Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Soumitra Chatterjee grand daughter

‘কলকাতায় এত বছর থেকেও বিশেষ সুযোগ পাইনি’, উপলব্ধি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতনি মেখলার

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতনি মেখলা বসু অভিনীত ওয়েব সিরিজ় ‘হোয়্যাক গার্লস’ মুক্তি পেয়েছে। নিজের পরিবার এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।

Mekhola Bose granddaughter of late actor Soumitra Chatterjee speaks about her new web series Waack Girls

(বাঁ দিকে) সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। মেখলা বসু (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:১৫
Share: Save:

কলকাতার মেয়ে। টলিপাড়ার সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। কারণ, মেখলা বসু হলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতনি। তবে মেখলার কাজের মূল ক্ষেত্র হল নৃত্যশিল্প। মুম্বইয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করছেন। পাশাপাশি অভিনয়ও করছেন। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে মেখলার প্রথম হিন্দি ওয়েব সিরিজ় ‘হোয়্যাক গার্লস’। মুম্বই থেকে ভিডিয়ো কলে আনন্দবাজার অনলাইনকে তাঁর সফরের আখ্যান শোনালেন অভিনেত্রী।

চার বছর আগে মুক্তি পায় মেখলা অভিনীত ছবি ‘ইয়ে ব্যালে’। দ্বিতীয় কাজের ক্ষেত্রে এতটা সময় লাগল কেন? মেখলার সহজ উত্তর, ‘‘সেই ভাবে কোনও অডিশনে সফল হইনি। অতিমারির পর নিজের কাজের ব্যস্ততাও ছিল। তার পর এই সিরিজ়টার শুটিংও শুরু হয়ে যায়।’’ মেখলা জানালেন, শুরুর দিকে তিনি খুব একটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। কিন্তু মুম্বইয়ে ব্যারি জনের কাছে অভিনয় শেখার পর এখন তিনি আগের তুলনায় অনেকটাই মনোবল পেয়েছেন।

কলকাতা শহরে একটি নাচের দলের লড়াইয়ের কাহিনিকে কেন্দ্র করে সিরিজ়টি তৈরি করেছেন পরিচালক সুনি তারাপুরওয়ালা। কেন্দ্রে রয়েছে মেখলা অভিনীত চরিত্র ঈশানী। তাঁর নিজের এবং ঈশানীর মধ্যে যে অনেকটাই মিল রয়েছে, সে কথাও জানালেন মেখলা। বললেন, ‘‘চরিত্রটা কলেজে পড়ে। ওই বয়সে আমারও ওর মতোই মানসিকতা ছিল। ঈশানীর মতোই আমি কিন্তু পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে নিজের কেরিয়ার তৈরির মনোবল পেয়েছি।’’

নাচের মাধ্যমে নিজের প্রতিভাকে তুলে ধরার প্রক্রিয়াই ‘হোয়্যাকিং’ নামে পরিচিত। ২০ বছর বয়স থেকে নাচকে কেন্দ্র করেই নিজের কেরিয়ার তৈরির প্রচেষ্টার রয়েছেন মেখলা। তাঁর মতে তিরিশের কোঠায় পা রাখার পর, ধীরে ধীরে তিনি যে পরিশ্রমের ফল দেখতে পাচ্ছেন, সেটাই তাঁর কেরিয়ারের ‘হোয়্যাকিং’ মুহূর্ত।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতনি হওয়া সত্ত্বেও টলিপাড়ায় তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই বলেই জানালেন মেখলা। কারণ, টলিপাড়ার পরিবর্তে কলকাতার নৃত্যজগতের অলিগলিতেই তাঁর যাতায়াত বেশি। বাংলা থেকে তাঁর কাছে কি প্রস্তাব আসে? অকপট মেখলার জবাব, ‘‘এত বছর কলকাতায় থেকে নতুন নৃত্যশিল্পীরা তাঁদের প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য কোনও সুযোগ পেয়েছেন বলে জানি না! আমরা যা করেছি, নিজেদের চেষ্টায় করেছি।’’ কিন্তু, এই প্রসঙ্গে পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তকে ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না মেখলা। কারণ, পরিচালকের ‘ওয়ান’ ছবিতে মেখলার দল কোরিয়োগ্রাফির সুযোগ পায়। তবে ‘স্ট্রিট ডান্স’ নিয়ে ভবিষ্যতে কলকাতায় আরও দরজা খুলে যাবে বলে আশাবাদী মেখলা।

image of Mekhla Bose and Barun Chanda

‘হোয়্যাক গার্লস’ সিরিজ়ের একটি দৃশ্যে মেখলা বসু এবং বরুণ চন্দ। ছবি: সংগৃহীত।

কলকাতায় সুযোগ না পেলেও, মুম্বই কাউকে ফিরিয়ে দেয় না বলেই বিশ্বাস করেন মেখলা। তাঁর যুক্তি, ‘‘সারা দেশের শিল্পীরা মুম্বইয়ে আসেন। কাজের সুযোগও বেশি। কাজ পাওয়া কঠিন হলেও প্রত্যেকের জন্যই এখানে কিছু না কিছু রয়েছে।’’ মুম্বইয়ে ভাগ্যান্বেষণের ক্ষেত্রে মেখলার মন্ত্র, ‘‘ভাগ্যের পাশাপাশি চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। চটজলদি সাফল্য আসে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে মেখলার কাছে প্রশ্ন ছিল, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতনি হওয়ার সুবিধা এবং অসুবিধা কী কী? মেখলা অবশ্য এর মধ্যে কোনও ‘অসুবিধা’ খুঁজে পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে সবটাই প্রাপ্তি। ছোটবেলায় তিনি আমাদের গল্প শোনাতেন, নেচে দেখাতেন। দাদু হিসাবে উনি ছিলেন সেরার সেরা।’’ দাদুর থেকে কেরিয়ার প্রসঙ্গে কী টিপ্‌‌স পেয়েছিলেন তিনি? মেখলা বললেন, ‘‘দাদু এটাই বলতেন যে মন যেটা চায়, সেটাই যেন করি। ছোট থেকে আমি ওঁর এই পরামর্শই মেনে চলেছি। আজকে হয়তো তারই ফল পাচ্ছি।’’

২০২০ সালে মেখলার অভিনীত প্রথম ছবি প্রকাশ্যে আসে। সে বছরই প্রয়াত হন সৌমিত্র। তবে, তিনি নাতনির কাজটি দেখেছিলেন। খুশিও হয়েছিলেন। ‘ওয়্যাক গার্লস’ দেখলে মেখলাকে কী বলতেন তিনি? অভিনেত্রী হেসে বললেন, ‘‘আমার প্রথম ডান্স ব্যাটেল জেতা থেকে শুরু করে কোনও ব্যান্ডের প্রতিযোগিতা— তিনি সব সময়েই আমাকে সাপোর্ট করতেন। উনি তো আমার দাদু, সেখানে ভালবাসা রয়েছে। তাই নিশ্চয়ই কাজটাকে সমালোচকের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতেন না।’’

মা পৌলমী বসুর নাটকের দলেও (‘মুখোমুখি’) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কালমৃগয়া’য় কোরিয়োগ্রাফি করেছিলেন মেখলা। সেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও অভিনয় করেছিলেন। নিজের স্বপ্নের উড়ানের পথে মায়ের সমর্থনকেও আলাদা ভাবে উল্লেখ করলেন মেখলা। মেখলার দাদা রণদীপ বসু এক সময়ে নতুন প্রতিভা হিসেবে টলিপাড়ায় নজর কাড়েন। বছর ছয়েক আগে একটি দুর্ঘটনা বদলে দেয় তাঁর জীবনের গতিপথ। তবে মেখলা জানালেন, রণদীপ দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দাদা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। শুটিংয়ের গল্প থেকে শুরু করে আমার নাচ— সব কিছু দাদাকে জানাই। দাদা আমার কাজও দেখে। আমাদের নিয়মিত কথা হয়।’’

স্কুলজীবনের পর, ১৬ বছর বয়স থেকে নাচকে অবলম্বন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে শুরু করেন মেখলা। তার পর ২০১৪ সাল থেকে মুম্বইয়ে ধীরে ধীরে কাজের সুযোগ পেতে শুরু করেন। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে মুম্বইয়ে পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেছেন তিনি। শহরের বাইরে থাকলেও কয়েক মাস পর পর কলকাতায় আসেন তিনি। নিজের শহর থেকে ভবিষ্যতে নাচ বা অভিনয়কে কেন্দ্র করে কোনও প্রস্তাব এলে তিনি যে তা লুফে নেবেন, সে কথাও জানালেন মেখলা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy