‘বালা’ ছবিতে আয়ুষ্মান খুরানা
যৌবন বহিয়া যায় চুলের লাগিয়া... এক কথায় বালকুমুদ শুক্ল ওরফে বালার (আয়ুষ্মান খুরানা) জীবনসঙ্কট গাঁথা এই এক বাক্যে। কিশোর বয়সে একমাথা চুলে বাজিমাত করতে অভ্যস্ত বালার জীবনে বিপদ ডেকে আনে ডায়াবিটিস ও তার সঙ্গে জড়িত চুল পড়া।
ফর্সা হওয়ার ক্রিম প্রস্তুতকারক সংস্থায় সেলসম্যানের চাকরিতেও হেনস্থা হতে হয় স্বল্পকেশ বালাকে। ছেড়ে যায় বাল্যপ্রেম। কানপুরের মতো ছোট শহরে হাসির খোরাক হওয়া থেকে বাঁচতে চুল উদ্ধারে বালা প্রায় প্রতিদিন একটা অভিযানে নামে। কোনওটাই কাজে দেয় না। ২৫-এর তরুণ সর্বত্র গোত্তা খায় বুড়োটে দেখতে বলে। শেষমেশ জোড়াতালি— পরচুলায় ভর করে তার জীবন সুখের ভেলায় ভাসে। কিন্তু তা-ও অনিত্য। নাটকীয় ভাবে সত্য উন্মোচন হতেই ‘টেকো’ বালাকে ছেড়ে যায় সদ্য বিবাহিত স্ত্রী পরি মিশ্র (ইয়ামি গৌতম)।
গল্পটা এই। পরিচালক অমর কৌশিক হরর-কমেডি ‘স্ত্রী’ দিয়ে শুরু করে ‘বালা’তেও সংলাপে সূক্ষ্ম রাজনীতির বুনট, আবহসঙ্গীত, বিশেষ আবহ-কণ্ঠ (বিজয় রাজ) আর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে ধরে রাখলেন সেই ক্ষুরধার ব্যঙ্গের মেজাজ। সঙ্গে আত্মোপলব্ধির বার্তাও।
পরিচালনা: অমর কৌশিক
অভিনয়: আয়ুষ্মান, ভূমি, ইয়ামি, সীমা, সৌরভ
৭.৫/১০
এ সমাজে ছোটবেলায় শেখানো হয়, কানাকে কানা বলিয়ো না। কিন্তু এ প্রশ্ন তুলতে শেখানো হয় না, যে বললেই বা কী? তাতে সে ছোট হবে কেন? তার সম্মান কি এত ঠুনকো যে, বহিরঙ্গের পরিচয়ই সব? আশপাশে কেউ ‘স্বাভাবিক’ ক্যাটিগরিতে না পড়লে কালো-বেঁটে-মোটা-রোগা-টেকো বলে তাকে বোঝাতে হবে, হ্যাঁ ভাই তুই আমাদের মতো নয়, তুই খোরাকের পাত্র? নিজের মুখ দেখতে ভয় পায় বলে আয়না অর্ধেক ঢেকে রাখা বালা, সে সত্যিটা বোঝে একেবারে শেষে। বোধ জাগায় কালো মেয়ে, পেশায় আইনজীবী লতিকা ত্রিবেদী (ভূমি পেডনেকর)। লতিকাও কালো বলে ছোট থেকে উপহাসের পাত্রী। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য। যে পরিচালক শরীরের খুঁতকে ব্যঙ্গ করার বিরুদ্ধে বার্তা দিচ্ছেন, তিনি হঠাৎ ফর্সা ভূমিকে কালো মেকআপে না সাজিয়ে শ্যামবর্ণের কাউকে নিতেই পারতেন। চরিত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা একটু হলেও বাড়ত।
ফেরা যাক ছবিতে। বালা স্ট্যান্ড আপ কমেডিতে যে দড়, দেখিয়েছেন পরিচালক। সেটাই শেষে বালার অস্ত্র। ‘মাথায় স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ চালানো বালা মুখ না লুকিয়ে তুখড় সংলাপে বুঝিয়ে দেয়, টাক নিয়ে বেঁচে থাকায় কোনও লজ্জা নেই।
এই থিমে কিছু দিন আগেই এসেছে ‘উজড়া চমন’, আসছে একটি বাংলা ছবিও। বালা চরিত্রটা আলাদা তার কানপুরি হিন্দি-ইংরেজি উচ্চারণে, বলিউড অভিনেতার নকলে আর আয়ুষ্মানের অভিনয় দক্ষতায়। যোগ্য সঙ্গতে পাশে ছিলেন সৌরভ শুক্ল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সীমা পহওয়া এবং জাভেদ জাফরি। পরির চরিত্রে ইয়ামি সোজাসাপ্টা। বাইরের চেহারার ভরসায় সে বাঁচে, এটা বলতে দ্বিধা নেই। তবে ছবির প্রথম দিকে যতটা শানানো বিদ্রুপ, শেষটা জ্ঞানগর্ভ করতে গিয়ে আর সে ধার রইল না। তবে দিলখোলা হাসি ও বিনোদনের রেশ থেকে যাবে শেষেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy