গা-ছমছম: আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে সেজেছে নন্দন প্রাঙ্গণ। রবিবার কলকাতায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
নির্দিষ্ট কোনও রাজনীতির ভাষ্য নয়। তবু সমসাময়িক কাশ্মীরের কথা বলে আইজাজ় খানের ‘হামিদ’।
‘‘দেশজোড়া রাজনীতির আবহে কিছুটা অন্য রকম বার্তা দিতেই শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে ওই ছবি বেছে নেওয়া হয়েছে,’’ বললেন উৎসব কমিটির অধিকর্ত্রী অর্পিতা ঘোষ। রবিবার সন্ধ্যায় নন্দন-১ প্রেক্ষাগৃহে নবম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে তখন অন্য বিশিষ্টদের সঙ্গে বসে ছবির পরিচালক আইজাজ় এবং তাঁর ‘হামিদ’ ছবিতে হামিদের চরিত্রাভিনেতা ও উৎসবের উদ্বোধক শিশু শিল্পী তলহা আরশাদ রেশি।
চলতি বছরের আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের থিম ‘হ্যালুইন্স হাউস’ বা ভুতুড়ে বাড়ি। সেই আবহ ফুটিয়ে তুলতে নন্দন-চত্বরকে সাজানো হয়েছে কঙ্কাল, কফিন আর হানাবাড়ির নানান উপকরণ দিয়ে। সঙ্গে হ্যালুইনের উৎকট চিৎকার আর ভুতুড়ে আলো। তার মধ্যেই এ দিন দেখানো হল কাশ্মীর-চিত্র ‘হামিদ’।
সাত বছরের খুদে হামিদ (অভিনয়ে তলহা) কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যেই এক দিন হারিয়ে ফেলে তার বাবা রহমত আলিকে। তার পরে ছবি জুড়ে নৌকা তৈরির কারিগর বাবার খোঁজ চলতে থাকে হামিদ এবং তার মায়ের। বন্ধুরা হামিদকে জানায়, তারা বাবা আল্লার কাছে চলে গিয়েছেন। বাবার অসমাপ্ত নৌকা যেন নিরাপত্তাহীনতার দোলাচলে ফেলে যায় পরিবারটিকে।
তার মধ্যেই স্বামীর খোঁজে পুলিশ চৌকিতে অপেক্ষায় দিন কাটে হামিদের মা ইশরতের। বাবার স্মৃতিতে ডুবে থাকা হামিদ এক দিন রহমতের যন্ত্রপাতির বাক্স খোলে। বাবার মতো হয়ে ওঠার চেষ্টায় নৌকা তৈরির কাজে লেগে পড়ে সে। পড়শিদের কাছে হামিদ জানতে পারে আল্লার ফোন নম্বর ৭৮৬। বাবার বাক্সে খুঁজে পাওয়া মোবাইল ফোনে সে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে আল্লার সঙ্গে। এ ভাবেই এক দিন ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে উত্তর আসতে শুরু করে। উত্তরদাতাকেই আল্লা বলে ভাবতে শুরু করে শিশু হামিদ। কাশ্মীরের নিরাপত্তায় মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানই সেই উত্তরদাতা। তাঁর সঙ্গেই কথোপকথন চলতে থাকে হামিদের। এ-সবের মধ্যেই সে একটু একটু করে চিনতে শেখে চার পাশকে। নিখোঁজ মানুষদের জন্য আয়োজিত ধর্নায় যান তার মা।
সাত বছরের শিশুর হাতে এসে পড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লিফলেট। কিন্তু সেই পথ মাড়ায় না হামিদ। অন্য প্রান্তে নিষ্পাপ শিশুর সব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না-পেরে অসহায় হয়ে পড়েন জওয়ান। এক দিন হামিদ আর তার মা জানতে পারেন, রহমত আর কোনও দিনই ফিরবেন না। বাবাকে কবর দেওয়ার সুযোগ না-পাওয়া শিশুটি তখন বাবার মোবাইল ফোন, কবিতা লেখার ডায়েরি আর ছবি মাটিতে পুঁতে দেয়। জওয়ান ফোন করে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেন না।
তত দিনে অসমাপ্ত নৌকার কাজ শেষ করেছে হামিদ। কোথা থেকে যেন বাড়িতে এসে পৌঁছয় বাবার পছন্দের লাল রঙের কৌটো। প্রেরক কি সেই জওয়ানই? সেই রঙে নৌকাটি রাঙিয়ে তোলে হামিদ। তার পরে ঝিলমের জলে মাকে নিয়ে দাঁড় বাইতে বাইতে এগোতে থাকে সে।
ছবির শিশু শিল্পী তলহা এবং পরিচালক আইজাজ় দু’জনেই জানান, কলকাতায় আসতে পেরে ভাল লাগছে। ছবি দেখানোর পরে তাঁদের খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেল, উৎসব প্রাঙ্গণ ছেড়ে কলকাতা দেখতে বেরিয়েছেন তাঁরা।
কাশ্মীরের হামিদ-কাহিনি দিয়ে সূচনা হল যে-চলচ্চিত্র উৎসবের, ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তাতে ১০টি প্রেক্ষাগৃহে আড়াইশো ছবি দেখানো হবে। তার মধ্যে ১৬টি ভূতের ছবি থাকবে বলে জানান অর্পিতাদেবী। এ দিন উদ্বোধনে ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক সন্দীপ রায়, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আমলা এবং শিশু কিশোর আকাদেমির সদস্যেরা। আমন্ত্রণপত্রে নাম থাকা সত্ত্বেও রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেন উদ্বোধনী পর্বে নির্ধারিত সময়ে হাজির হতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy