সৌরভ ও মধুমিতা: সুখের সে দিন অতীত।
অবসাদের কোনও স্বাদ হয় না। অবসাদ দেখতে মোটেও সেক্সি নয়, তাকে দিয়ে টাকা কামানো যায় না, টিআরপি বাড়ানো যায় না, সঙ্গে থাকলে স্টেটাস বৃদ্ধিও হয় না। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তার খোঁজ কেউ রাখে না। কিন্তু অবসাদ ভীষণ প্রতিক্রিয়াশীল। সে বেশি দিন মনের মধ্যে জমাট বাঁধতে থাকলে কিছু একটা ঘটাবেই। ঘটে গেলে হয়তো আমরা সেটাকে ক্যাজুয়াল্টিস বলে ধরে নেব। কিন্তু এটা যে একটা অঘোষিত অতিমারি সেটা কি আদৌ আমরা স্বীকার করেছি কখনও? খোঁজ রেখেছি কি অবসাদের মর্টালিটি রেট ঠিক কত? যেখানে সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে ২৬৪ মিলিয়নেরও বেশি সংখ্যক লোক অবসাদের অন্ধকারে।
আমি নিজেও বহু দিন অবসাদের সঙ্গে ঘর করেছি। আমি খুব ভাল করেই জানি... অবসাদ শুধুমাত্র উপদেশে কাটে না, আর তা কোনও এক শুক্রবারেও জন্ম হয় না, এর কাজই হল জমতে থাকা। তার পর একটা সময়ে মুখ ছাড়িয়ে কখন যে নাক ছুঁয়ে নেবে তা আগে থেকে নিজে ধরতে পারা ভীষণ কঠিন। সুস্থ ‘আমি’ তাই সবার আগে অসুস্থ ‘আমি’টাকে ‘আইসোলেট’ করে দেওয়ার চেষ্টা করব। ব্যস, অবসাদও ঘাপটি মেরে বসে থাকবে সেই অসুস্থ আইসোলেটেড ‘আমি’টার জন্য। আমি অত্যন্ত সফল ধারাবাহিকের জীবন থেকে ফ্লপ প্রজেক্টের তকমা এঁটে যাওয়া কেরিয়ারে দেখেছি, অভিনয় এক প্রকার বন্ধ রেখে পরিচালনার জন্য যখন দিনরাত এক করে ঝাঁপিয়েছি তখন হঠাৎ বাবা চলে গেল! তার পর মধুমিতার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ, বিভিন্ন বন্ধুর পাশ থেকে নিভৃতে সরে যাওয়া আমাকে এত একা করে দিয়েছিল যে আমার নিজেকে আর ভাল লাগত না। বড্ড বাড়তি মানুষ বলে মনে হত, এমনকি চুল-দাড়ি কাটাতেও ইচ্ছে করত না, একটা ভঙ্গুর ‘আমি’কে বয়ে নিয়ে চলার মতো জেদ চেপে বসতে থাকে আমার মধ্যে... ভয়ঙ্কর এই সময়, ‘হেরো’ তকমা লেগে যাওয়ার ভয়ে বাকিদের কাছে স্বীকার করাও মুশকিল। কঠিন হয়ে কি এক কালো চাপ বসে শরীরে, যে বলতে শেখায় আমি নিজেকে চাই না।
কিন্তু এই পৃথিবীতে অতি খারাপ লোকের যেমন কোনও না কোনও প্রিয়জন থাকে... তেমনই প্রতিটি খারাপ সময়ের পিছনে একটা ভাল সময় থাকতেই হবে। অতি জনপ্রিয় জানুয়ারি মাসকেও ৩১ দিনের মাথায় তার জায়গা ছেড়ে দিতে হয় ২৮ দিনের পুঁচকে ফেব্রুয়ারির কাছে।
সৌরভ-মধুমিতা। ফাইল চিত্র।
বাবা মারা যাওয়ার পর যখন আমি রাতের পর রাত ঘুমোতে পারতাম না... ছোট্টবেলা থেকে লিখে বড় হওয়া ‘আমি’টার লেখার প্রতিও আত্মবিশ্বাস যখন তলানিতে, যখন প্রতি মুহূর্তে মনে হয়েছে আমি বোধহয় শূন্যে ফিরে গিয়েছি... মায়ের একটা কথা আমার ক্ষেত্রে ভীষণ স্টেরয়েড হিসেবে কাজ করত যে, ‘তুমি দেশভাগ দেখনি... তুমি জান না যে তোমার বাবাদেরকে কী ভাবে ওই দেশ থেকে সব ফেলে এখানে এসে শুরু করতে হয়েছে... হয়তো তুমি জান, কিন্তু ওই সময়কে বোঝা অসম্ভব। ঠিক যেমন তুমি ভাবছ যে তোমার কষ্টটাও কেউ ফিল করছে না। কিন্তু এটা ঠিক... আর যাই হয়ে যাক না কেন, যতই তোমার অর্জিত সংখ্যা কমতে থাকুক না কেন সেটা ৫ কিংবা ৩ হতে পারে, কিন্তু কখনও শূন্য নয়।’ মা মুক্তি দিল আমায়। আর এক ডাক্তার বন্ধু।
আরও পড়ুন: লড়াকু মনোভাবেই টলিউডে বেঁচে আছেন এই তারকারা
আর এই ভাবে নিভৃতে থাকা আত্মবিশ্বাসের আগুনে যে ভাবে কোনও সাত পাঁচ না ভেবে যে ভাবে আমার মা, আমার কিছু প্রিয় বন্ধু একের পর এক চ্যালাকাঠ জুগিয়ে গিয়েছে, তারই ফলস্বরূপ হয়তো ‘শব্দজব্দ’। না হলে এই প্রজেক্ট হাতে আসার পর আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল যে এটা বোধহয় আমি করতে পারব না
আরও পড়ুন: তদন্তে নয়া মোড়? বান্দ্রা থানায় হাজির হলেন রিয়া
আর থাকল আমার সম্পর্কের কথা। সম্পর্ক ভাঙার সময় ওই পরিস্থিতির মানসিক কষ্টের চেয়েও বেশি কষ্ট দিয়েছে আমার পারিপার্শ্বিক প্রতিক্রিয়া। নানা প্রশ্ন ঘিরে ধরেছিল, গিলে ফেলতে চাইত আমায়। কিন্তু সত্যি কেউ জানে, দুটো মানুষের সম্পর্ক কেন ভাঙে? কতটা কষ্ট হয়েছিল আমার আর মধুমিতার এই সম্পর্ক ভাঙতে? আমাদের যে সম্পর্কের শুরু ভালবাসা থেকে তার উপলব্ধিও তো নিজস্ব! মানুষ যা পায় তা শুধুই তথ্য। আর তথ্য ঘুরতে ঘুরতে ভুল তথ্য হয়ে দাঁড়ায়! সুশান্তের বান্ধবী আর সম্পর্ক নিয়ে এখন কত কথা! সত্যি কি জানি আমরা? ঠিক কী হয়েছিল ওঁদের?
বিষণ্ণতা কেড়ে নিল একটা তাজা প্রাণ। ফাইল চিত্র।
আসলে, আমরা এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে আছি যেই সময়টা পরের পদক্ষেপটা কোথায় ফেলবে আমরা জানি না। একটা গুলিয়ে যাওয়া সময়, একটা গুলিয়ে যাওয়া অর্থনীতি, একটা ঘোলাটে সমাজে বাস করছি আমরা। যেখানে প্রত্যেকে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়চ্ছে। যে কারণে রোববারের দুপুরে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের আত্মহত্যার খবরে মস্তিষ্কের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হয়, এটা একটা ফেক নিউজ। কারণ প্রচুর অর্থবান, চূড়ান্ত জনপ্রিয়, নিজেকে অলরেডি ‘এস্ট্যাব্লিশড’ করে ফেলা এক জন সুপারস্টারকে আমরা সফল বলে ধরে নিয়েছি, আমাদের ভাবানো হয়েছে, সাফল্য পেয়ে গেলে কেউ এ রকমটা করতে পারে না। তার থেকেও বড় ব্যাপার, আমরা ভেবেই নিয়েছি, পয়সা ও খ্যাতির মতো এ রকম তিন-চারটি বিষয় থাকলেই আপনি সেফ। সব দিক থেকেই সেফ। এবং গোটা জাতি সেই বানিয়ে নেওয়া ধারণাটার পেছনে ছুটছি নিজেকে সেফ মার্ক করার জন্য। ফেসবুক ওয়ালও ভরে উঠছে লক্ষ লক্ষ ফিলিং পজিটিভ আপডেটস-এ। অথচ, আমাদের মনের ভিতর কী চলছে সেটা আমরা স্বীকার করতে রাজি নই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy