(বাঁ দিকে) পিয়াসি চট্টোপাধ্যায়, সাহেব চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে) । ছবি: সংগৃহীত।
কিছু দিন আগেও আনন্দে ছিলেন অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের মা। দু’মাসের নাতনিকে দেখতে পাওয়ার আনন্দ ছিল মনে। বোনের মেয়ে পিয়াসি চট্টোপাধ্যায়কে তিনিই যে মানুষ করেছিলেন। মেয়েকে নিয়ে কলকাতা এসেছিলেন সাহেবের বোন পিয়াসি। এই আসাই যেন কাল হল। মাত্র দু’দিনের জ্বর কেড়ে নিল প্রাণ। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ছিলেন। বাঁচানো গেল না। বুধবার ভোরের এই ঘটনা ভাবাচ্ছে গোটা শহরকে। এই শহরের বাসিন্দাদের ভবিষ্যৎ তা হলে কী? প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে।
কখনও ভ্যাপসা গরম, তো কখনও ঝমঝম করে বৃষ্টি। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে এমনিতেই নাজেহাল সাধারণ মানুষ। জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি লেগেই আছে। প্রচুর মানুষ হাসপাতালে ভর্তি। মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গিতে ইতিমধ্যেই প্রাণ গিয়েছে অনেকের। সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে। সাহেবের পরিবারের এই ঘটনায় আরও চিন্তা বাড়িয়েছে টলিউডের।
বোনের চিকিৎসার জন্য রক্ত দরকার বলে গত কাল মধ্যরাতে একটি পোস্টও করেন সাহেব। তার পর রাতারাতি যে এমন অঘটন হবে সে কথা বিশ্বাসই করতে পারছেন না অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত। তিনি বললেন, “আমি এই ঘটনার কথা জানতাম না। তবে ডেঙ্গি বা এমন অতিমারি চিন্তা তো বাড়াবেই। রোগের উৎসটা চিন্তার। এ ধরনের রোগ তো হবেই। এমন একটা নোংরা শহর। কোনও রক্ষণাবেক্ষণ নেই।’’ দেবলীনার আরও ক্ষোভ, ‘‘রাস্তাঘাটের কী খারাপ অবস্থা! বছরের পর বছর দেখে যাচ্ছি, যেখানে জল জমার সেই জমেই থাকছে। কোনও সুরাহা হচ্ছে না। এগুলোই তো অসুখের উৎস। সেগুলোকে ঠিক করার জন্য কোনও সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক অভিনেতার কথায়, “আমাদের শহরটা কার্যত ভাগাড়ে ভরে গিয়েছে। তাতেই মশার আঁতুড়ঘর। যা বিপদ বাড়াচ্ছে।” তবে অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য এবং সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে অবশ্য অন্য সুর।
অপরাজিতা বলেন, “আমি নিজে গত ১০ দিন ধরে খুব জ্বরে ভুগেছি। বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতা ছিল না। সেটা ডেঙ্গি হয়েছে না কি অন্য কিছু জানি না। তবে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, নিজেদের সচেতন হওয়া খুব প্রয়োজন। এখন কিন্তু শহর আগের থেকে অনেকটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আমাদের দায়িত্ব শহরকে নোংরা না করা।” সুদীপেরও একই কথা। তিনি বলেন, “আমার বাড়ির আশপাশে তো দেখি এখন ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়। ছোটবেলা থেকে তো এই শহরে মশা নিয়েই বড় হয়েছি। চিন্তা হয়, কিন্তু আমি বলব আমাদের নিজেদের একটু বেশি সচেতন হওয়া উচিত। মশারি ব্যবহার করা দরকার।”
উল্লেখ্য, ডেঙ্গি-সহ বিভিন্ন মশাবাহিত রোগের মোকাবিলায় এ বার যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে মোকাবিলার ঘোষণা করেছে কলকাতা পুরসভা। শিশু ও ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে মঙ্গলবার জারি করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশিকাও। এ প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, “শুধু এই সময়ই নয়, সারা বছরই এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমরা সজাগ থাকি। এ ক্ষেত্রে বিস্তর নজরদারি করছি। ওয়ার্ড ভিত্তিক, বোরো ভিত্তিক এবং কলকাতা পুরসভার প্রধান অফিস থেকে। যেমন আজ আমি বোরো ১৩-এ এসেছিলাম। সেখানে সাত কাউন্সিলর এবং আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে কী কী করা উচিত। তাঁরাও আমায় পরামর্শ দিয়েছে। এ ভাবেই এই পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছি আমরা।”
পুরসভার আরও দাবি, শহরের প্রতিটি স্কুল কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রতিনিয়ত ফুলের বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, জল জমতে না দেওয়া এবং কোনও ভাবেই যাতে মশার লার্ভা না-জন্মাতে পারে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এই নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy