‘তবে তাই’ নাটকের এক দৃশ্যে অভিনেতা সত্যম ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত।
ঘড়িতে ৭টা বেজে ১০ মিনিট। দরদর করে ঘামছেন দর্শক। প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে ঝড় তুলেছে ২০টি মিস্ট ফ্যান। সেগুলির আওয়াজে পাশের জনের কথা শোনাও দুঃসাধ্য ব্যাপার। ইতিমধ্যেই পড়ল থার্ড বেল। পর্দা উঠল না যথা সময়ে। অভিনেতা সত্যম ভট্টাচার্য এসে দাঁড়ালেন মঞ্চের সামনে। তাঁর চোখেমুখে বিষাদ এবং উদ্বেগের ছাপ। হাতে মাইক নিয়ে বললেন, “এসি কাজ করছে না, আপনারা বুঝতেই পারছেন কী পরিস্থিতি। আমরা শো করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। যদি ফ্যানগুলো বন্ধ করা যায়, তা হলে সবাই শুনতে পাবেন আমাদের কথা। কিন্তু কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন, আমরা নাটক থামিয়ে দেব। পাখা চালিয়ে দেব আবার। বিরতিরও ব্যবস্থা করছি, যেটা ছিল না এই নাটকের মাঝে। বলুন আপনারা রাজি আছেন কি না।”
দর্শক আসনে প্রথম সারিতে বসে আছেন অভিনেতা সঞ্জীব সরকার থেকে শুরু করে পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা উৎসাহ দিলেন। কিন্তু কেউ কেউ বিদ্রোহ ঘোষণা করে বললেন, “ফ্যান অফ করলে মরে যাব। ফ্যান চলুক, আপনারা মাইক নিয়ে করুন।” এর পর কী হল, ইতিমধ্যেই চাউর হয়ে গিয়েছে সে খবর। ‘হিপোক্রিটস’ শেষ অবধি শো করতে পারেনি রবিবার। নাটক শুরু করেও আবার বন্ধ করে দিতে হয়। কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। শব্দগ্রহণের ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল, স্বীকার করে নিলেন দেবেশও। পরিচালক সুস্নাত ভট্টাচার্য, সত্যম এসে আবার ক্ষমা চেয়ে জানালেন তাঁরা শো বন্ধ করছেন। আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও এর চেয়ে বেশি কিছু করা গেল না। জানালেন, টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল, তাই শেষ মুহূর্তে দর্শককে জানানো যায়নি বাতানুকূল যন্ত্রের বিভ্রাটের কথা।
৪ জুন রবিবার ‘হিপোক্রিটস’ দলের প্রযোজনায় ‘তবে তাই’ নাটকটি মঞ্চস্থ করা গেল না। ঘেমে স্নান করে ফিরে গেলেন দর্শক। তাঁদের টিকিটের টাকা ফিরিয়ে দেবে দল। আর যাঁরা ‘তবে তাই’-এর পরের শো দেখতে চান, তাঁরা একই টিকিটে আসতে পারবেন আগামী ৯ জুলাই।
ছবিটি চেনা লাগতে পারে। নাটকের পীঠস্থান অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর বাতানুকূল যন্ত্র বিভ্রাটের কথাও সকলেই জানেন। এর আগে সেই খবর বিশদে তুলে ধরেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। প্রিটোরিয়া স্ট্রিটের জ্ঞানমঞ্চেও যে একই অবস্থা, তা জানা গেল রবিবার। সব মিলিয়ে দুঃখজনক এক সন্ধ্যার সাক্ষী হলেন শহরের নাট্যপ্রেমীরা। জ্ঞানমঞ্চের প্রেক্ষাগৃহের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নাকি বিকল হয়ে পড়েছিল শুক্রবারই। সে দিন একটি নাচের অনুষ্ঠান চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল শিশুরা। শোয়ের আগের দিন বেশ রাতে কর্তৃপক্ষ ফোন করে ‘হিপোক্রিটস’ দলের সদস্যদের বিষয়টা জানান। তখন তাঁরা তড়িঘড়ি ব্যবস্থা করেছিলেন মিস্ট ফ্যানের। তবে সেগুলি থেকে যে এমন আওয়াজ বার হবে, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না বলেই জানান দলের সদস্যরা।
এ বিষয়ে জ্ঞানমঞ্চের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, “ইঞ্জিনিয়ারদের জানানো হয়েছে। দুই থেকে তিন দিন কিংবা আরও বেশি লাগতে পারে এসি মেরামতের জন্য। খুলে দেখতে হবে ভিতরে হাইড্রোজেন দিতে হবে কি না! এ সব করতে যত দিন লাগবে, তার মধ্যে আর কোনও শো রাখা হবে না।”
শুধু ‘হিপোক্রিটস’ নয়, জ্ঞানমঞ্চের ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে শহরের নবীন এবং জনপ্রিয় নাট্যদলগুলিরও। ‘ফোর্থ বেল থিয়েটার্স’-এর অভিনেতা আত্মদীপ ঘোষ, রোমিত গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, তাঁদের শোয়ের সময়ও শব্দ প্রক্ষেপণে সমস্যা হয়েছে জ্ঞানমঞ্চে। ‘কলকাতা রমরমা’র পরিচালক কন্যকা ভট্টাচার্যও জানালেন জ্ঞানমঞ্চের পরিকাঠামো নিয়ে নানা সময়ে বেগ পেতে হয়েছে তাঁদেরও। প্রতিকার চান সবাই। সত্যমও রবিবার জোর দিয়ে বললেন দর্শক এবং শিল্পীদের সমবেত স্বর তোলার কথা। কেন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে থিয়েটারের পরিবেশ? উঠছে প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy