দেব আসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিটিং সেরে।
প্রসেনজিৎ আসবেন ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়ো থেকে ‘মহানায়ক’ টিভি সিরিয়ালের শ্যুটিং সামলে।
ঋতুপর্ণা আসবেন ফোটোশ্যুট থেকে।
‘জুলফিকার’-এর ডাবিং ফেরত আসবেন সৃজিত-যিশু।
—এ ভাবে শত ব্যস্ততার মাঝেও ‘নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে’ নিয়ে তারকারা ১১ মার্চে কী ভাবে রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবের সান্ধ্য আসরে যোগ দেবেন, তার প্রস্তুতি নিতে আরম্ভ করে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই।
অনেকে আবার পুরো দিনটাই ফাঁকা রেখেছেন ক্যুইজের জন্য।
ধারাবাহিকে ‘উত্তমকুমার’ চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রসেনজিৎ। তাই কৌতূহল বশতই জানতে চাইলাম, ‘বায়োস্কোপের...’ সন্ধ্যায় উত্তম-লুক থাকবে কি? প্রসেনজিৎ হেসে বললেন, ‘‘দেখি। সারপ্রাইজ থাক। তবে গরম পড়ে গেছে... আশা করি ইন্ডিয়ান লুকেই থাকব।’’
ও দিকে সাংসদ-নায়ক দেব। তাঁর সাজেই বা থাকবে কী চমক? দেব মজা করে জানালেন—‘‘বর্ন হ্যান্ডসাম আমি... যা পরব তা-ই ভাল লাগবে... কুল অ্যান্ড ক্যাজুয়াল পরব নিশ্চয়ই।’’
এ বছর দেবের পার্টনার আবার শুভশ্রী। রসায়ন-রসায়ন গন্ধ আছে জুটিতে! জানতে চেয়েছিলাম গতবার তো প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। এ বার আপনি-শুভশ্রী।
জেতার চাপ অনুভব করছেন? ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার জন্য কোনও ‘চ্যালেঞ্জ’? দেব বললেন ‘‘কুল... কোনও চ্যালেঞ্জ নেই।’’
অন্য দিকে কী ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন শুভশ্রী?
‘‘পুরো দিনটা ফাঁকা রেখেছি। তবে কী পরব এখনও ডিসাইড করিনি। আপাতত প্যাস্টেল শেডে রয়েছি আমি। গাউনও পরতে পারি, মায়ের শাড়িও পরতে পারি।’’
ও দিকে সুপারব্যস্ত ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। প্রথমে ‘তিনাঙ্ক’ ছবির ডাবিং ...তার পর ফোটোশুট। তার পর বাড়ি ফিরে চেঞ্জ করে ক্যুইজে।
আসতে দেরি হয়ে যাবে না তো? দেখো ভগবান!
প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা ছিলেন গতবারের চ্যাম্পিয়ন। এ বার ঋতুপর্ণার সঙ্গে রয়েছেন বাংলাদেশি নায়িকা জয়া এহসান। এই প্রথম বার বাংলাদেশের কোনও নায়িকা থাকছেন মঞ্চে।
অন্যদিকে প্রসেনজিতের ভূমিকাও এ বছর এক্কেবারে আলাদা। এই প্রথম বার তিনি ম্যাচ রেফারি!
‘‘স্টেজে বসে এত দিন কত ঝগড়া করেছি...এ বার অন্যদের ঝগড়াঝাঁটি মেটাব...’’ বললেন প্রসেনজিৎ। সিংহাসনে বসে দূর থেকেই কন্ট্রোল করতে চলেছেন খেলার আসর।
কণ্ঠস্বরে উদ্বেগ নেই। যদিও বললেন, ‘‘দায়িত্ব বেড়ে গেল। ঝগড়া মেটাব তো বটেই, আর সহজ প্রশ্নের ঠিক উত্তর দিতে না পরলে বকাঝকাও করব... সে অধিকার আমার আছে।’’
ভাল কথা, স্টেজে অন্যান্যদের মতো ঋতুপর্ণাকেও তিনি বকা-ঝকা করেন কিনা, সেটা আমরা ঠিক লক্ষ রাখব... সে প্রসঙ্গ পরে।
আপাতত বলি, বাকিরা কে কোন কাজ পেন্ডিং রেখে কী ভাবে চলে আসতে চলেছেন আসরে—
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের শুটিং আছে। আসবেন সেখান থেকেই। প্রায় প্রতিবারই ক্যুইজে অংশ নেন পরম। ভালই ট্র্যাক রেকর্ড। এ বার তাঁর জুটি পাওলি। পাওলি আবার আসবেন ‘মহানায়ক’-এর শুটিং থেকে। সুচিত্রা সেনের চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। বললেন, ‘‘ক’দিন আগে বাংলাদেশ থেকে কয়েকটা ঢাকাই শাড়ি এনেছি। পরতে পারি। একটা জাম্পসুটও আছে। দেখি, শেষ মুহূর্তে কী হয়।’’
আচ্ছা পোশাকের ব্যাপারে কি শুভশ্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন দেব? রসায়ন জমানোর জন্য কি পোশাকের রঙে কোনও মিল রাখবেন?
উত্তরে দেব হেসে বললেন, ‘‘নায়িকাদের সঙ্গে কোঅর্ডিনেট করে নাকি কেউ! শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওরা প্ল্যান পাল্টায়! কী করবে, কখন করবে কোনও ঠিক নেই...’’
—এ ভাবেই ‘বায়োস্কোপে বাজিমাত’-এর জন্য ঘরে–বাইরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারকারা। কেউ কাজ থেকে সময় বার করে পৌঁছবেন, তো কেউ পুরো দিনই ব্লক করে দিয়েছেন।
নায়িকা শুভশ্রীর মতো নায়ক আবীর বা গায়ক অনিন্দ্যও যেমন। পুরো দিনটাই ফাঁকা রেখেছেন। রূপম ইসলাম বাতিল করেছেন তাঁর কনসার্ট। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও কৌশিক সেনও কোনও কাজ রাখেননি।
কাজ রাখেননি অবশ্য নায়িকা জয়া এহসানও। ও দিকে যিশু ও সৃজিতও আসবেন ‘জুলফিকার’-এর ডাবিং থেকে। ওদের মধ্যে যিশু, জিনস-টি-শার্টে থাকলেও, সৃজিত বললেন, ‘গরম পড়ে গেছে। বসন্ত চলে গেছে। পাঞ্জাবিই পরব।’’
সকলের সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যাপার পরিষ্কার বোঝা গেল, সাজগোজের চেয়েও তারকারা বেশি উদ্বিগ্ন কী রকম প্রশ্ন ধেয়ে আসবে তাই নিয়ে।
এ প্রসঙ্গে সব চেয়ে মজা করলেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম সিক্স পকেটস প্যান্টস পরব... টুকলিগুলো সব ভরে নেব পকেটে। এখন ভাবছি এত ভাস্ট সিলেবাস... পার্টনারের ওপরেই বডি ছেড়ে দেব। তার পরেও না পারলে শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠান ভন্ডুলের দিকে এগোবো।’’
ভাবা যায়! আবীর-যিশু জুটি। দুই ব্যোমকেশ। আবার ফেলুদা-ব্যোমকেশ। কোথায় একটু আড়ি-আড়ি ব্যাপার থাকবে, তা নয়, দু’জনে মিলে ভন্ডুলের দিকে যাবে?
গায়ক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় অবশ্য টেনশন খেতে খেতে ‘উদাসীন মোডে’ চলে গেছেন। বললেন, ‘‘প্রথম বার অংশ নিচ্ছি। উত্তর দিতে না পারলে গানও গেয়ে দিতে পারি!’’
নায়িকা মিমি তো উৎসুক হয়ে জানতে চাইলেন, ‘‘আমার পার্টনার কি শেষ পর্যন্ত কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ই থাকছেন?’’
‘হ্যাঁ’ শুনে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। বললেন, ‘‘পুরো বডি ছেড়ে দেব কৌশিকদার ওপরে।’’
ঠিক একই ভাবে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন সৃজিতের উপরে হাল ছেড়ে নিশ্চিন্তে থাকতে চান রূপম ইসলাম।
আর পোশাক?
বললেন, ‘‘সবাই আমাকে যেমন ভাবে চেনেন সেরকমই পোশাক পরব। কালো রঙের কিছু একটা।’’
অন্য দিকে সৃজিত বললেন, ‘‘ক্যুইজ মাস্টার হওয়ার জন্য অ্যাপ্লাই করেছিলাম। প্রতিযোগিতার চাপ নিতে চাইনি। কিন্তু না-মঞ্জুর হয়ে গেছে।’’
বোঝা গেল, পোশাক-আশাকের ব্যাপারে নায়িকারা যতটা খুঁতখুঁতে ততটা নন পুরুষরা।
ঋতুপর্ণা ও মিমি যেমন। ঋতুপর্ণা বললেন ‘‘অনেকবারই কালো রং পরেছি ...গতবার সাদা-সবুজের কম্বিনেশনে শাড়ি পরেছিলাম। এ বার দেখি একটু এক্সপেরিমেন্ট করব। ফিউশন কিছু পরতে পারি।’’
মিমি বললেন, ‘‘ডিজাইনার কিছু নিশ্চয়ই পরব। এখনও ঠিক করিনি।’’
এক দিকে পোশাকআশাক অন্য দিকে প্রশ্নবাণ— দ্বিমুখী নজর সামলাতে গিয়ে বেশির ভাগই দেখা যাচ্ছে প্রশ্ন নিয়ে বেশি ভাবিত।
কৌশিক সেন যেমন বলেই ফেললেন, ‘‘লোকে যতই গুরুগম্ভীর ভাবুক আমাকে...মঞ্চে বসে প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমি ঘাবড়েই যাই। বরং আমার স্ত্রী রেশমি অনেক দড়। অনেক টিভি শো-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ভাবছি দর্শকাসনের সামনের দিকে ওকে বসিয়ে চোখে চোখে যদি ষড়যন্ত্র করা যায়!’’
ভাবুন এক বার পরিস্থিতি!
উপস্থাপক মীর তো আরও আক্রমণাত্মক। বললেন, ‘‘বায়োস্কোপে বাজিমাত মানে মাথায় হাত। খোঁচা মারা ফোন শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন জানার জন্য এত বেশি ফোন আসছে যে, মনে হচ্ছে জেড প্লাস সিকিওরিটি নেব।’’
যদিও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এই সব কিছু থেকে সম্পূর্ণ অন্য মুডে। বললেন, ‘‘পোশাক-প্রশ্ন ও সব নিয়ে আমি চিন্তিত নই। বাড়ির ডিভিডি কালেকশনের দিকে এক বার চোখ বুলিয়ে নেব। আমি বরং তাকিয়ে আছি অনুষ্ঠান শেষের পার্টিটার দিকে। যেখানে কান পাতলে অপর্ণা সেনের গানও শোনা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy