শেষ বয়সে কী করতে চান বাদশা মৈত্র?
কখনও তিনি ধারাবাহিক খড়কুটোয় ‘সুকল্যাণ কাকু’। কখনও ‘ধুলোকণা’র ‘বুলেট’। নানা রূপে বাদশা মৈত্র রোজই হাজির হন দর্শকদের সামনে। দর্শকরা তাঁর অভিনয় ভালওবাসেন। আর অভিনেতা নিজে কী ভালবাসেন? বাদশা কিন্তু সুযোগ পেলেই পৌঁছে যান প্রকৃতির কোলে। কখনও বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে আসেন সুন্দরবনের হিংস্র শ্বাপদদের সঙ্গে। কখনও বা সামিল হন কুমির কিংবা বাঘসুমারির কাজে। বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবসে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে।
ইট-কাঠের জঙ্গলে যখন হাঁফিয়ে ওঠেন, তখনই কি তিনি ছুটে যান প্রকৃতির কাছে? খোলা হাওয়ায় শ্বাস নেবেন বলে? অভিনেতা বলছেন “ঠিক উল্টোটা। শহুরে জীবন আমার জন্য নয়। কিন্তু মাটির কাছাকাছি থেকে যা যা করা যায়, তার কোনওটাই আমি পারি না। তাই জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতেই শহরে ফিরে আসতে হয় আমায়।’’ তবে একটি কাজ বাদশা খুবই ভাল পারেন— বন্যপ্রাণ ক্যামেরার চোখে ধরে রাখা। তাই কখনও গভীর অরণ্য, সেখানকার জীবন, কখনও সমুদ্র, কখনও বা কুমির, বাঘের মতো ভয়াল প্রাণী তাঁর ছবির বিষয় হয়ে ওঠে।
এই কাজ করতে গিয়েই তাঁর সুযোগ হয়েছিল বন্যপ্রাণ গণনার মতো কঠিন কাজ সরাসরি দেখার। অভিনেতার কথায়, ‘‘সব অরণ্য এক দিকে। অন্য দিকে সুন্দরবন। অন্যান্য জঙ্গলে গাড়ি চালানোর সুযোগ আছে। বিপদ এলে দৌড়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচানোর সুযোগ আছে। সুন্দরবনে জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। কাদামাখা পিছল মাটি। হাঁটতে গেলে পা ডুবে যায়। দৌড়োলে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। এখানে পায়ে পায়ে বাঘ ঘোরে। মাটি ভেদ করে উঁচু হয়ে থাকে শ্বাসমূল। যা এক বার বিঁধলে মৃত্যু অনিবার্য। সে সব এড়িয়ে বাঘ বা কুমিরের সংখ্যা গোনার মতো রোমাঞ্চকর কাজ দুনিয়ায় দুটো নেই। সুযোগ পেতেই তাই সফর সঙ্গী হয়েছিলাম।’’ বাদশা দেখেছেন, ছোট নৌকোয় চেপে বারবার নদী বেয়ে কী ভাবে কুমিরের সংখ্যা গুণতে হয়। তাঁর অভিজ্ঞতা হয়েছে, মাংসের টোপ দিয়ে কী ভাবে বাঘদের এক জায়গায় জড়ো করা হয়। গাছে-গাছে লাগানো থাকে ক্যামেরা। পাশাপাশি, মাথাপিছু গণনার চেষ্টাও হয়।
কিন্তু প্রকৃতি মানেই মাটির সোঁদা গন্ধও। নতুন নতুন শস্য। নিজের হাতে অন্ন ফলানো। বাদশার কখনও ইচ্ছে করে, কোনও বড় প্রান্তরে খামার বাড়ি বানিয়ে নিজের হাতে ক্ষেতে চাষ করবেন? এক কথায় রাজি অভিনেতা। পর্দার ‘সুকল্যাণ কাকু’ স্বপ্ন দেখেন, এক দিন তাঁকে আর স্টুডিয়োয় আসতে হবে না। সংলাপ মুখস্থ করে ক্যামেরার সামনে বলতে হবে না। তিনি নিজেকে মিশিয়ে দেবেন পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র, বন্যপ্রাণের মধ্যে। তার জন্য তিনি প্রয়োজন ক্রমশ কমাতে শুরু করেছেন। অন্যদেরও একই বার্তা দিয়েছেন বিশেষ দিনে, ‘‘প্রয়োজন, বিলাসিতা কমান। প্রকৃতির উপরে অত্যাচার বন্ধ করুন। প্রকৃতি কিন্তু ভয়ঙ্কর ভাবে প্রতিশোধ নেবে। করোনা অতিমারি তার ছোট্ট উদাহরণ মাত্র।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy