন লাগছে?

কৌশিক: খুব ভাল লাগছে। সাগ্নিক নতুন জিনিস নিয়ে ভেবেছেন। নতুন কিছু উপহার দিতে চলেছেন। অভিনয়ের পরে আমি তাই কখনও মনিটর দেখি না। যাতে ‘পরিচালক’ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বেরিয়ে না আসে।সে নিজের মতামত না দিয়ে ফেলে। এই সিরিজের পরিচালক আমি নি। আমি শুধুই অভিনেতা। সেটাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে চাই। যাঁর পরিচালনায় শ্যুট হচ্ছে তিনি খুশি হলেই আমিও খুশি।

প্রশ্ন: নতুন অভিনেতাদের আপনি শিখিয়ে পড়িয়ে নিচ্ছেন? ওঁদের কাউকে আপনার আগামী ছবিতে দেখা যাবে?

কৌশিক: শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়ার দায় পরিচালকের। আমার নয়। আমি অভিনয়ের আগে ওদের সঙ্গে আলোচনা করে নিচ্ছি। ইপ্সিতা কুণ্ডু, দীপ দে, শ্রীতা দে, রেমো এই চার জন আমার কাছে টাটকা বাতাসের মতো। ওদের উত্তেজনা, আনন্দ, ভাল দৃশ্যগ্রহণের পরে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠা আমি উপভোগ করছি প্রতি মুহূর্তে। আর আগামী দিনে ওরা আমার ছবিতে থাকবেন কিনা সেটা সময় বলবে।

প্রশ্ন: ওঁরা আপনাকে স্যালাইনের সঙ্গে তুলনা করেছেন! দাবি, আপনি নাকি শুধুই অভিনয় করলেও বহু জনের ভাত মারতেন...

কৌশিক: (হেসে ফেলে) আমার যেমন গল্প বলা কাজ তেমনি অভিনয়টাও খুবই ভালবাসার জায়গা থেকে করি। আজও স্বপ্ন দেখি অভিনয়ের। সব মিলিয়ে হয়তো আমার কাজ ভাল লাগে সবার। এর বেশি কিছুই নয়।

প্রশ্ন: কখনও আপনি কাউকে প্র্যাঙ্ক করেছেন বা আপনাকে কেউ?

কৌশিক: প্র্যাঙ্ক করা বা ভয় দেখিয়ে আনন্দ পাওয়া, কটাক্ষ করা, এগুলো খুবই অপছন্দ আমার। আমি এ সব থেকে শত হাত দূরে থাকি। আমাকেও কেউ যাতে এসব না করেন সে দিকে সজাগ থাকি। আমায় এমন কেউ করেনও না।


প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ রোজের ঘটনা! আপনি কী করে সামলান?

কৌশিক: আমায় কেউ কটাক্ষ করেন না। কেউ করলেও পাত্তা দিই না। ফেসবুকে থাকি কেবল নিজের ছবি বা কাজের প্রচারের জন্য। এর আগে অন্য অনেককে কটাক্ষের শিকার হতে দেখেছি। পড়তাম সেগুলো। দেখতে দেখতে বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে। আমিও নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিয়েছি। অনেকে হয়তো এই কটাক্ষ থেকে নেতিবাচক প্রচার শুষে নেন। আমি পারি না। ফলে, ন্যূনতম সম্মানটুকু যেন আর মানুষ মানুষকে দিচ্ছেন না। যা দেখে খুব খারাপ লাগে।

প্রশ্ন: আপনার পরিচালিত এক মুঠো ছবি অতিমারির কারণে আটকে, সেই জন্যেই কি অভিনয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে?

কৌশিক: একেবারেই তা নয়। ওগুলোও একে একে মুক্তি পেতে চলেছে। ১৭ জুন মুক্তি পাচ্ছে উইনডোজ প্রোডাকশনের ‘লক্ষ্মী ছেলে’। বাকিগুলোও তৈরি মুক্তির জন্য। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মানেই বিনোদন দুনিয়াও আবার আগের মতো হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।

প্রশ্ন: আপনার ‘ধূমকেতু’ নিয়ে বাড়তি আগ্রহ সবার, দেব-শুভশ্রী অভিনীত ছবিটির ভবিষ্যত কী?

কৌশিক: এই প্রথম দর্শক আর পরিচালক এককাট্টা! ওঁদের যা জিজ্ঞাসা আমারও তাই। ‘ধূমকেতু’র ভবিষ্যত কী? (হাসি)

প্রশ্ন: অতিমারিতে বিপর্যস্ত বিনোদন দুনিয়া চাঙা করতে এখন ‘মাস’ না ‘ক্লাস’, কোন ধরনের ছবির প্রয়োজন?

কৌশিক: এত দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। বিনোদন দুনিয়া আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এবং তার জন্য দুই ধরনের ছবিরই দরকার। দুই ধারার ছবিই সমান তালে বানাতে হবে। 'মাস' না থাকলে 'ক্লাস' নেই। আবার ছবির 'ক্লাস' না থাকলে বাংলা ছবি অধঃপতনে যাবে। এই দুই ধারা একে অন্যের পরিপূরক। এটা সব সময়েই বুঝতে হবে। সবাই এটাও ভয় পেয়েছিলেন, আর বোধ হয় দর্শক হলমুখী হবেন না। বাস্তব দেখিয়ে দিল, টানা আড়াই-তিন বছর ধরে মোবাইলে সিনেমা দেখে দর্শক বিরক্ত। আমরা অনলাইনে খাবার খাই বলে কি রেস্তরাঁয় যাই না! দুটোই চলছে। একই ভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মও থাকবে। আবার বড় পর্দাতেও ছবি দেখতে দর্শক আসবেন। এবং তখন ‘মাস’ ও ‘ক্লাস’ দুই ধারার ছবিরই দরকার হবে।

প্রশ্ন: সম্প্রতি একাধিক ছবি মুক্তি পেয়েছে, কোনটা দেখলেন?

কৌশিক: একটাও দেখে উঠতে পারিনি। নিজস্ব কাজের চাপে।

প্রশ্ন: পরপর দুটো সিরিজে অভিনয় করলেন। একটিতে আপনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জুতোতেও পা গলিয়েছেন। আপনি সিরিজ করবেন?

কৌশিক: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জুতোতে মোটেই পা গলাইনি। বলতে পারেন প্রণাম করে তুলে রেখে দিয়েছি। উনি ঈশ্বরতুল্য ব্যক্তিত্ব। আমার সৌমিত্রবাবু হওয়ার ক্ষমতাই নেই। তাই সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে তাঁর অভিনীত চরিত্র। তাছাড়া, কেউ কারওর জুতোয় পা গলাতেও পারেন না। আর এভাবে কোনও চরিত্রকে এগিয়ে রাখা যায় না। ‘টিকটিকি’ সিরিজে আমার চরিত্র সেই সিরিজের উপযোগী। এইটুকুই। অবশ্যই সিরিজ পরিচালনার ইচ্ছে আছে। নতুন একটা মাধ্যম ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। সেখানে কাজ করব না!

প্রশ্ন: বিনোদন দুনিয়ায় প্রবল ভাবে রাজনীতির ছায়া, আপনার ছবিতে এই দিক তুলে ধরবেন? নিজে রাজনীতিতে আসবেন?

কৌশিক: সেই উত্তর এখন দিই কী করে? বরং সময়ের উপরে ছেড়ে দিই। সেই সব প্রশ্নের উত্তর দেবে। রাজনীতি করা খারাপ না তো! কেউ গান করেন কেউ রাজনীতি। আপাতত এর বেশি আর কিছু বলতে চাই না।

অন্য বিষয়গুলি:

kaushik gangopadhyay Film Director Churni Ganguly Actor Interview Web Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy