মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো আইনত দণ্ডনীয়। অথচ, রবিবার সকাল ৯টার পরে খাস কলকাতার ভরা বাজারে তেমনই মত্ত এক চালক বেপরোয়া গাড়ি নিয়ে পিষে দিলেন অন্তত ছ’জনকে। পরে মারা গেলেন একজন। কিন্তু এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠে গেল সমাজমাধ্যম আর কলকাতার সমাজ-মানসিক স্থিতি নিয়ে।
ঠাকুরপুকুরের গাড়ি দুর্ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে টলিপাড়াতেও। টলিপাড়ার অভিনেতা-শিল্পীদের দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ছয় জনকে পিষে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছোট পর্দার পরিচালক ভিক্টো ওরফে সিদ্ধান্ত দাসের বিরুদ্ধে। হাসপাতালে মৃত্যুও হয়েছে এক জনের।
ঘটনার পর থেকে সেই গাড়ির ছবি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। গাড়ির পিছনের আসনে ছিলেন একটি বেসরকারি চ্যানেলের কার্যকরী প্রযোজক শ্রিয়া বসু। তিনিও ছিলেন মত্ত অবস্থায়। তাঁরও মত্ততার বেশ কিছু ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল। এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র।
মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানোর নিন্দা করেছেন অভিনেত্রী। কিন্তু তারই পাশাপাশি কার্যকরী প্রযোজকের ভিডিয়ো ভাইরাল করে দেওয়ার সমালোচনাও করেছেন তিনি। রূপাঞ্জনা বলেছেন, “ভিক্টোকে বহু দিন ধরেই চিনি। আমার সামনেই পরিচালক হয়ে উঠেছে। ‘তুমি আসবে বলে’ ধারাবাহিকে ও অভিনয় করত। সেখান থেকে ওর পরিচালক হয়ে ওঠা। জানতে পারি, ওরা নাকি ভোর পর্যন্ত পার্টি করেছে। পরের দিন শুটিং ছিল। তাই এটা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা তো বটেই। কার্যকরী প্রযোজকের তো শুটিং-এ কাজ থাকে। সেখানে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।”
রবিবার সকালে ঠাকুরপুকুর বাজারের কাছে ডিএইচ রোডে বেপরোয়া গাড়িটি পিষে দিয়েছিল বাজারে আসা বহু মানুষকে। তাই রূপাঞ্জনা বলেছেন, “কতটা হুঁশ হারালে এমন একটি জনবহুল এলাকায় এই ভাবে গাড়ি নিয়ে ঢুকে যাওয়া যায়! শুধুই কি মদ্যপান করলে এটা সম্ভব? আমার তো মনে হচ্ছে, ওরা অন্য কোনও নেশার বশে ছিল। সকাল ৯টার সময়ও ওদের হুঁশ ফেরেনি!” রূপাঞ্জনার দাবি, এতটা মত্ত অবস্থায় গাড়ি না চালিয়ে তাঁদের গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, “এক জন মানুষের মৃত্যু হল, ভিডিয়োয় দেখলাম বৃদ্ধরা জখম হয়েছেন। এ অপরাধের ক্ষমা নেই। আমাদের কাছে এটা কালো দিন।”
আরও পড়ুন:
রূপাঞ্জনার দাবি, যাঁরা সে রাতের পার্টিতে ছিলেন তাঁরা প্রত্যেকে প্রাপ্তবয়স্ক, কেউ বাচ্চা নন। তার পরও কি সামান্য দায়িত্ববোধ আশা করা যায় না! এই ঘটনা কালিমালিপ্ত করছে গোটা টলিপাড়াকে। তাই দিনের শেষে একটা রুপোলি দুনিয়ার অংশ হিসেবে কিছু দায়িত্ববোধ থাকা জরুরি বলে মনে করেন রূপাঞ্জনা। তবে এর মধ্যে আর একটি বিষয় নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন অভিনেত্রী। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, কার্যকরী প্রযোজক মত্ত অবস্থায় বার বার পড়ে যাচ্ছেন, আলুথালু তাঁর পোশাক। পুলিশের গাড়িতে ওঠার মতো শক্তিও তাঁর অবশিষ্ট নেই। এ প্রসঙ্গে রূপাঞ্জনা বলেন, “মেয়েটি মত্ত অবস্থায় পড়ে যাচ্ছে। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু যে ভাবে ভিডিয়োটি ছড়িয়ে পড়ছে, তা চোখে দেখা যাচ্ছে না। ওই মেয়েটি তো চালকের আসনে ছিল না। ও মত্ত অবস্থায় গাড়িতে বাড়িই ফিরছিল। কিন্তু ওর সঙ্গে যেটা করা হল, সেটাও কিন্তু অপরাধ।”
একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, মহিলারা শ্রিয়ার চুলের মুঠি ধরে মারছেন, ধাক্কা দিচ্ছেন। রূপাঞ্জনা মানছেন, এত বড় একটা ঘটনার পর জনরোষ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎই এই বিষয়টি সমাজমাধ্যমে ‘কনটেন্ট’ হয়ে গিয়েছে। অভিনেত্রীর আপত্তি এখানেই। তিনি বলেন, “চেহারার গড়ন, প্রতিষ্ঠিত চাকরি ও ছোট পোশাকের জন্যই কিন্তু ওর সঙ্গে এটা করা হচ্ছে। এটা তো কাম্য নয়!”