সর্বদা হাসিমুখ ছিল নারায়ণ দেবনাথের। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে নেওয়া।
আমার বাড়ি হাওড়ার হাটপুকুরে। আমিও নারায়ণ দেবনাথের মতো হাওড়া জেলারই বাসিন্দা। আমার বয়স যখন বছর ২০, তখন আমি আনন্দবাজারে লেখালিখি করছি। সেটা ১৯৬২ সাল। তখন ভারত-চিন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সেই সময় আমি এক বার ‘শুকতারা’র দফতরে যাই লেখা জমা দিতে। সেখানেই নারায়ণ দেবনাথের সঙ্গে আমার আলাপ।
তিনি যখন জানতে পারলেন আমিও ওঁর মতো হাওড়ারই ছেলে, তখন ওঁর সঙ্গে আমার আলাপ খুব জমে যায়। আমি সেই সময় রেলে কাজ করতাম। সেই সময় আমার পোস্টিং ছিল শালিমারে। তখন শিবপুর হয়ে শালিমার যেতাম আমি। সেই সূত্রে মাঝে মাঝেই ওঁর বাড়িতে যেতাম। আমরা অনেক সময় একসঙ্গে কাটিয়েছি। প্রচুর গল্প-আড্ডা হত আমাদের। তবে ইদানীং বয়সজনিত কারণে ওঁর বাড়িতে তেমন যাওয়া হত না।
ওঁর সঙ্গে যিনিই দেখা করতে যেতেন, তাঁদের প্রত্যেককে কার্টুন এঁকে উপহার দিতেন। নারায়ণ দেবনাথ এক বার আমার একটি উপন্যাসের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন। সেই আঁকা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। ওঁর মৃত্যুতে শিল্পজগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমার মনে হয়, পুরীর সমুদ্র সৈকতে যত বালি আছে তার চেয়েও বেশি কার্টুন নারায়ণ দেবনাথ সৃষ্টি করেছেন তাঁর জীবনে। সেই সব কার্টুন সরকারের উচিত সংগ্রহ করে রাখা। আমাদের সকলেরও উচিত, সেই সব সৃষ্টিকে রক্ষা করা। কারণ আর একজন নারায়ণ দেবনাথ জন্মাবেন না।
এই কোভিড পর্বের আগে পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একসঙ্গে গিয়েছি। সেখানে আমাদের দেখা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে নানা কথা হয়েছে। তবে কোভিড-কাল শুরু হওয়ার পর থেকে ওঁর সঙ্গে একেবারেই যোগাযোগ ছিল না। আজ সকালে আমি ওঁর চলে যাওয়ার খবর পেলাম। আমি শোকস্তব্ধ। পুরনো দিনের সেই সব ঘটনাগুলি এখন আমার চোখের সামনে ভিড় করেছে। কত হাসি, কত স্মৃতি। সব সময় ধোপদুরস্ত থাকতেন। খুব সুন্দর চেহারা ছিল ওঁর। আর মুখে সর্বদা হাসি লেগেই ছিল। সব সময় গিলে করা পাঞ্জাবি পরতেন। অত্যন্ত মিশুকে ব্যক্তি ছিলেন।
(লেখক 'পাণ্ডব গোয়েন্দা'-র স্রষ্টা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy