অভিজিৎ।
কেমন দেখছেন কলকাতাকে?
গোটা পৃথিবীকে যেমন দেখছি তেমনই। মনে হচ্ছে শহরগুলো যেন এক অদ্ভুত দৌড়ে নেমেছে। সংক্রমণে কে আগে?
মুম্বইয়ের অবস্থা তো আরও খারাপ...
হ্যাঁ, সংক্রমণ বেশি। যাদের করোনা হয়েছে তাঁরাও কোয়রান্টিনে। আর যাঁদের হয়নি তাঁদের অবস্থাও এক। কেমন একটা ডিপ্রেশনের মধ্যে চলে যাচ্ছিল সবাই। তাও তো আমি লকডাউনের নিয়ম শিথিল হলেই মুম্বইয়ে কাছেই আমার ফার্ম হাউজে চলে যেতাম। কত পাখি ওখানে...
আপনার ছেলের তো করোনা হয়েছে
হ্যাঁ, এখানে আসার বেশ কয়েক দিন পরে জানতে পারি। ধ্রুব বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। নিয়ম মাফিক করোনা টেস্ট করতে হয় সেক্ষেত্রে। তাতেই ধরা পড়ে। তবে ও উপসর্গহীন। বাড়িতেই রয়েছে।
তার মানে তো নিয়ম অনুযায়ী আপনারও কোয়রান্টিন থাকার কথা
(উত্তেজিত হয়ে) অনেকেই এমনটা বলছেন। আমি কলকাতায় রয়েছি অনেক দিন হয়ে গিয়েছে। আসার পর কোয়রান্টিনেই ছিলাম আমি। আমার ছেলের করোনা ধরা পড়েছে তিন দিন আগে। আর তা ছাড়া ‘সুপার সিঙ্গার’-এর শুট শুরু হওয়ার আগে আমাদের সবার টেস্টও হয়েছে। তা হলে এখন আমার কোয়রান্টিন থাকার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?
হঠাৎ রিয়্যালিটি শো-র বিচারক হওয়ার অফারটা নিলেন কেন?
এত দিন নিইনি কেন, এখন সেটাই ভাবছি। টিভি-রেডিয়ো খুললে যে সব গান বাজে, কান-মাথা নষ্ট হয়ে যায়। ওগুলো গান? রিয়্যালিটি শো-ই একমাত্র ভারতীয় সঙ্গীতের ধারাটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বিচারকের আসনে
সাময়িক খ্যাতি-নাম, রিয়্যালিটি শো থেকে প্রতি বছর বেরিয়ে আসা প্রতিযোগীদের বেশিরভাগই তো হারিয়ে…
(প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়ে) আপনি কি জোর গলায় বলতে পারে্ পাশ করে বেরিয়েই আপনি চাকরি পেয়ে যাবেন? যে সমস্ত সিঙ্গার এটা ভেবে আসবেন যে এই শো থেকে বেরিয়েই আমার অনেক নাম হবে, অনেক কাজ পাব আমি, আমি বলব সেটা ঠিক নয়। এটা কোয়ালিফিকেশন লিস্টে একটা এক্সট্রা পালক। যেখান থেকে অনেকটা শিখে প্রতিযোগীরা বাইরে বেরবে।
একটু আগে বললেন, এখনকার গানে কান-মাথা নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু মানুষ তো এসবই শুনছে।
হ্যাঁ। কারণ তাঁরা ইলিশ আর স্যামন মাছের ফারাকটাই করতে শেখে্ননি। তাঁদের কাছে কোনও চয়েজ নেই। একটা গান তৈরি হল, পাবলিককের কাছে দিয়ে বলা হল, তাঁকে এটাই শুনতে হবে। যে মানুষটা জীবনে কোনও দিন রাজভোগ, ল্যাংচার স্বাদ পায়নি, সে কী করে ভাল-মন্দের ফারাক করবে বলুন তো? সে তো জানে এটাই ভাল। এটাই খেতে হবে।
সোনু নিগম কিছু দিন আগেই মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির 'মাফিয়া'দের নিয়ে সরব হয়েছেন...আপনি কী বলবেন?
পঁচিশ বছর ধরে এই নিয়ে বলে এসেছি আমি। তখন অনেকেই বলেছে অভিজিৎ তো ধর্ম নিয়ে কথা বলছে। আমার বক্তব্য ছিল, আমাদের দেশের গায়কদের দিয়ে বলিউডে গান গাওয়াতে হবে। আজ যখন সবাই দক্ষিণের শিল্পী, বাংলার শিল্পী বলে বিভাজন করে, সেটা দোষের নয়? আজকে যাঁরা এই নিয়ে কথা বলছেন, তাঁরা আগে কেন বলেননি? সেই সময় আমি একদম টপে। তখনও আমি আর জগজিৎ সিংহ এই নিয়ে কথা বলেছিলাম।
(একটু থেমে) আমায় কেউ চাইলেও বিয়েবাড়িতে গাওয়াতে পারবে না। আমি আমার শিল্পকে, আমার কাজকে খুব সম্মান করি। আত্মসম্মান আমার কাছে সবচেয়ে বড়।
তার মানে আপনি বলতে চাইছেন ‘মিউজিক মাফিয়া’ রাজ রয়েছে?
এর সবচেয়ে বড় ভিক্টিম কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকর, রফিজি, মুকেশ সহ সব ভারতীয় শিল্পীই। বিভিন্ন মিউজিক কোম্পানি রয়েছে যারা সিঙ্গারকে প্রাপ্য টাকা দেয় না। রয়্যালটি দেয়া না। উপরন্তু ইচ্ছে করে গান পাইরেসি করে লাভের অঙ্ক ঘরে তোলে। নতুন গায়কদের সঙ্গেও এমনটা হচ্ছে। ওদের দিয়ে গান গাইয়ে নিল। পয়সা তো দিলই না। বরং যে লাভটা হল পুরোটাই ওদের পকেটে। নাম বলছি না, আজকে যাদের বলিউডের নাম্বার ওয়ান গায়ক বলা হয়, আপনার কী মনে হয় এদের অনেক পয়সা? মাসের শেষে ইএমআই দেওয়ার অবস্থা থাকে না। মিউজিক কোম্পানি একটা গাড়ি কি একটা ঘড়ি গিফট করে দিল, এরা তাতেই খুশি।
তা সত্ত্বেও এঁরা গান গাইছেন কেন?
ওই যে নাম হচ্ছে, লোকে চিনছে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে সব... এরা তাতেই খুশি। তবে এতে আমার একটা লাভ হয়েছে।
কী রকম?
আমাদের জেনারেশনের গান মানুষ আবার শুনতে চাইছেন। রেডিয়ো, টিভি খুললেই দেখতে পারবেন সেটা।
তবে লাইভ কনসার্টের তো এখন চাহিদা বেড়েছে, সেখান থেকেও একটা মোটা টাকা পান নিউ এজ সিঙ্গাররা।
(হেসে) একটা পেপসি কিনুন। দুটো টিকিট পাবেন। এই করেই তো চলছে। তবে আমাদের জেনারেশনের শিল্পীদের কনসার্ট কিন্তু এখনও হাউজফুল হয় এত সব 'অফারের' ব্যবস্থা না করেই। দিন কয়েক আগে আমার গানের একটা রিমেক শুনলাম। ওটা গান না কী, অন্য কিছু বুঝতেই পারলাম না। অদ্ভুত ভাবে গেয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আরও বেশ কিছু গান হয়তো গাইতে পারতাম। কিন্তু যা যা গেয়েছি তার লিস্টও অনেক বড়। আমি তাতেই খুশি।
'সুপার সিঙ্গার'-এর বিচারকের আসনে অভিজিৎ ছাড়াও রয়েছেন শান, লোপামুদ্রা এবং রূপঙ্কর
'সুপার সিঙ্গার'-এ এক ঝাঁক নতুন ছেলেমেয়ে। ওদের থেকে কী প্রত্যাশা?
সবাই ভীষণ ভাল। এক এক জন এক এক রকম। আর অসম্ভব চেষ্টা প্রত্যেকের। প্রথম যখন ওরা আমায় অফারটা দিল একটু দোটানায় ছিলাম। মুম্বই থেকে কলকাতায় গিয়ে শো-টা করব কী না।... এখন মনে হচ্ছে, না এলে মিস করতাম। দর্শকদেরও বলব, দেখুন। ওরা এক ঝাঁক মুক্ত হাওয়া।
একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি, কী মনে হচ্ছে আপনার বাড়ির বিখ্যাত দুর্গাপুজোটা এ বারে করতে পারবেন?
(দীর্ঘশ্বাস) মনে হচ্ছে না পারমিশন পাব বলে। এ বার আমাদের ২৫ বছর পূর্তি ছিল। সব প্ল্যান করে রেখেছিলাম।
বাংলায় কিন্তু সরকারি নানা নিয়মবিধি মেনে পুজোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
হতে পারে, কিন্তু ওই মাত্র কয়েক জন মিলে ঢুকবে, বাকি লোক আসতে পারবে না... এটা আমার বড্ড খারাপ লাগবে। আরে পুজো হবে, ভোগ হবে, অঞ্জলি হবে... তবেই না। কী জানি, দেখা যাক। মায়ের ইচ্ছে... মা যা হওয়াবেন...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy