এ আর রহমান
অস্কারজয়ী সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমানকে এ বার দেখা যাবে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নতুন শো ‘হারমোনি’তে। শোয়ে রহমান চার জন মিউজ়িশিয়ানের সঙ্গে কথা বলবেন, যাঁদের প্রতিভা সম্পর্কে কারও কোনও ধারণা নেই। সঞ্চালক হিসেবে এটি রহমানের প্রথম কাজ। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে— মুম্বই, মণিপুর, সিকিম এই সব জায়গায় ঘুরে রহমান মিউজ়িশিয়ানদের সঙ্গে তাঁদের মিউজ়িক্যাল জার্নি এবং স্ট্রাগলের কথা শুনবেন। রহমানের কথায়, ‘‘এই শোয়ের কনসেপ্টই আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছিল। আর আমি সেই জন্যই সম্মতি জানাই।’’
সঞ্চালক হিসেবে নিজের প্রথম অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে রহমান বললেন, ‘‘আমি কিন্তু অভিজ্ঞ হোস্ট নই। তাই আমার কাছ থেকে কোনও রকম পেশাদার ম্যাজিক আশা করবেন না! এই শো করার দরুন আমার একটা বিরাট প্রাপ্তি হয়েছে। অসংখ্য নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিচিতি হয়েছে। ১১ বছর বয়স থেকে স্টুডিয়োয় আমি কি-বোর্ড বাজাচ্ছি। লাইভ অর্কেস্ট্রার সঙ্গে আমার পরিচিতিটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। সেতার, তবলা, বীণা এই সব কিছু আমি খুব অল্প বয়স থেকে শুনে আসছি। তাই এ সবের শ্রুতিমাধুর্য আমার কানে বসে গিয়েছে। আর যে সব সঙ্গীতশিল্পীরা তখন এই সব বাদ্যযন্ত্র বাজাতেন, তাঁরা সকলেই আমার তুলনায় বিরাট ছিলেন।’’
নিজের এক্সপেরিমেন্টাল সঙ্গীত সম্পর্কে রহমান জানালেন, ‘‘ক্লাসিক্যাল মিউজ়িক আমার প্ৰথম পছন্দ। আমার মনে হয়, এই ভালবাসাটা ভারতীয়দের রক্তে বইছে। মার্গসঙ্গীতের প্রতি ভাল লাগা আমাদের মধ্যে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আসে। সেই কারণে বিভিন্ন রাগ যেমন পিলু, শিবরঞ্জনীর উপরে যে সব গান বানানো হয়, সেই গানের শ্রোতাও অনেক বেশি। আমার মতে, কোনও রাগের উপরে ভিত্তি করে যখন কোনও গান বানানো হয়, সেটা এক জন সঙ্গীত পরিচালকের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ রাগের মাধ্যমে শ্রোতাদের গানের প্রতি আকৃষ্ট করা খুব কঠিন। আমাদের দেশে সঙ্গীত পরিচালক নৌশাদ, মদন-মোহন, এস ডি বর্মণ এঁরা সকলেই খুব পারফেকশনের সঙ্গে এটা করে এসেছেন।’’
কিন্তু পাশ্চাত্যের সঙ্গীত আমাদের দেশে যে রকম জনপ্রিয়, সেই একই ভাবে ভারতীয় সঙ্গীত কিন্তু পাশ্চাত্যে জনপ্রিয় নয়, কারণ? ‘‘কথাটা আংশিক সত্যি। অন্তত আমার অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। হলিউডে কাজ করার সময়ে দেখেছি ওখানে কর্ণাটকী সঙ্গীত খুব একটা প্রাধান্য পায় না। কিন্তু যদি কোনও হালকা রাগের উপরে গান বানাই, সেটা ওখানে খুবই বাহবা পেয়েছে। জটিল কোনও কিছু পাশ্চাত্যের শ্রোতারা পছন্দ করেন না।’’ এখনকার শ্রোতারা সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা খুব প্রভাবিত। এই প্রসঙ্গে রহমান বললেন, ‘‘আজকাল প্রকৃত অর্থে শ্রোতা কোথায়? সবাই এখন দেখে আর শোনে। কোনও গানের ভিডিয়ো যদি খারাপ হয়, তা হলে সেই গানও আর কেউ শোনে না! আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, রেডিয়ো শোনার চল আবার ফিরে আসুক। কারণ রেডিয়ো এক জন শ্রোতাকে সাহায্য করে গানের মাধ্যমে কল্পনা করতে।’’ ভারতের কোন রাজ্য আপনার মনে হয় সঙ্গীতে সমৃদ্ধ? ‘‘পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, পঞ্জাব এবং কেরল আমার প্রিয় রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর বিদেশের মধ্যে বলব ইংল্যান্ডের কথা। ওখানকার গান, কবিতা, হেরিটেজ খুবই সমৃদ্ধ। ভারতের সেই স্থান নেওয়াটা শুধু এখন সময়ের অপেক্ষা...’’
রহমান এত বছর ধরে সঙ্গীত পরিচালনায় থাকলেও কোনও রিয়্যালিটি শোয়ের বিচারক হননি। বললেন, ‘‘কারও বিচার করাটা খুব কঠিন কাজ। রিয়্যালিটি শোয়ে ছোট ছোট বাচ্চারা যখন গায়, আর তার পরে যখন তাদের ভুল-ত্রুটি শোধরানোর জন্য কিছু বলা হয়— সেই ব্যাপারটাই সবচেয়ে কঠিন। আমাকে যদি এ রকম বলতে বলা হয়, আমি বোধহয় দু’সপ্তাহ ঘুমোতে পারব না।’’ নিজের পরে ভারতের মিউজ়িক ম্যাপে কাকে উনি সবচেয়ে প্রতিভাবান মনে করেন? ‘‘সে ভাবে কোনও দিন ভাবিনি। আমি সব সময়ে চেয়েছি, সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দিতে। আমার যে মিউজ়িক কলেজ আছে, সেখানে সঙ্গীত নিয়ে যাবতীয় খুঁটিনাটি শেখানো হয়। শুধু মাত্র গান গাওয়া নয়, গানকে বোঝা, নোট লেখা, সমাজকে স্টাডি করা এই সব কিছুই শেখানো হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy