(বাঁ দিক থেকে) কাঞ্চন মল্লিক, সায়নী ঘোষ, রূপাঞ্জনা মিত্র। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে উত্তাল রাজ্য। প্রতি দিন বিচারের দাবিতে পথে নামছেন মানুষ। এর মধ্যেই আরজি করের আন্দোলনরত চিকিৎসকদের নিয়ে কাঞ্চন মল্লিকের মন্তব্য নিয়ে সমাজমাধ্যমে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যে চিকিৎসকেরা কর্মবিরতিতে রয়েছেন তাঁদের কটাক্ষ করে উত্তরপাড়ার বিধায়ক বলেছেন, “বেতন নেবেন তো?” এই মন্তব্যের জেরে কাঞ্চনের উদ্দেশে অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী লিখেছেন, “এক সময়ের বন্ধু/সহকর্মী কাঞ্চন মল্লিক, তোকে ত্যাগ দিলাম।” বহু দিনের বন্ধু ও সহকর্মীকে চিনতে পারছেন না রূপাঞ্জনা মিত্রও। অভিনেত্রী মনে করছেন, মানুষ হিসেবে নয়। তৃণমূলের কর্মী হিসেবে এই মন্তব্য করেছেন কাঞ্চন। একই ভাবে সায়নী ঘোষ-সহ অন্যরাও চুপ করে রয়েছেন।
আনন্দবাজার অনলাইনকে রূপাঞ্জনা বলেন, “কাঞ্চনের নিজের পদের কথা মাথায় রাখা উচিত ছিল, এমন মন্তব্য করার আগে। অবশ্যই আর একটু দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। এই আন্দোলনে তিনি জুনিয়র চিকিৎসকদেরই ছোট করলেন। যে অপরাধ হয়েছে, যে দু্র্নীতি চলেছে, তা মানুষের চোখে পড়ছে। আসলে কাঞ্চন এখন একজন অভিনেতা হিসেবে কথা বলছেন না। এখন যাদের হয়ে কাজ করছেন, তাদের মুখপত্রের মতো কথা বলেছেন। অভিনেতা কাঞ্চনকে আমি চিনতাম। এই মানুষটাকে আমি চিনি না।”
রূপাঞ্জনার কথায়, “অথচ, জনপ্রতিনিধিরা প্রথমে বাংলা ছবি থেকে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তাঁদের অভিনয়ের যোগ্যতার জন্য মানুষ চিনেছে। তাই আরজি-করের মতো ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিত ছিল। কাঞ্চন কোনও প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে এই উত্তর দিয়েছেন জানি না। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের মন্তব্য মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। নির্যাতিতা সম্পর্কে বা তাঁর বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কোনও কথা না বলে, বেতন বা অনুদান নিয়ে মন্তব্য করে বসলেন? না কি এঁরা বেছে বেছে রাজনীতি করছেন? নিজেদের পছন্দ মতো বিষয় নিয়েই শুধু মন্তব্য করছেন।”
আরজি করে নিহত তরুণী চিকিৎসকের জন্য বিচারের দাবিতে পর পর হয়ে চলা আন্দোলনে দেখা যায়নি তৃণমূলের তারকা সাংসদ সায়নী ঘোষ, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, জুন মাল্যদেরও। সেই প্রসঙ্গেও কটাক্ষ করে রূপাঞ্জনা বলেন, “আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই শাসকদলের পদে রয়েছেন। আমাদের কোনও আন্দোলনে তাঁদের দেখা যাচ্ছে না। আমরা বুঝেছি, কাদের সঙ্গে আমাদের লড়াই, আর কারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আজ সায়নী ঘোষ কেন নেই? তিনি তো সাংসদ। তাঁরা কিছু বলতে পারতেন না? কিন্তু আমরা শুনেছি, তাঁদের বলতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের আটকে দেওয়া হচ্ছে মানে বুঝতে হবে, ওঁরা চাকরি করছেন। তাই ওঁদের আর অভিনেতা, বন্ধু বা সহকর্মী হিসেবে আর দেখছি না।”
কাঞ্চনের সঙ্গে একাধিক কাজ করেছেন রূপাঞ্জনা। বহু দিনের পরিচিতি। তাই এই ‘পরিবর্তন’ দেখে খারাপও লাগছে তাঁর। অভিনেত্রী জানান, “অন্য কাঞ্চন মল্লিককে দেখেছিলাম আগে। মানুষ হিসাবে এই মন্তব্যটা কি ঠিক? এই প্রশ্নটা নিজেকে করা উচিত ওঁর। নিজের বিবেককে প্রশ্ন করা উচিত। ওঁর মন্তব্যের পিছনে হয়তো বৃহত্তর কোনও কারণ রয়েছে। কিন্তু সেটা বলারও একটা ধরন থাকে। বলার ধরনে তাচ্ছিল্য থাকলে মানুষের কষ্ট লাগবে, সেটাই স্বাভাবিক।”
রূপাঞ্জনা জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁর সঙ্গে কাঞ্চনের তেমন বন্ধুত্ব বা যোগাযোগ নেই। তিনি বলেন, “সম্প্রতি আমাদের একটি ছবির প্রদর্শনে আমি আমার পরিচিতদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু কাঞ্চন আসেননি। অর্থাৎ, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, নিজের পরিসরের বাইরে তিনি যেতে চান না। আমরা এখন ওঁর কাছে সাধারণ মানুষ। তিনি রাজনীতিবিদ। তাই সাধারণ মানুষের আন্দোলনকে ওঁরা গালমন্দ করে এগিয়ে যেতে পারেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy