নিজের জন্মদিন ভুলে যান ঋত্বিক!
নয় নয় করে কুড়ি বছর হয়ে গেল আমরা একসঙ্গে। বন্ধুত্ব, প্রেম, বিয়ে, সংসার সব মিলিয়ে। আমরা দু’জনেই ভীষণ ঘরোয়া। যে কোনও বিশেষ দিন মানে আমাদের কাছে এক্কেবারে নির্ভেজাল, নিজেদের মতো করে, নিজেদের সঙ্গে কাটানো একটা সময়। আসলে আমি বা ঋত্বিক দু’জনেই বিশ্বাস করি, দেখা হওয়ার পর থেকে প্রত্যেকটা দিনই আমাদের কাছে এক একটা উদযাপন। তার মধ্যে জীবনের এই বিশেষ দিনগুলো একটু আলাদা, এই যা।
আসলে দিনটা একসঙ্গে কাটানোটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেটা এ বার হয়ে উঠল না। কারণ ঋত্বিক আউটডোরে, বর্ধমানে। ও যে দিন বাড়ি ফিরবে, সে দিনই জন্মদিন। মনের মতো কিছু একটা রান্না করব। একটা কেক কাটা হবে। মনের মতো উপহার। ব্যস! পান্ত, মানে আমাদের ছেলে ওকে কার্ড কিংবা নিজের হাতে আঁকা চার-পাঁচ পাতার কমিকস স্ট্রিপ তৈরি করে দেবে। সেটাই আমাদের উদযাপন। নিজেদের মতো। পান্ত আজকাল নিজের কিংবা অন্যা কারও জন্মদিন নিয়ে সাংঘাতিক উত্তেজিত হয়ে যায়। দারুণ মজা করে, সবেতে অংশ নেয়। আমার কিংবা ঋত্বিকের জন্মদিনটা শেষমেশ ওরই জন্মদিন হয়ে দাঁড়ায়! খুব মন দিয়ে টিনটিনের কমিকস আঁকে। তার গল্পটা কিন্তু হার্জের নয়, ওর নিজের লেখা! চার-পাঁচ পাতার মধ্যেই রহস্য এবং তার সমাধান— মানে ওই যত ক্ষণ ধৈর্যে কুলোয় আর কী! এ বার তাই মনখারাপ। জন্মদিনে বাবা বাড়ি নেই যে! অপেক্ষা করে আছে, কবে বাবা বাড়ি ফিরবে আর কিছু একটা আনন্দ করা হবে!
ঋত্বিক নিজে কিন্তু বড্ড ভুলো! নিজের জন্মদিনটাই ভুলে যায় বেমালুম। অন্যদের জন্মদিন তো কথাই নেই! ভুলে যায় বলেই ওকে সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দেওয়া ভীষণ সহজ! ইদানীং অবশ্য একটু-আধটু খেয়াল রাখে ইন্টারনেটের কল্যাণে। সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্রে শুভেচ্ছাবার্তা এসে পড়ে। তবু ভুলে যাওয়ার স্বভাবটা যে বিশেষ পাল্টেছে, এমন নয়!
তবে নিজে মা হওয়ার পর থেকে একটা জিনিস উপলব্ধি করি। জন্মদিনটা আসলে শুধু সন্তানের নয়। সে দিনটা মায়েরও। তিনিই তাঁকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন। এক জন নারীর মা হিসেবে জন্মও তো সেই দিনেই। তাই জন্মদিনটাও একাধারে দু’জনেরই হওয়া উচিত। ঋত্বিকের মাকে দেখেছি, কী অসম্ভব যত্ন করে দুর্দান্ত একটা পায়েস বানাতেন এই দিনটায়। সেটাই ছিল তাঁর উদযাপন। দু’দিন আগে থেকে শুরু হয়ে যেত, ‘মিছরি আনতে হবে, বাতাসা আনতে হবে’! আমরা খেপাতাম, চাল-চিনি দিয়েই তো পায়েস হতে পারে। এ সব কী হবে? উনি বলতেন, না হবে না, ওগুলো চাই। তার পরে তো এক্কেবারে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পড়ে অন্য সব রান্নার আগে পায়েস তৈরি হত। কারণ, মা বলতেন, অন্য রান্নার স্বাদ-গন্ধ নাকি উড়ে উড়ে পায়েসে গিয়ে পড়বে। তাতে পায়েস ভাল হবে না! আর সত্যিই! যে পায়েসটা হত, তার স্বাদের কোনও তুলনা নেই।
মা নেই আর। সেই পায়েসও নেই। আমি পায়েস বানাই। কিন্তু ওই স্বাদ, ওই যত্ন আমি কোনও দিনও ফিরিয়ে দিতে পারব না। মা-ছেলের সেই উদযাপনটা শেষ হয়ে গিয়েছে বরাবরের মতো। ঋত্বিকের জন্মদিনে মায়ের হাতের ওই পায়েস, মায়ের ভালবাসায় মোড়া ওই উদযাপনগুলো বড্ড মনে পড়ে আজকাল। কোভিড এখন তো জীবনটাকেই অনিশ্চিত করে ফেলেছে। কে কত দিন বাঁচবে, তা বলার জায়গাটাই নেই আর। তবু তার মধ্যেই চাই এই ছোট্ট ছোট্ট উদযাপনগুলো বেঁচে থাক আমাদের জীবনে। আমাদের এই নিজস্ব উদযাপনের দিনগুলো যেন আরও পঞ্চাশ বছর অন্তত একসঙ্গে কাটাতে পারি। নিজেদের মতো করে। নিজেদের সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy