—ফাইল চিত্র।
সব শো বন্ধ! তাই জটপড়া চুল, কালি-ঝুলি পোশাকে সেজে নিজের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন তিনি!
মঞ্চ-টিভি-বেতারের জনপ্রিয় সঞ্চালক-অভিনেতা ছড়া কেটে এ-ও লিখেছেন— আসন পেতে বসেছি রাস্তায়, কেউ কিছু দেয় যদি/ রুক্ষ চুল আমার এই হাল করেছেন শ্রীশ্রী মোদী।
মিরের আক্ষেপ যে নিছক রসিকতা নয়, নামী তারকা থেকে অখ্যাত সিঙ্গার-ড্যান্সারেরা মালুম পাচ্ছেন হাড়ে হাড়ে। প্যান্ডেল বাঁধার ছেলেপুলেরাও। গ্রামবাংলার শীতের পার্বণে যাঁদের আর এক নাম ‘মাচা’র সৈনিক। নোট-কাণ্ডের সৌজন্যে সকলের রোজগারে ঘোর ভাটার টান।
পাড়াগাঁয়ে শীতের আমেজের অন্যতম দোসর এই মাচা। মানে অস্থায়ী মঞ্চে নাচা-গানার আসর। একশো-দু’শো টাকার টিকিটে প্রসেনজিৎ-রচনা, জিৎ-শুভশ্রী, অঙ্কুশ-নুসরত, দেব-শ্রাবন্তীর দর্শনপ্রাপ্তি। প্রসেনজিতের কথায়, ‘‘টালিগঞ্জের স্টারেরা তো বিদেশে বেশি শো করেন না। মাচাই আমাদের কাছে ফরেন।’’
বস্তুত বহু টলি-তারকা ফিল্মে জীবনভর কাজ করে যা পান, তার সমান টাকা তুলে নেন মাচার দু’-তিন সিজনে। উঠতি তারকাদের ফ্ল্যাট-গাড়ির ইএমআই মেটাতে মাচা মস্ত ভরসা। মেহফিলের ‘ফিলার’ কণ্ঠী-গায়ক, নাচের একস্ট্রাদের সংসার খরচেরও জোগানদার এই ‘মাচা।’
এবং এ হেন আসরের সিংহভাগ লেনদেন চলে নগদে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা যাতে মোক্ষম চোট দিয়েছে। টলিউডি মাচার বাঘা উদ্যোক্তা অতনু সরকারের উত্তেজিত প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা কালো টাকা নয়। দেবের নাচা-গানার ফাঁকে যে ছেলেটা গান গেয়ে মাতিয়ে রাখে, তার প্রাপ্য ক’টা টাকা চেকে দিলে বাজার করবে কী করে?’’
অতএব, খড়্গপুরের আপ্যায়ন গোষ্ঠী, বাঁকুড়ার সংযোগ সম্প্রীতি বা দুর্গাপুর মিতালি সঙ্ঘ— সব পার্টিকে পই পই করে বোঝাচ্ছেন তিনি। দামি তারকাখচিত অনুষ্ঠান হোক বা অখ্যাত ‘কণ্ঠী’সর্বস্ব, বাজেটমাফিক জলসা— সফল মাচার সব রেসিপি অতনুবাবুর নখদর্পণে। বাজেটের ঘোরাফেরা ১৫ লক্ষ থেকে ৩৫-৪০ হাজার। ‘অতনুদা’ বলছেন, ‘‘মাচার লাইনে থেকেই ছেলেকে মস্কোয় ডাক্তারি পড়াচ্ছি। এমন সঙ্কট কখনও দেখিনি।’’ তাঁর দাবি, বড় তারকা থেকে শুরু করে পাড়াগাঁর বাদামওয়ালা— রাজ্যে অন্তত দশ লাখ পরিবারের ভাগ্য ঝুলে আছে মাচার ভবিষ্যতের সঙ্গে।
তথ্যেও তা-ই ইঙ্গিত। অন্যান্য শীতে যেখানে মাসে আঠাশ দিনই একাধিক মাচা লেগে থাকে, সেখানে এ বার সংখ্যাটা টেনেটুনে অর্ধেক। ভিড়ও কম। হুগলির এক ক্লাবকর্তার আফশোস, ‘‘ফুল ফ্যামিলি পাঁচশো টাকার চেয়ারে বসবে, এমন রেস্তদার পাবলিক মাচামুখো হচ্ছেই না!’’ মাচা ইন্ডাস্ট্রির হিসেব, বড় স্টারের শোয়ে দশ হাজার লোক না-হলে পুরো ‘লস।’ নগদের অভাবে সার্বিক টিকিট বিক্রিতেও বিলক্ষণ টান। তা সত্ত্বেও আগামী দিনে মাচার টিকিটের দাম বাড়বে বলে পূর্বাভাস করলেন প্রবীণ ইমপ্রেশারিও তোচন ঘোষ। কেন?
ডায়মন্ড হারবারে কুমার শানুর শো ‘ক্যানসেলের’ ধাক্কা সদ্য সামলেছেন উদ্যোক্তা নারায়ণ ঘোষ। ব্যাখ্যাটা তিনি-ই দিলেন— ‘‘এখন সবটা চেকে দেওয়া হচ্ছে বলে আর্টিস্টরা বেশি দর হাঁকাচ্ছেন। ৩৫% সার্ভিস ট্যাক্সের চোট তাতে খানিকটা সামলাবে। কিন্তু টিকিটের দামও বাড়াতে হবে।’’ শিল্পীদের অনেকেও ধন্দে— পেমেন্ট পুরনো নোটে নেবেন, নাকি চেকে!
পেশাদারেরা কেউ কেউ তবু আশাবাদী। বাঁকুড়া-বর্ধমানে দেবের সঙ্গে শোয়ের আগে দুপুরভর মহড়া সেরে জিৎ-এর মন্তব্য, ‘‘দেখি না, পরের মাসগুলো কেমন যায়! ভাল কাজ করলে ঝড়ঝাপ্টা গায়ে লাগবে না।’’ তাঁর দাবি, ইদানীং বিভিন্ন চ্যানেলের শোয়ের দৌলতে কিছু নতুন কাজের জায়গাও খুলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy