‘সন্তান’ ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তীর লুক। ছবি: সংগৃহীত।
তাঁকে হাতের নাগালে পাওয়া কঠিন। কিন্তু সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য বেঙ্গালুরু থেকে ভিডিয়ো কলে ধরা দিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। সহকারী ফোন হাতে দিতেই ভেসে এল পরিচিত কণ্ঠস্বর, ‘‘কী জানতে চান, বলুন।’’ শুধু তাঁর অনুরোধ ছিল, ছবি মুক্তি পাচ্ছে। তাই রাজনীতি নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। পরবর্তী আধ ঘণ্টায় খোলস ছেড়ে ‘ব্যক্তি’ মিঠুনই যেন বেশি করে ধরা দিলেন। কখনও শৈশবের দিন থেকে সুপারস্টার হওয়ার যাত্রাপথ, কখনও আবার স্ট্রাগলের কঠিন দিন থেকে পরিবার এবং অবশ্যই আগামীর পরিকল্পনা— খোলা মনে কথা বললেন অভিনেতা।
প্রশ্ন: কেমন আছেন আপনি?
মিঠুন: ভালই আছি। এই যে (ফোন তুলে দেখালেন) বেঙ্গালুরুতে আমার নতুন হোটেলের লবিতে বসে আছি। পিছনেই দেখছেন প্রবেশপথ। আপাতত এখানেই কাজে ব্যস্ত রয়েছি। সবে মাত্র হোটেলটা খুলেছে। তাই সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে কি না, দেখতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: আপনার হাতের চোট এখন কেমন আছে?
মিঠুন: বলতে পারি, ২৫ শতাংশ ঠিক হয়েছে। আগের থেকে হাত অনেকটাই সোজা করতে পারছি।
প্রশ্ন: ‘সন্তান’-এর শুটিংয়ের সময় দেখেছিলাম, শটের ফাঁকে আপনি এক মনে ফোনে ভিডিয়ো দেখতেন।
মিঠুন: আমি কিন্তু ‘রিল্স’ দেখি না! আমি নানা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করি। কিছু চোখে পড়লে, তখন হয়তো সেটা নিয়ে ইন্টারনেট ঘাঁটতে শুরু করলাম।
প্রশ্ন: কিন্তু শুনেছি, আপনি ফোন ব্যবহার করেন না। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পছন্দ করেন।
মিঠুন: মোবাইল তো ব্যবহার করি না। আর যে মোবাইলটা আপনি দেখেছিলেন, সেটা আমার স্ত্রীর ফোন। আউটডোরে এলে আমার হাতে দিয়ে দেন। তাতে কোথায় রয়েছি, কী করছি, ট্র্যাক করতে পারেন (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনি ব্যস্ত মানুষ। রান্না করতে পছন্দ করেন। শুটিং না থাকলে বাড়িতে সারা দিন কী ভাবে সময় কাটে?
মিঠুন: বাড়িতে থাকলে আমার ছেলেমেয়েদের জন্য অন্তত একটা পদ রান্না করতেই হবে। তা ছাড়া বাড়িতে আমার ১৮টা বাচ্চা (সারমেয়) রয়েছে। আমার বাড়িতে প্রায় ৭০০টা গাছ রয়েছে। সেগুলোর পরিচর্যা নিজের হাতে করি। এই সব নিয়ে দিব্যি সময় কেটে যায়।
প্রশ্ন: ‘সন্তান’ তো বাবা-ছেলের সম্পর্কের ছবি। আপনার বাবা বসন্তকুমার চক্রবর্তী কি খুব কড়া মানুষ ছিলেন?
মিঠুন: (হেসে) প্রচণ্ড! এক সময় মনে হত, লোকটা আমার জীবনে ভিলেন! তবে এখন বুঝতে পারি, তিনি যদি কড়া না হতেন, তা হলে আমি হয়তো মিঠুন চক্রবর্তী হতে পারতাম না। এখন মনে হয়, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ যদি কিছু হয়, তিনি আমার বাবা। তবে এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আমি বাবা-মায়েদের প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলতে চাই।
প্রশ্ন: অবশ্যই, বলুন না...
মিঠুন: আমরা ভাবতাম, মা-বাবা যে শিক্ষা দেন, সেটাই শ্রেষ্ঠ। আমি অন্তত সেটাই মনে করে বড় হয়েছি। কিন্তু এখন সমাজ বদলে গিয়েছে। মানুষের চিন্তাধারা বদলে গিয়েছে। অনেক মূল্যবোধ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তাই সমাজের বয়স্ক মা-বাবাদের সঙ্গে আজকে যে ভাবে অন্যায় বেড়ে চলেছে, সেটাই এই ছবিতে আমরা দেখাতে চেয়েছি। আর সবচেয়ে বড় বিষয়, এই ছবির বাবা সব কিছু মাথা নিচু করে মেনে নেয় না, সে ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং শেষ পর্যন্ত মামলাও করে।
প্রশ্ন: এই ছবির শুটিংয়ের সময় রাজ চক্রবর্তী (ছবির পরিচালক) বলেছিলেন যে, আবেগঘন দৃশ্যে আপনার অভিনয় দেখে তাঁর চোখে জল এসেছিল। রাজের সঙ্গে প্রথম ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা কী রকম?
মিঠুন: (একটু ভেবে) আগে তো ও আমাকে রিয়্যালিটি শো-এ পরিচালনা করেছে। তবে এই ছবিটার গল্পটা অসাধারণ। রাজ বলতেই আমি রাজি হয়ে যাই। ও খুবই শান্ত এবং কাজটা ভাল বোঝে। ‘সন্তান’-এর মতো ছবি কিন্তু পরিচালনা করা সহজ কাজ নয়। রাজ অসাধারণ কাজ করেছে। বিশেষ করে বলেই দিচ্ছি, ছবির ক্লাইম্যাক্স কিন্তু দর্শককে কাঁদাবেই।
প্রশ্ন: কেরিয়ারে সাড়ে তিনশোর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। জানতে ইচ্ছে করছে, মিঠুন চক্রবর্তীকে কি এখনও কোনও চরিত্রের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নিতে হয়?
মিঠুন: ওরে বাবা! নিতে হয় না নাকি! সব বাবার চরিত্র তো এক রকম নয়। এই ছবিতে যে বাবা, সে তো অন্য ছবির থেকে আলাদা। এটা ‘প্রজাপতি’র বাবা নয়। তাই আমাকে আলাদা করে ভাবতেই হয়।
প্রশ্ন: আপনার ছেলেমেয়েরা আপনাকে কতটা আগলে রাখেন?
মিঠুন: আমাকে তো সবাই বকাবকি করে (মুচকি হাসি)।
প্রশ্ন: সবচেয়ে বেশি কে বকেন?
মিঠুন: (হেসে) মেয়ে (দিশানী চক্রবর্তী) বেশি বকাবকি করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা, মেয়ের কাছে বকুনি খাই। আমার তো একটাই মেয়ে। তাই কিছু করার নেই (হাসি)। যাঁদের একটিই মেয়ে রয়েছে, তাঁরা হয়তো বিষয়টা আরও ভাল বুঝতে পারবেন। তবে আমার ছেলেরাও কিন্তু আমার প্রতি ততটাই দায়িত্বশীল। আসলে আমার সঙ্গে আমার সন্তানদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
প্রশ্ন: আপনার ছেলে মিমো এবং নমশির সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, আপনাকে নিয়ে তাঁরা খুবই গর্বিত। মন খুলে বলেন, আপনি নাকি তাঁদের জন্য কখনও কারও কাছে কোনও রকম সুপারিশ করেননি। এটা কি সত্যি?
মিঠুন: দু’হাজার শতাংশ সত্যি! কিন্তু আমি সব সময়েই ওদের বলেছি, তোমাদের নিজের লড়াই লড়তে হবে। আমি জানি, ওরা এখনও লড়াই করছে, খুব কষ্ট করছে। পাশাপাশি এটাও জানি, ওরা সময়ের সঙ্গে আরও শক্ত হয়েছে। কেউ বেশি পেয়েছে, কেউ কম। যেমন, নমশি এখন বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দিল্লি ফাইল্স’-এ অভিনয় করছে। মিমো আবার নীরজ পাণ্ডের ‘খাকি: দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার’ এবং বিক্রম ভট্টের ‘হন্টেড ২’-এ অভিনয় করছে। ওরা সকলেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। কাজ নিয়ে আলোচনা হয়। মতামত বা পরামর্শ দিই। আমি গাইড করি। কিন্তু বলি, ফ্লোরে শট দেওয়ার সময় নিজেকেই সেই চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে হবে।
প্রশ্ন: একজন বাবা হিসেবে আপনার কোনও আক্ষেপ রয়েছে?
মিঠুন: খুব বেশি হলে কী আর করতাম, হয়তো আদর দিয়ে ছেলেমেয়েদের মাথায় তুলতাম! কিন্তু ওরা আমার কাছে আদরও পেয়েছে, শাসনও পেয়েছে। মা-বাবার মূল্যবোধটাও পেয়েছে। বিশেষ করে পিঙ্কি (মিঠুনের স্ত্রী যোগিতা বালি) একজন অসাধারণ মা। আমি যখন শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতাম, তখন ও একা হাতে পরিবারটাকে আগলে রাখত।
প্রশ্ন: কখনও মনে হয়, পরিবারকে আরও একটু বেশি সময় দিতে পারতেন?
মিঠুন: সে রকম মনে হয় না। কারণ খুব ব্যস্ত শিডিউল থাকলে, মাঝে হয়তো এক মাস ছুটি নিয়ে নিতাম। তার পর, পরিবারকে নিয়ে বিদেশে ঘুরতে চলে যেতাম। চার-পাঁচটা দেশ ঘুরে একসঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার ফিরে আসতাম। তবে আদর দিয়ে সন্তানদের মাথায় তোলার মতো বাবা আমি নই (হাসি)। তাই আমার মধ্যে কোনও আক্ষেপ নেই।
প্রশ্ন: আপনি তখন ছেলেমেয়েদের থেকে বকুনির কথা বলছিলেন। আপনার স্ত্রী আপনাকে বকাবকি করেন?
মিঠুন: (হেসে) আগে ও খুবই শান্ত ছিল। খুবই শান্ত মেয়ে। এখন জানি না কী হয়েছে, সব কথাতেই একটু চেঁচামেচি শুরু করে দেয়! আগে মনে হত, এ রকম বৌ ভাবাই যায় না। আর এখন মনে হয়, ওরে বাবা! এ তো ডেঞ্জারাস! এখন একটু ভয় পেতে শুরু করেছি (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনাদের প্রজন্মের ‘পেরেন্টিং’ এবং বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে কোনও পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন?
মিঠুন: বাবা-মায়েরা কিন্তু একই রয়েছেন। একই ভাবে ভালবেসে সন্তানদের বড় করে তুলছেন। কিন্তু ছেলেমেয়েরা বদলে গিয়েছে। যার ফলে যাবতীয় অশান্তির সূত্রপাত। তবে আনন্দবাজার অনলাইনের পাঠকদের বলব, এই ছবিটা দেখার পর আপনারা কিন্তু বুঝতে পারবেন যে, যেখানে রয়েছেন সেটা মা-বাবার জন্যই। জীবনে মা-বাবার অবদানকে ভুলে গেলে বেঁচে থাকা অর্থহীন।
প্রশ্ন: কেরিয়ারে অজস্র চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু এখনও কোনও স্বপ্নের চরিত্রকে ধাওয়া করেন?
মিঠুন: কোনও দিনই ভাবিনি। যা এসেছে, সেই ভাবেই নিজেকে ভেঙেছি এবং কাজ করেছি। তবে প্রত্যেক বারেই নতুন নতুন চরিত্র পেয়েছি। আর এখন তো সিনেমাও অনেকটাই বদলে গিয়েছে। আগে তো একই রকমের ছবি করতাম। নাচ, গান আর অ্যাকশন। একটু ভালবাসা, একটু কমেডি— ব্যস ছবি শেষ! এখন অর্থপূর্ণ চরিত্র করছি বলে অনেক বেশি প্রস্তাব আসে।
প্রশ্ন: এখন আপনি কোনও ছবিতে রাজি হওয়ার আগে কী ভাবে সিদ্ধান্ত নেন?
মিঠুন: আমার মনকে নাড়া দিতে হবে। আমি চাইলে প্রতি দিন ১০টা ছবি সাইন করতে পারি— হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে এত বেশি প্রস্তাব আসে। কিন্তু আমি রাজি হই না। বলি, পারব না। কখনও শরীর ভাল নেই-গোছের মিথ্যাও বলি। এড়িয়ে যাই। আসলে এখন আমার গল্প পছন্দ না হলে, আমি সেই ছবি করব না।
প্রশ্ন: ঋত্বিক (ঋত্বিক চক্রবর্তী) বলেছেন, এই ছবিতে প্রথমে আপনার সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে একটু ভয় পেয়েছিলেন। কেমন লেগেছে ওঁর অভিনয়?
মিঠুন: টেরিফিক অভিনেতা! ও কেন এ রকম বলছে, জানি না। আমরা কিন্তু খুব ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছি। আর বন্ধুত্ব তখনই হয়, যখন নিজেদের মধ্যে সম্পর্কটা মধুর হয়ে ওঠে। এই ছবিতে ঋত্বিক দর্শককে চমকে দেবে। এতটাই সাবলীল অভিনয়, দর্শকের ইচ্ছে হবেই ওকে গিয়ে একটা চড় মারতে বা ওর গলা টিপে দিতে! এটাই ওর ক্রেডিট। এটাই তো ভাল অভিনয়ের দৃষ্টান্ত।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে গত কয়েক বছর ধরেই বাংলা ছবির পরিস্থিতি নিয়ে কাটাছেঁড়া হচ্ছে। মিঠুন চক্রবর্তীর ছবি মুক্তির আগে এখনও একটা আলাদা উন্মাদনা তৈরি হয়। বিষয়টাকে কী ভাবে দেখেন?
মিঠুন: এই উন্মাদনা তৈরি হয়, কারণ দর্শক জানেন মিঠুন চক্রবর্তীর ছবি মানেই সেখানে নতুন কিছু থাকবে। কিছু তো একটা ম্যাজিক থাকবে। তাই একই রকমের ছবি করলে একদিন এই উন্মাদনাও নষ্ট হয়ে যাবে। দর্শকের এই উন্মাদনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই কিন্তু আমি প্রচুর স্বার্থত্যাগ করি। অর্থ সকলেই উপার্জন করতে চান। কিন্তু খুব কম অভিনেতা আমার মতো স্বার্থত্যাগ করতে পারেন।
প্রশ্ন: আপনাকে দর্শক ফাটাকেষ্টর চরিত্রে দেখেছেন। খুব জানতে ইচ্ছে করছে মিঠুন চক্রবর্তীর বায়োপিক তৈরি হলে, সেখানে কোন অভিনেতা চরিত্রটার সঙ্গে জাস্টিস করতে পারবেন বলে মনে হয়?
মিঠুন: প্রথমত, এ রকম প্রস্তাব এলে আমি না বলে দিই। অনেকেই তৈরি করতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি।
প্রশ্ন: কেন বলুন তো?
মিঠুন: আমি চাই না আমার বায়োপিক তৈরি হোক। কারণ সেখানে শুধুই দুঃখ! আমার প্রত্যেকটা দিন স্ট্রাগল। নতুন প্রজন্মের যাঁরা মন শক্ত করে পায়ের নীচের জমি শক্ত করার জন্য লড়াই করছেন, আমার বায়োপিক দেখলে তাঁদের মন ভেঙে যাবে। কেউ কেউ হয়তো অভিনয় ছেড়েই দেবেন। আর আমি সেটা চাই না। আমি শুধু একটাই কথা বলি— আমি যদি পারি, তা হলে তুমিও একদিন পারবে।
প্রশ্ন: কিন্তু স্ট্রাগলের পর আপনার প্রাপ্তির ঝুলিও তো বিশাল। সাড়ে তিনশোর উপর ছবি। জাতীয় পুরস্কার, পদ্মশ্রী, দাদা সাহেব ফালকে সম্মান...
মিঠুন: (থামিয়ে দিয়ে) নিশ্চয়ই আছে। অবশ্যই আছে। কিন্তু ৯৭ শতাংশ যন্ত্রণা এবং আমার লড়াই। আমি নিশ্চিত, এতটা কষ্ট কেউ মেনে নিতে পারবে না।
প্রশ্ন: শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও এই বয়সে পর পর অভিনয় করে চলেছেন। কখনও একঘেয়েমি আসে? অবসর নিয়ে কোনও ভাবনা?
মিঠুন: একদম নয়। বরং নতুন নতুন চরিত্র আমাকে আরও বেশি অভিনয় করার মনোবল জোগাচ্ছে। আমার মোটিভেশন এখনও বেঁচে রয়েছে।
প্রশ্ন: মিঠুন চক্রবর্তীর পর বাংলা থেকে জাতীয় স্তরে আর কোনও সুপারস্টার উঠে এল না কেন?
মিঠুন: (একটু ভেবে) জানেন, উঠে আসতেই পারত। অনেকেই ছিলেন, যাঁরা নিশ্চিত পারতেন। কিন্তু তাঁরা তখন আমার মতো ঝুঁকি নিতে পারেননি। তাঁরা ভাবেননি যে, ‘যাই, একটু বম্বেতে গিয়ে চেষ্টা করি’। আসলে তখন হয়তো তাঁদের মনে হয়েছিল, বম্বেতে সফল না হলে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিও হাতছাড়া হয়ে যাবে। এখানে তো তখন তাঁদের স্টারডম রয়েছে, পায়ের নীচের জমি শক্ত। সেই নিরাপত্তাহীনতার ভয় থেকেই হয়তো তাঁরা ঝুঁকি নিতে পারেননি। তবে এই ভাবনার মধ্যে আমি তাঁদের কোনও দোষ দেখি না।
প্রশ্ন: কিন্তু ‘মৃগয়া’র পর উত্তর কলকাতার গলি থেকে আজ থেকে পাঁচ দশক আগে আপনি কী ভাবে ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন?
মিঠুন: (হেসে) একটু হিম্মত চাই। কিছুটা ঝুঁকি তো ছিলই। আসলে আমি ভেবেই নিয়েছিলাম যে, আমি স্টার হব। আমাকে পারতেই হবে। আমার এই গায়ের রং আমাকে পিছিয়ে দিয়েছে। সেটাকে ভোলাতে হবে। ‘মৃগয়া’য় একটা আদিবাসীর চরিত্রে অভিনয় করে হিরো হলাম। সেখান থেকে জাতীয় পুরস্কার পেলাম। সেখান থেকে জাতীয় পর্যায়ে এক নম্বর হিরো— সুপারস্টার! তার পর সেই স্টারডমকে ধরে রাখা। প্রচুর ঝুঁকি নিয়েছি জীবনে। লড়েছি এবং গন্তব্যে পৌঁছেছি।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। আজকে কখনও আপনার লড়াইয়ের দিনগুলোকে ফিরে দেখলে কী মনে হয়?
মিঠুন: (একটু ভেবে) খুব ভয় লাগে। হাত-পা কাঁপে! নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকি।
প্রশ্ন: জীবনে তো আপনি এত কিছু পেয়েছেন। তার পরেও নিরাপত্তাহীনতা!
মিঠুন: (ভাবুক মনে) মনে হয়, আবার যেন সেই জীবন ফিরে না আসে। আমার ছেলেমেয়েরা যেন আমার মতো কষ্ট না পায়। সত্যিই বলছি, ভাবলে খুব... খুব ভয় পাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy