পি সি সরকার জুনিয়র। — ফাইল চিত্র।
বালিগঞ্জের বৈগ্রহিক ‘ইন্দ্রজাল ভবন’ ছেড়ে এখন তাঁর ঠিকানা বাইপাসের ধারে জয়শ্রী ম্যানসন। সকাল সকাল সময় মতো তাঁর স্টাডিতে পৌঁছতেই সেই পরিচিত হাসি। মোবাইলের রেকর্ডার অন করতেই বললেন, ‘‘আমি একটু বেশি কথা বলি। অপ্রয়োজনীয় অংশ না হয় বাদ দিয়ে দেবেন!’’
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
পি সি সরকার: বাঙালি মাত্রেই মিথ্যুক! কারও সঙ্গে দেখা হলেই বলে, ‘ভাল আছি’। আসলে কিন্তু তিনি ভাল নেই। আসলে আমরা কেউই ভাল নেই!
প্রশ্ন: আপনি তো স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন না। কিন্তু আপনার ফোনটা তো দেখছি স্মার্ট!
পি সি সরকার: দেখুন, স্ক্রিনটা ফেটে গিয়েছে। তাই কতটা স্মার্ট আমি জানি না। আসলে সময়ের সঙ্গে সবই বদলায়। আমাকেও একটু একটু করে বদলাতে হয়েছে।
প্রশ্ন: তার মানে সমাজমাধ্যমেও আপনার যাতায়াত আছে।
পি সি সরকার: (হেসে) ওই একটু মুখ দেখাতে হয়। না করে তো উপায় নেই। দর্শকদের অনুরোধ। মেনে নিয়েছি।
প্রশ্ন: ৭৭তম জন্মদিন আসন্ন। ছেলেবেলায় বাড়িতে নিশ্চয়ই আপনার জন্মদিন খুব ধুমধাম করে পালিত হত?
পি সি সরকার: খুব একটা কিছু হত না। তা ছাড়া জন্মদিন নিয়ে আমি খুব একটা উচ্ছ্বসিত নই। ওষুধের মতোই আমারও একটা ‘এক্সপায়ারি ডেট’ রয়েছে। আমি যে আমিই, সেটা নিয়ে আমার মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তা নিয়ে এক বার কবিতা লিখেছিলাম। আমি কিন্তু আবার রেগে গেলে কবিতা লিখি (হাসি)।
প্রশ্ন: এখন মেয়েরা নিশ্চয়ই আপনার জন্মদিন উদ্যাপন করার চেষ্টা করেন?
পি সি সরকার: ওরা ঠিক তক্কে তক্কে থাকে। রাত বারোটা বাজলেই কেক নিয়ে হাজির (হাসি)। ফোন বেজে ওঠে। শুভেচ্ছাবার্তা আসতে থাকে। আর আমিও বুঝতে পারি, আরও একটা বছর বুড়ো হলাম।
প্রশ্ন: বয়স বেড়েছে। কিন্তু আপনি কি এখনও মঞ্চে শো করেন?
পি সি সরকার: হয়তো এত দিনে একটু মেজাজি শিল্পী হতে পেরেছি। তাই নিজের ইচ্ছে হলে শো করব, না হলে করব না। আসলে পশ্চিমবঙ্গে বসে আমি শান্তি পাচ্ছি না।
প্রশ্ন: কেন বলুন তো?
পি সি সরকার: এখানকার প্রেক্ষাগৃহগুলো এতটাই পুরনো ধাঁচের যে, সেগুলো আমার নতুন চিন্তাভাবনার সঙ্গে মিলছে না। আমিই তো এক সময় কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে জিপ গাড়ি মঞ্চে ঢুকিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেই তো থেমে থাকলে চলবে না! খেলা দেখাতে একটা ক্রেন কলকাতার কোনও প্রেক্ষাগৃহে তো ঢোকাতে পারব না। বড় আকারের কোনও খেলা দেখানো সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: তার মানে বড় মাপের ম্যাজিক...
পি সি সরকার: অবশ্যই। পেলেকে ডেকে আমার বাথরুমে ফুটবল খেলতে বললে তিনি তো পারবেন না! একটা ছোট পয়সা গায়েব করতে কৌশল প্রয়োজন। কিন্তু সেটা মানুষের মন ভরাতে পারে না। কারণ আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী তো সিনেমা। সিনেমা মানুষের চোখ পচিয়ে দিয়েছে। আমি চাই কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে ফ্লাইং সসার হাজির করতে। কিন্তু তার জন্য আমাকে তো কেউ প্রেক্ষাগৃহের দেওয়াল ভাঙতে দেবেন না!
প্রশ্ন: শুনেছি, এক সময় আপনি নাকি প্রতি দিন ২১টা ভাষার সংবাদপত্র পড়তেন। এখন বাড়িতে কী ভাবে সময় কাটে?
পি সি সরকার: সময় কাটে বলব না। আমি সময়কে কাজে লাগাই। বয়সের সঙ্গে এখন চোখের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ৫৫ বছর ধরে একটানা সন্ধ্যায় স্পটলাইট ফেস করেছি। চোখের আর কী দোষ! অতগুলো কাগজ পড়তে পারি না। হাতের লেখাটা আগের থেকে পাল্টে গিয়েছে। তবে সব কিছুর আপডেট রাখার চেষ্টা করি। সারা বিশ্বের জাদু দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। আমি এখন রাতজাগা পাখি, ঘুম আসে না। ম্যাজিক নিয়েই পাঁচটা বই লিখছি। এর মধ্যে হ্যারি হুডিনিকে নিয়ে একটা বই লিখছি। নাম রেখেছি ‘হুডিনির রহস্য, আমার সমাধান’।
প্রশ্ন: ম্যাজিকের দুনিয়ায় তো প্রচুর অনুকরণের বা ‘অনুপ্রেরণা’-র কথা শোনা যায়। আপনি কখনও কোনও খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন?
পি সি সরকার: হ্যাঁ। এক বার টিভিতে দেখলাম, লাস ভেগাসে ওরা আমার মতবাদ অনুসরণ করে অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে। কিন্তু আমার নামও উল্লেখ করল না!
প্রশ্ন: আপনি প্রতিবাদ করলেন না?
পি সি সরকার: ম্যাজিক তো সুন্দর। আমি প্রতিবাদ কেন করব!
প্রশ্ন: অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘জাদুগর’ ছবিটা নাকি আপনার জীবনের কিছু ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত। কিন্তু আপনার থেকে নির্মাতারা তখন কি কোনও অনুমতি নিয়েছিলেন?
পি সি সরকার: (হেসে) যাঁরা বুদ্ধিমান, তাঁরা জানেন। নতুন করে কিছু বলতে চাই না। তবে আমার অনুমতি নেওয়া হয়নি।
প্রশ্ন: বছর পাঁচেক আগে আপনার বায়োপিক নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল...
পি সি সরকার: অনেকেই এসেছেন। কিন্তু আমি এখনও সম্মতি দিইনি।
প্রশ্ন: কোনও কারণ?
পি সি সরকার: কারণ সিনেমার চিত্রনাট্যে আমি আমার জীবন বদলাতে রাজি নই। শুনেছি স্বত্ব দেওয়া মানে, গল্প পরিবর্তনেরও অধিকার ওদের দিয়ে দিতে হবে। হুডিনি বাস্তবে যে ভাবে প্রয়াত হন, সেটা ছবিতে বদলে দিলে ভাল হবে কি? আমি সেটা চাই না।
প্রশ্ন: সত্তরের দশকে সাঁইবাবার সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ নিয়ে এখনও আলোচনা হয়। অনেকে বলে আপনি নাকি ইচ্ছাকৃত ভাবে ওঁকে নিশানা বানিয়েছিলেন।
পি সি সরকার: কখনই নয়। কাউকে ঠগ বলতে হলে তো আমি নিজেও ঠগ! আমি শুধু প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম, আমরা দু’জনেই বিজ্ঞান অনুসরণ করি। অলৌকিকের সন্ধানে ওঁর কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার কোনও প্রমাণ আমি পাইনি। উনি আমাকে প্রসাদ হিসেবে পেঁড়া খেতে দিয়েছিলেন, আমি বলেছিলাম, ‘‘পেঁড়া আমার পছন্দ নয়।’’ তার পর হাতে রাজভোগ এনে ওঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘‘এতেও কি একই রকম উপকার পাব?’’ তত ক্ষণে তিনি বুঝে গিয়েছিলেন যে, তিনিও যা করেন আমিও সেটাই করি।
প্রশ্ন: শুরুতে আপনার বাবা (পি সি সরকার সিনিয়র) আপনাকে ম্যাজিক দেখানোর অনুমতি দেননি। কিন্তু এমএসসি পাশ করার পর তিনি অনুমতি দিলেন। তার পর ১৯৭১ সালে জাপানে ওঁর আকস্মিক প্রয়াণ। সেই দিনটার কথা মনে পড়ে?
পি সি সরকার: (কিছু ক্ষণ চুপ থেকে) বাবার শবদেহ কলকাতায় ফিরিয়ে আনতে আমার লড়াই তো রয়েইছে। তার আগে আমার মায়ের কথা বলতে চাই।
প্রশ্ন: উনি তো তখন কলকাতায় ছিলেন।
পি সি সরকার: হ্যাঁ। কলেজের এক অধ্যাপকের কাছে যাব বলে সকালে সিঁড়ি দিয়ে নামছি। নীচে দেখি মা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। থমথমে মুখ। চোখে জল। বললেন, বাবাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছেন! আমি জিজ্ঞাসা করতে বললেন, ‘‘দেখলাম, তোর বাবার পরনে রাজবেশ। ঘরে এসে আমার কোলে মাথা রেখে শুতে চাইলেন। তার পর তোর বাবা আমার কোলে মাথা রেখেই মারা গেলেন!’’ আমি তো আবাক। বললাম, ‘‘ধুস, চিন্তা কোরো না।’’
প্রশ্ন: তার পর?
পি সি সরকার: বললে কেউ বিশ্বাস করবেন না, তার কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘরের টেলিফোনটা বেজে উঠেছিল। আমি ফোন ধরতেই জাপানি ভাষায় কেউ কথা বললেন। তার পর ও পারে আমাদের ম্যানেজার বীরেনবাবুর কণ্ঠস্বর, ‘‘মামু না মইরা গ্যাসে!’’ আমি হতবাক। তার পর মায়ের অনুমতি নিয়ে জাপান যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এ দিকে পাঁচ দিন আগে আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে! ভিসা নেই, বিমানের কোনও খবর জানি না। কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কক, তাইপেই, টোকিয়ো, হোক্কাইডো, শিবেৎশু— প্রচুর কাঠখড় পুড়িয়ে তিন দিন পর আমি বাবার কাছে পৌঁছই। আমেরিকা থেকে আমার বড়দাও এসেছিলেন। সেটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম কঠিন দিন।
প্রশ্ন: আচ্ছা, আপনাদের পৈতৃক বাড়ি ‘ইন্দ্রজাল ভবন’ এখন বন্ধ। কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
পি সি সরকার: সরকার তো কিছু করল না। ওই বাড়িতে বাবাকে নিয়ে একটা জাদুঘর তৈরির ইচ্ছে রয়েছে। ওই বাড়ির মালিক আমরা তিন ভাই। তবে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।
প্রশ্ন: আপনার বড় মেয়ে মানেকা এখনও শো করেন?
পি সি সরকার: হ্যাঁ। করে তো। আরও বেশি করে নিজের শিল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। তবে ও আমার থেকেও বেশি নিয়মানুবর্তী।
প্রশ্ন: এখন তো বিনোদনের সংজ্ঞা বহুমুখী। ম্যাজিক নিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে কী রকম উৎসাহ দেখেন?
পি সি সরকার: ওরা প্রচণ্ড উৎসাহী। তবে কেউ কেউ আবার একটু বিপথে চালিত হচ্ছে। সেটা আমাকে কষ্ট দেয়।
প্রশ্ন: কী রকম?
পি সি সরকার: বাবা বলতেন ভারতীয় জাদুর ক্ষেত্রে মঞ্চে জাদুকরের সামনে একশো আশি ডিগ্রি জুড়ে দর্শক থাকবেন। কিন্তু এখন অনেকেই ক্যামেরার সামনে ম্যাজিক দেখাচ্ছেন। সেখানে দর্শক কিন্তু একমাত্রিক।
প্রশ্ন: একের পর এক ম্যাজিক দেখিয়ে দর্শককে চমকে দিয়েছেন। আপনার প্রিয় খেলা কোনটি?
পি সি সরকার: ভেবেছিলাম, দর্শকের পছন্দ ড্রাম্যাজিক ধরনের খেলাগুলো। পরবর্তী কালে কল্পবিজ্ঞান নির্ভর খেলাগুলো আমার প্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু পরে দেখলাম, দর্শক ‘এক্স রে আইজ়’ (যে কোনও ভাষায় দর্শক বোর্ডে প্রশ্ন লেখেন। জাদুকর চোখ বাঁধা অবস্থায় তার উত্তর দেন বা সমাধান করেন) খেলাটাকেই বেশি পছন্দ করলেন।
প্রশ্ন: আচ্ছা, অনেকেই বলেন ম্যাজিক নাকি এখন মৃতপ্রায় আর্ট ফর্মে পরিণত হয়েছে। আপনি কী বলবেন?
পি সি সরকার: না...না...না! একদম বাজে কথা। ম্যাজিক কিন্তু দর্শক দেখেন না। ম্যাজিকের সাক্ষী হতে হয়। মাইকেল জ্যাকসন ম্যাজিক দেখাতেন তাঁর নাচের মাধ্যমে। পণ্ডির রবিশঙ্কর তাঁর সেতারের মাধ্যমে ম্যাজিক দেখাতেন। ক্রিকেটের জাদুকর, হকির জাদুকর... বলে শেষ করা যাবে না। আসলে সব শিল্প এবং শিল্পীর লক্ষ্য কিন্তু সেই ম্যাজিক উপস্থাপন করা।
প্রশ্ন: জাদুকর হিসেবে পঞ্চান্ন বছর পূর্ণ করেছেন। এই যাত্রাপথ ফিরে দেখলে কী মনে হয়?
পি সি সরকার: কেরিয়ারের শুরুতে পুজোর প্যান্ডেলে শো করছি। পারিশ্রমিক ছিল মাত্র ১৫ টাকা। সেটাও আমাকে দেওয়া হয়নি। মহাজাতি সদন থেকে শো-য়ের পর আমার সরঞ্জাম জোর করে বার করে দেওয়া হয়েছিল। এই রকম একাধিক অপমান সহ্য করেছি। আজকে কিন্তু টেবিল চাপড়ে বলতে পারি, জাদুকর হিসেবে আমি সফল। এর পিছনে অনেক পরিশ্রম, অনেক স্বার্থত্যাগ রয়েছে। অসাধারণ একটা সফর। যে ভাবে একের পর এক সাফল্যকে স্পর্শ করেছি, এখন ভাবলেও অবাক লাগে। এর পর একটাই ইচ্ছে— নিজে অদৃশ্য হয়ে যাব (হাসি)। সেই দিনও আর খুব বেশি দূরে নেই।
প্রশ্ন: কোনও আক্ষেপ?
পি সি সরকার: নেই। আর কী চাইব?
প্রশ্ন: ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে আপনি তো বিজেপির হয়ে বারাসাত কেন্দ্র থেকে লড়েছিলেন। রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্তকে এখন কী ভাবে দেখেন?
পি সি সরকার: আমি রাজনীতি করতে নয়, প্রতিবাদ করতে রাজনীতিতে এসেছিলাম। আমি তো ভেবেছিলাম, ভোটে নামার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার প্রতি শ্রদ্ধায় আমার বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থীই দেবেন না, সিটটা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু আমি ভুল করেছিলাম। তিনি আমাকে মূল্যায়ন করে আমার বিরুদ্ধে এক প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করালেন!
প্রশ্ন: আগামী বছরে ভোটে লড়ার জন্য কি আপনার কাছে কোনও প্রস্তাব রয়েছে?
পি সি সরকার: এটুকু বলতে পারি, সব দল থেকেই রয়েছে। কেউ বাদ নেই।
প্রশ্ন: আপনি কি খাদ্যরসিক?
পি সি সরকার: আমি যে কোনও খাবার খেতে পছন্দ করি, যদি সেটা ঠিক ভাবে পরিবেশন করা হয়। আমার কাছে জিভের তুলনায় পরিবেশটা বেশি অগ্রাধিকার পায়। আমি কলকাতার বিলাসবহুল হোটেলে চা খাই। পাড়ার চায়ের দোকানেও একই চা। কিন্তু হোটেলে দাম বেশি ওই পরিবেশনা এবং পরিবেশের জন্য।
প্রশ্ন: মানেকা তো ম্যাজিক নিয়ে রয়েছেন। মুমতাজ এবং মৌবনী এখন অভিনয়ে। তিন মেয়ের কেরিয়ার নিয়ে আপনি কি সন্তুষ্ট?
পি সি সরকার: খুবই সন্তুষ্ট। অভিনয়ের মধ্যেও তো ম্যাজিক রয়েছে। যে কোনও পেশায় বাধা আসে। স্টেশন আসে। কলকাতা থেকে দিল্লি যেতে হলে পটনা, তার পর বেনারস তো আগে পেরোতে হবে।
প্রশ্ন: সুদীর্ঘ কেরিয়ারে পৃথিবীর ১১৭টি দেশে শো করেছেন। অনুরাগীদের দিক থেকে এমন কোনও ঘটনা, যা আজও মনে রেখেছেন?
পি সি সরকার: (একটু ভেবে) দুটো ঘটনা মনে পড়ছে। এক বার মুম্বইয়ে শো করছি। আমার একটু বেশি ঘাম হয়। একটা খেলা দেখানোর পর বিরতি। হঠাৎ সামনের সারি থেকে একজন বৃদ্ধা স্টেজে উঠে এলেন। আমার সহকারীরা ভেবেছেন যে, আমার সঙ্গে নিশ্চয়ই ওঁর আগে থেকে কোনও রকম কথা হয়েছে। তার পর দেখি কাছে এসে রুমাল বার করে পরম যত্নে আমার মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘‘এতটা চিন্তা কোরো না। আমরা তোমার শো দেখে খুবই তৃপ্ত।’’ আমি সঙ্গে সঙ্গে ওঁকে প্রণাম করেছিলাম। ওই রকম মাতৃস্নেহ আর কখনও শো করতে গিয়ে পাইনি।
প্রশ্ন: আর দ্বিতীয়টি?
পি সি সরকার: এক বার আমাদের পাশের বাড়িতে এক দম্পতির অল্পবয়সি ছেলেটি হঠাৎ প্রয়াত হলেন। আমি গিয়েছি। আমাকে দেখেই ওর বাবা চিৎকার করে বললেন, ‘‘আর কেউ কাঁদবেন না, হয়ে গিয়েছে।’’ তার পর হাসতে শুরু করলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘আর চিন্তা নেই, প্রদীপ তুমি এসে গিয়েছ। এ বার আমার ছেলেটাকে বাঁচিয়ে দাও!’’ আমি তো হতবাক। বিশ্বাস করাতে পারিনি যে, আমার সেই ক্ষমতা নেই। সে দিন একজন জাদুকর হিসেবে আমি যে কতটা ব্যর্থ, সেটাই অনুভব করেছিলাম।
প্রশ্ন: তাবড় ব্যক্তিত্বরা আপনার জাদু দেখেছেন। শো দেখে কার প্রশংসা এখনও মনে রয়েছে?
পি সি সরকার: কোনও তারকা নন, একটি ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েকে মনে আছে। কলকাতায় শো করছি। শোয়ের পর গ্রিনরুমে দেখি মেয়েটি হাজির। ওর জন্মদিন। সুন্দর একটা ফুলতোলা জামা পড়েছে। ঠিক যেন বাঙালি পরি। সঙ্গে বাবা-মা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমাকে দেখেই বড় বড় চোখ করে মেয়েটির পর পর প্রশ্ন, ‘‘তুমি কি রাজপুত্র? তুমি কি লড়াই করতে পারো?’’ আমি হাসছি। তার পরেই বলে উঠল, ‘‘তুমি আমাকে বিয়ে করবে?’’ (হাসতে হাসতে) এই কথাটা আমার আজও মনে পড়লে হেসে ফেলি।
প্রশ্ন: মৃত বা জীবিত— যে কোনও তিন ব্যক্তিকে ম্যাজিক দেখানোর সুযোগ পেলে তাঁরা কারা হবেন?
পি সি সরকার: (মুচকি হেসে) প্রথম, জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ড। দ্বিতীয় ,আমার বাবা পি সি সরকার সিনিয়র এবং তৃতীয় ব্যক্তি আমি নিজে।
প্রশ্ন: ম্যাজিক নিয়ে এখনও কোনও স্বপ্ন দেখেন?
পি সি সরকার: দেখুন, আমি গর্বিত বাঙালি। সরকার আমার জন্য কী করেছে, সেটা ভাবি না। বরং আমি বাঙালির জন্য কী রেখে যেতে পারলাম, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। একটা প্রেক্ষাগৃহ তৈরির ইচ্ছে আছে। সেখানে নিজের শর্তে বড় আকারের ম্যাজিক দেখাতে চাই। (কিছু ক্ষণ চুপ থেকে) সেই সময় আর আমি পাব কি না, সেটা জানি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy