মিলেনিয়ালদের যুগে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরি ‘হ্যাপেনিং’ ব্যাপার। কিন্তু এই চাকরির গেরো যে কত রকমের, তা শুধু যাঁরা চাকরি ছেড়েছেন বা পাননি, তাঁরাই জানেন। জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ় নির্মাতা টিভিএফ (দ্য ভাইরাল ফিভার)-এর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আইআইটির ছাত্র। তাই ইঞ্জিনিয়ারদের না-বলা কথাই তাঁদের ওয়েব সিরিজ়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে। ‘পিচারস’-এর পরে তাঁদের নতুন নিবেদন ‘পঞ্চায়েত’-এর মুখ্য চরিত্রও এক ইঞ্জিনিয়ার। তবে অভিষেক ত্রিপাঠীর (জিতেন্দ্র কুমার) পকেটে লাখ টাকার চাকরি নেই। মাত্র ২০ হাজার টাকা মাইনের পঞ্চায়েত সচিবের চাকরি নিয়েই সে ঘর ছাড়ে। গন্তব্য উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম ফুলেরা। ঘরে বেকার বসে থাকার চেয়ে তো সরকারি চাকরি বেটার অপশন!
আটটি পর্বের ‘পঞ্চায়েত’-এ গল্পের সূচনা হয় এ ভাবেই। কমবেশি তিরিশ মিনিটের প্রতিটি পর্বে চলে গ্রাম্য জীবনের অচেনা ধারার সঙ্গে অভিষেকের মেনে ও মানিয়ে নেওয়ার রোজনামচা। প্রতিটি পর্ব আবর্তিত হয়েছে একটি আইডিয়াকে ঘিরে। ঘটনার ঘনঘটা নেই, তবে গল্প বলায় রয়েছে এক অদ্ভুত সারল্য। যে সারল্য গ্রাম্যজীবনের সঙ্গে সমার্থক! যে ভাবে অভিষেক ফুলেরাকে চিনতে শুরু করে, তার সঙ্গে ‘আর্টিকল ফিফটিন’ ছবির আইপিএস অফিসার অয়ন রঞ্জনের নতুন পোস্টিং চেনার তুলনা আসতে পারে। তবে দু’টির ট্রিটমেন্ট একেবারে আলাদা। টিভিএফ-এর যে কোনও নিবেদনের মূল সুর ‘ফিল-গুড-ফ্যাক্টর’। তাই ‘পঞ্চায়েত’-এর ছত্রে ছত্রে গ্রাম্যজীবনের সাদা-কালো সারল্য, কখনও বা ধূসর লুকোছাপা। কিন্তু দুর্নীতি ও হিংসার নিকষ রং এখানে অনুপস্থিত।
ভাল সিরিজ়ের জন্য ভাল চিত্রনাট্যের বিকল্প নেই। চন্দন কুমারের লেখা এবং দীপক কুমার মিশ্রের পরিচালনা সিরিজ়টিকে সমৃদ্ধ করেছে। সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করেছে অনুরাগ সালকিয়ার অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। আটটি পর্বের মধ্যে ছ’নম্বর পর্ব ‘বহত হুয়া সম্মান’ সবচেয়ে দুর্বল। তবে তাতে সিরিজ়ে ছন্দপতন হয়নি।
আরও পড়ুন: করোনার জেরে কোন কোন বলিতারকার বিয়ে ভেস্তে গেল
সিরিজ়ের সর্বস্তরের পরিচিত তিন মুখ জিতেন্দ্র, গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মঞ্জুদেবীর চরিত্রে নীনা গুপ্ত, এবং মঞ্জুর স্বামীর চরিত্রে রঘুবীর যাদব। বাকি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন চন্দন রায় (বিকাশ), ফয়সল মালিক (প্রহ্লাদ), বিশ্বপতি সরকার (প্রতীক)। টিভিএফ-এর নিয়মিত দর্শকের কাছে এঁরা পরিচিত মুখ। অভিনয়ে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়েননি। গ্রামের মস্তান থেকে ওয়ার্ড বয়, সকলেই এক কথায় তুখড়। এর পাশাপাশি সিরিজ়ের প্রোডাকশন ডিজ়াইন নজর কেড়েছে। মাটির কাছের গল্প বলতে যেমন সেট দরকার ছিল, তা যথাযথ তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথম দিকে নীনাকে সে ভাবে পাওয়া না গেলেও, শেষ দু’টি পর্ব অভিনেত্রীর জন্যই বরাদ্দ ছিল। আসলে এই ডিজ়াইনিংও গল্পের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই। গ্রাম-পঞ্চায়েতের প্রধান মঞ্জু। কিন্তু তার নামে সমস্ত কাজ করে তার স্বামী। মঞ্জুর তা নিয়ে ক্ষোভ নেই। বরং গম-ভাঙা আর মশলা পেষাইতেই তার আনন্দ। এ দিকে স্বামী যখন ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়, তাকে সাহস জোগানোর নেপথ্যে ‘লৌহমানবী’ কিন্তু মঞ্জুই। নারী ক্ষমতায়ন এবং সরকারি প্রোপাগান্ডার এক অর্থপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে এই সিরিজ়ে। যেখানে অক্ষয়কুমারের বুক-চিতোনো সংলাপ নেই। বরং জিতেন্দ্রর বুক-ফাটা ক্ষোভই দর্শকের মনে ধাক্কা দেয়। বুঝিয়ে দেয়, ‘জনগণমন’ই শেষ কথা। করোনার বাজারে এর চেয়ে জোরালো কোনও শব্দ কি আর আছে?
আরও পড়ুন: সিনেমা অনেক কিছু ভুলিয়ে দেয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy