Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Ambarish Bhattacharya

Narayan Debnath: স্কুল থেকে কলেজ পৌঁছে গেলাম, নারায়ণ দেবনাথ ‘বটতলার লেখক’ হয়েই রইলেন: অম্বরীশ

কার্টুনিস্টকে দেখে শ্যামবাজারের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেটা জীবনের দেনা-পাওনার হিসেব ছেড়েছে।

অম্বরীশ ভট্টাচার্যের কলমে নারায়ণ দেবনাথ।

অম্বরীশ ভট্টাচার্যের কলমে নারায়ণ দেবনাথ।

অম্বরীশ ভট্টাচার্য
অম্বরীশ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:৫৯
Share: Save:

এত কষ্ট পাচ্ছি কেন? মনে হচ্ছে, যেন নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় চলে গেলেন!


কারণ আছে। সেই কারণ অনেক ছোটবেলার। হ্যাঁ, নারায়ণ দেবনাথ বাকি অনেকের ছেলেবেলার মতো আমার ছেলেবেলাও দখল করেছিলেন। মা-বাবার সঙ্গে বরাবর শ্যামবাজারের বাসিন্দা। ওখানকারই এক স্কুলে পড়ি। ফেরার পথে মায়ের কাছে রোজের বায়না, ‘হাঁদা-ভোঁদা’, ‘বাটুল দি গ্রেট’ নয়তো ‘নন্টে-ফন্টে’ কিনে দিতে হবে। মা কিনে দিতেন। তখনও আমি নিজে নিজে পড়তে শিখিনি। মাকেই তাই বই পড়ে শোনাতে হত।

একটু একটু করে বড় হলাম। তখন নিজে পড়তে পারি। ফলে, কমিকসের বইগুলো আর কাউকে পড়ে দিতে হত না। ও গুলো রোজ পড়তাম আর নিজের মনে এক একটি চরিত্র হয়ে উঠতাম। আয়নার সামনে কোনও দিন আমি বাঁটুল। কোনও দিন কেল্টুদা। কোনও দিন হয়তো সুপারিনটেনডেন্ট স্যর সাজতাম। মুখে নারায়ণ দেবনাথের লেখা সংলাপ। ওঁর লেখায় ভীষণ নাটকীয়তা। সব মিলিয়ে জমে যেত। সেই বয়সেই অভিনয়ে আসার প্রবল ঝোঁক। আমার মনের সেই ইচ্ছের বীজ কিন্তু বুনে দিয়েছিলেন বাংলার ভীষণ আদরের কার্টুনিস্ট! টিনটিন, ক্যাপ্টেন হ্যাডক বা বিদেশি কোনও কৌতুক চরিত্র নয়!

তার পর স্কুল টপকে কলেজে পা রাখলাম। নারায়ণ দেবনাথ অদ্ভুত ভাবে ‘বটতলার লেখক’ হয়েই রয়ে গেলেন! ওঁর বই কলেজ স্ট্রিটের কোনও বড় বইয়ের দোকানের শোভা বাড়ায় না! যে ভাবে বাড়ান শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বা অন্যান্য সাহিত্যিক-লেখকেরা। ওঁর বই ফুটপাথের দোকানে আজও ঢেলে বিক্রি হয়। ওঁর রাজপাট তাই ফুটপাথেই। তা বলে জনপ্রিয়তায় কিন্তু ছেদ পড়েনি। তখন আমি মঞ্চশিল্পীও। একটু আধটু ডাক পাচ্ছি। তবু মন বিক্ষিপ্ত। কারণ, যতটা ডাক পাচ্ছি তাতে আমি সন্তুষ্ট নই। মনে হত, আমার প্রতিভা যোগ্য মর্যাদা পাচ্ছে কই! এই অবস্থায় আমি মুখোমুখি নারায়ণ দেবনাথের।

আরও পড়ুন:

দেখেই সরাসরি জানতে চেয়েছিলাম, ‘‘জীবনে কোনও বড় পুরস্কার পেলেন না। বইয়ের দোকানে আপনার বই থাকে না। সম্প্রতি, কোনও প্রকাশনা সংস্থা বের করেছে আপনার আঁকা কমিকস সমগ্র। কষ্ট হয় না?’’ চেহারার মতো জবাবটাও কী শান্ত, সৌম্য! বললেন, ‘‘আমি তো কিছু পাব বলে করি না! তাই কী পেলাম আর পেলাম না, তার হিসাবও রাখি না।’’ তার পরেই আমার পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘‘এই যে তোমার মতো এত অল্পবয়সি এক যুবক দাঁড়িয়ে কথা বলছ। আমার বই পড়ছ। এ কী কম পাওয়া?’’


শ্যামবাজারের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেটা সে দিন থেকে জীবনের দেনা-পাওনার হিসেব ছেড়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Ambarish Bhattacharya Narayan Debnath Obituary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE