শ্রদ্ধেয় মহম্মদ আজহারউদ্দিন,
আসলে আপনার বায়োপিক— আবার টাইটেল অনুযায়ী বায়োপিক নয়— এমন একটা হাঁসজারু বা বকচ্ছপ ছবি ‘আজহার’ কাল রাতে দেখে এলাম। তার পর সকাল গড়িয়ে দুপুর, মেজাজটা এখনও কেমন ছিরকুট্টা হয়ে আছে। ছবির নির্মাণশৈলী, গল্প, চিত্রনাট্যের কথা বাদ-ই দিলাম, কিন্তু ওটা কি আদৌ ‘আপনি’ হয়েছেন?
কয়েকটি দৃশ্যে ব্যাট নিয়ে হাঁটার ভঙ্গি আর গলায় তাবিজ বাদ দিলে ইমরান হাসমির মধ্যে আপনাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। শুনলাম, আপনি ইমরানের প্রশংসা করেছেন আপনার ম্যানারিজমকে প্রায় অবিকল তুলে আনার জন্য। কিন্তু ফুলস্লিভ জার্সি, উঁচু কলার ছাড়া আর সেটা কোথায় আছে? মাঠে ক্রিকেটীয় ম্যানারিজম বা আজহরাউদ্দিনোচিত ভাবভঙ্গি তো গোটা ছবিতে নেই-ই!
হরিণ গতিতে ছুটে ঘাস থেকে বল তুলে নিয়ে না থেমে ওই অবস্থাতেই আপনি ছুড়লে নিখুঁত পড়ত উইকেটকিপারের গ্লাভস বা বোলারের হাতে কিংবা উইকেটে লেগে ব্যাটসম্যান রান আউট হয়ে যেত। আপনার ওই ফিটনেস, কোমরের নমনীয়তার জন্য বলা হত, সুন্দরী মডেলরাও লজ্জা পাবেন। আর ইমরান হাসমি ধরলেন কিছু সহজ ক্যাচ! ব্যাটিংয়েও সেই কব্জির মোচড় অদৃশ্য, ইমরানকে দেখে মনে হল, তাড়ু ব্যাটসম্যান।
এই ছবিতে প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে, আজহার নামে ক্রিকেটার ইচ্ছাকৃত খারাপ খেলতে বুকিদের কাছ থেকে কোটি টাকা নিয়েছিলেন, কিন্তু দলকে শেষমেশ হারাননি, পরে তিনি সেই টাকা ফেরত দেন। তা হলে টাকাটা নিলেন কেন? এমন কারণ দেখানো হল যে, হাসি পেল।
আপনার সঙ্গে ক্রিকেট বুকি এমকে গুপ্তর (ছবিতে যাঁর নাম এমকে শর্মা এবং ভূমিকায় রাজেশ শর্মা) সাক্ষাতের কথা প্রাক্তন সিবিআই-কর্তা নীরজ কুমার তাঁর ‘ডায়াল ডি ফর ডন’ বইয়ে লিখে দিয়েছেন। সিবিআইয়ের নথিতে তো রয়েছেই। কাজেই, ওটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু আপনাকে নিষ্কলঙ্ক দেখানোই এই ছবির লক্ষ্য ও মোক্ষ। তাই, দলকে জেতানো আর টাকা ফেরত দেওয়াটা রাখতে হয়। অথচ তাতে বিশ্বাসযোগ্যতার বিস্তর অভাব। তবে হ্যাঁ, অভিযোগে বিদ্ধ আজহারের মানসিক টানাপড়েন ফুটিয়ে তোলায় ইমরান অনবদ্য।
অবশ্য ক্যাপ্টেন আজহার এই ছবিতে তেমন নেই। পটৌডি-উত্তর যুগে যিনি প্রথম আগ্রাসী অধিনায়ক বলে পরিচিত! যিনি ইডেনে ’৯৩-এর হিরো কাপের সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ ওভার করান স্পেশ্যালিস্ট বোলারকে নয়, সচিন তেন্ডুলকরকে দিয়ে, এবং জেতেন।
ছবি দেখে আপনার মনে হয়েছে, পরিচালক টনি ডি’সুজা নাকি প্রচুর খেটেছেন। খাটনির নমুনা? আপনার চেয়ে মনোজ প্রভাকর লম্বা! মোটা গোঁফ আর দু’হাতে সাদা রিস্ট ব্যান্ড থাকলেই প্রভাকর হওয়া যায় বুঝি! আর কপিলদেব? বরুণ বাদোলাকে টিমের ফিজিও হলে মানাত ভাল।
আপনার প্রথম সেঞ্চুরি ই়ডেনে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকা অবস্থা থেকে ’৯৩-এর জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে আপনার ঘুরে দাঁড়ানো ও জয়রথের চাকা এগোনো শুরু ইডেনে এবং আপনার পতনের শুরু বা ’৯৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল হেরে যাওয়াও ইডেনে। অথচ ছবিতে ইডেন বিস্ময়কর ভাবে অনুপস্থিত!
আপনার দ্বিতীয় স্ত্রী সঙ্গীতা বিজলানির অভিনয় জীবন সম্পর্কে পরিচালক সম্ভবত হোমওয়ার্ক করেননি। করলে জানতে পারতেন, সঙ্গীতাকে বেশি মদির লেগেছিল ‘ত্রিদেব’ ছবির ‘গলি গলি মে ফিরতা হ্যায়’ গানে— ‘গজরনে কিয়া হ্যায় ইশারা’ গানে নয়। সঙ্গীতার ভূমিকায় নার্গিস ফকরিকে বিদেশিনি যন্ত্রমানবী লেগেছে। তবে আপনার প্রথম স্ত্রী নৌরিনের যন্ত্রণা প্রাচী দেশাইয়ের অভিনয়ে আজহারকে হারানোর যন্ত্রণায় প্রতিফলিত। কিন্তু এই ছবির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কোর্টরুম ড্রামা। সেটা অনেক সময়েই মনে হয়েছে ভাঁড়ামো। আব্বাস-মাস্তানের ‘অ্যায়তরাজ’ ছবি দেখে লারা দত্তদের শেখা উচিত ছিল।
আমার প্রিয় ক্যাপ্টেন, আপনি আমাদের প্রজন্মকে শিখিয়েছিলেন, ‘জি না হো, তো স্টাইল মে জি না।’ আর আপনার এই বায়োপিক, থুড়ি অলিখিত বায়োপিকে আপনার সেই স্টাইলটাই গরহাজির। কোনও অদক্ষ, অমনোযোগী রাঁধুনির হাতে বানানো সেই ডিমের পোচের মতো, যার কুসুম ছেতরে গিয়েছে। এই আজহার অন্তত আপনি নন মিস্টার আজহারউদ্দিন। ভাল থাকবেন।
ইতি—
আপনার এক ভক্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy