আবীর চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
প্রশ্ন: নতুন বছরের শুরুতেই সাক্ষাৎকার। ‘রেজ়োলিউশন’-এ বিশ্বাস করেন?
আবীর: (হেসে) না, একদমই করি না।
প্রশ্ন: গত বছর তো আপনার ভালই কেটেছে। পাঁচটা ছবি মুক্তি পেয়েছে।
আবীর: তার জন্য পরিচালক এবং প্রযোজকদের ধন্যবাদ। কারণ, তাঁরা আমাকে বিভিন্ন রকম চরিত্রে ভেবেছেন এবং সুযোগ দিয়েছেন। যদিও এর মধ্যে ‘মায়াকুমারী’র শুটিং হয়েছিল অতিমারির আগে। সেখানে আমার দ্বৈত চরিত্র ছিল। আবার ‘ফাটাফাটি’ এবং ‘রক্তবীজ’, একই প্রযোজনা সংস্থার হলেও দুটো ছবির গল্পের মধ্যে কোনও মিল নেই। ‘বিয়ে বিভ্রাট’ ছবিতে অভিনয় উপভোগ করেছিলাম। হয়তো দর্শক ছবিটা সেই ভাবে দেখেননি। পরে কিন্তু ওটিটিতে তাঁরা দেখেছেন। আর বছরের শেষে ‘কাবুলিওয়ালা’ চিরন্তন গল্প। দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচক— প্রত্যেকেরই ভাল লেগেছে। পাঁচটা ছবি একে অপরের থেকে আলাদা। তাই অভিনেতা হিসেবে আমি খুশি।
প্রশ্ন: ‘রক্তবীজ’-এর পর ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাকে নাকি অ্যাকশন হিরো হিসেবে ভাবা হচ্ছে। কিন্তু আপনি যে কোনও ছবিতে সাবলীল। কোনও ব্যক্তিগত পছন্দ রয়েছে?
আবীর: বিভিন্ন ধরনের চরিত্র করার সুযোগ পাচ্ছি, সে জন্য ভাল লাগছে। তবে আমার একটু হালকা চালের মজার ছবিতে অভিনয় করতে বেশি ভাল লাগে। তার মানে আবার এ রকম নয় যে, সিরিয়াস ছবি করব না।
প্রশ্ন: ফেলুদা, ব্যোমকেশ, সোনাদা— এতগুলো গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করার পর আবার পর্দায় গোয়েন্দা হতে রাজি হলেন কেন?
আবীর: এই ‘কেন’-টাই ছবির বিষয়। আমারও এটাই প্রশ্ন যে, কেন এত গোয়েন্দা? কেন দর্শক গোয়েন্দা গল্প বেশি পছন্দ করেন? আর যদি সত্যিই সেটা হয়, তা হলে এক সময়ে এত জনপ্রিয় দীপক চ্যাটার্জিকে বাড়িতে বইয়ের আলমারিতে লুকিয়ে রাখা হত কেন? কেন বাকিদের সঙ্গে জায়গা দেওয়া হল না? কেন আজকে দীপককে হারিয়ে যেতে হল? দীপক চ্যাটার্জি ‘এলিট’ গোয়েন্দা নয়। দেবালয় যে হেতু এই ছবির মাধ্যমে স্রোতের বিপরীতে হাঁটতে চেয়েছে, তাই আমাকেই ও পছন্দ করেছিল।
প্রশ্ন: এতগুলো গোয়েন্দা চরিত্রের মধ্যে অভিনেতা হিসেবে মৌলিকত্ব রাখাও তো নিশ্চয়ই কঠিন?
আবীর: সেটাই তো চ্যালেঞ্জ। তবে সেটায় আমি সফল হয়েছি কি না, সেটা তো দর্শক বলবেন। আমি ভাবলাম যে, আমি স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে পেরেছি। এ দিকে দর্শক দেখে বললেন যে একই রকম লাগছে। তা হলে তো আমার প্রচেষ্টা বিফল।
প্রশ্ন: ‘বাদামী হায়না...’ থেকে দর্শক আলাদা কী পাবেন?
আবীর: প্রচুর অ্যাকশন রয়েছে। একদম অচেনা লোকেশনের মাধ্যমে একটা অন্য কলকাতাকে দেখানো হয়েছে। আর স্বপনকুমার এবং দীপক চ্যাটার্জি। স্রষ্টা এবং সৃষ্টির মধ্যে কথোপকথন। মনে হচ্ছে দর্শকের পছন্দ হবে।
প্রশ্ন: স্বপনকুমারের লেখা ছেলেবেলায় পড়েছিলেন?
আবীর: আমি পড়িনি। কিন্তু প্রথম যখন ব্যোমকেশ চরিত্রে অভিনয় করি, তখন স্বপনকুমার এবং দীপক চ্যাটার্জির পৃথিবী নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছিলাম।
প্রশ্ন: তা হলে এই ছবির প্রস্তুতি কী ভাবে নিয়েছিলেন?
আবীর: আগের যা ধারণা ছিল, তার সঙ্গে দেবালয়ের (পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য) ভিশনের উপর পুরোপুরি নির্ভর করেছি। কারণ, চরিত্রগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে এই গল্পটা দেবালয়ের লেখা। তাই কী করতে হবে সেটা ও সব থেকে ভাল জানে।
প্রশ্ন: আপনার অভিনীত গোয়েন্দা চরিত্রদের মধ্যে ব্যক্তিগত পছন্দের নিরিখে কাকে এগিয়ে রাখবেন?
আবীর: (হেসে) বলা কঠিন। কারণ, প্রতিটা চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। তার পরেও যদি বেছে নিতে বলা হয়, তা হলে আমি ব্যোমকেশকে এগিয়ে রাখব। আবার কয়েক বছরের মধ্যেই সোনাদা বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু তুল্যমূল্য বিচারে এখনও হয়তো ব্যোমকেশ কিছুটা এগিয়ে থাকবে। কারণ, বৈগ্রহিক একটা চরিত্র এবং ব্যোমকেশ দিয়ে আমার জনপ্রিয়তা এবং পথচলা শুরু।
প্রশ্ন: ১০ বছর পর আবার রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে ছবি করছেন। ‘বাবলি’ নিয়ে আপনি কতটা উত্তেজিত?
আবীর: খুব বেশি কিছু এখনই বলতে পারব না। আপাতত প্রস্তুতি চলছে। শুটিংও শুরু হয়নি। তবে হ্যাঁ, ‘কাটমুণ্ডু’র পর আবার রাজের সঙ্গে কাজ। শুভশ্রীর সঙ্গে প্রথম কাজ। বুদ্ধদেব গুহর জনপ্রিয় উপন্যাস। অনেক আগে এক বার এই ছবিটা নিয়ে কথা হয়েছিল। কিন্তু অতিমারির জন্য তখন কিছু করা সম্ভব হয়নি। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে একটা ভাল ছবি তৈরি হবে।
প্রশ্ন: ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে অভিনয় করলেন। কী শিখলেন ওঁর থেকে?
আবীর: এটা সত্যিই আমার কাছে একটা অন্য রকম প্রাপ্তি। একটা মানুষ, যিনি এখনও নিজের সুপারস্টারডম ধরে রেখেছেন, তাঁকে নিয়ে আর কী-ই বা বলতে পারি! মুম্বই বলে নয়, এখানেও একদম একই রকমের খিদে নিয়ে মিঠুনদা অভিনয় করছেন। তার ফল দেখতেই পাচ্ছি। অনেকেই বলছেন ‘কাবুলিওয়ালা’য় মিঠুনদা ওঁর জীবনের সেরা অভিনয় করেছেন। ওঁর মতো অভিনেতার সঙ্গে একই ফ্রেমে থাকা এবং সামনে থেকে অভিনয় করতে দেখাই অনেক কিছু শেখায়।
প্রশ্ন: আপনারা তো ইন্ডাস্ট্রির অনেক ভাঙাগড়া সামলে আজকে একটা জায়গায় পৌঁছেছেন। অনেকেই বলেন, নতুনদের মধ্যে নাকি ধৈর্যের বড্ড অভাব। কী বলবেন?
আবীর: আমার সেটা মনে হয় না। নতুনদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের সঙ্গে গত দু’তিন বছরে কাজ করলাম। আমার তো বেশ ভাল লেগেছে। অনেকেই পরিশ্রম করছে। এদের মধ্যে অনেকেই বেশ জনপ্রিয়। এই প্রজন্ম মানেই, তারা বড়দের সম্মান করে না বা ধৈর্য নেই— বিশ্বাস করি না। প্রত্যেকেই নিজের মতো করে চেষ্টা করছে। আসলে সময়ের একটা দাবি থাকে। আমরা হয়তো ওদের লড়াই এবং চ্যালেঞ্জটা বুঝতে পারছি না।
প্রশ্ন: বছরের শুরুতে সারা বছরের প্ল্যানিং করে এগোতে পারেন?
আবীর: সারা বছরেরটা সম্ভব হয় না। তবে শুরুর কয়েক মাসের একটা ধারণা থাকেই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অ্যাকাউন্টসের খাতার মতো হিসাব করে এগোনো মুশকিল। এক রকম ভেবে হয়তো শুরু হল। পরে দেখা যাবে, সেই হিসেব মিলল না (হাসি)।
প্রশ্ন: আবীর চট্টোপাধ্যায় কি ‘বক্স অফিস’-এ বিশ্বাস করেন?
আবীর: অবশ্যই। বক্স অফিসে ছবির সাফল্য আমাকে তো দারুণ উত্তেজিত করে। একই সঙ্গে আরও একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই। বক্স অফিসের পরিসংখ্যান কিন্তু একমাত্র প্রযোজক এবং পরিবেশকদের কাছে থাকে। বাকি যে আলোচনাটা আমরা দেখি, সেটা ভিত্তিহীন।
প্রশ্ন: কিন্তু তার পরেও তো আলোচনা থামে না।
আবীর: দেখুন, আমি নিজে এটা বিশ্বাস করি। যে বিষয়টায় আমার পারদর্শী আমার সেটা নিয়েই কথা বলা উচিত। আজকে যিনি আমার সিনেমাটোগ্রাফার, তিনি কেন লাইটটা এ রকম করলেন, সেটা তিনিই ভাল বলতে পারবেন। সেখানে আমি পরামর্শ দিতে পারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে কিন্তু তার কথা শুনতে হবে। ডাবিংয়ের সময় সাউন্ড রেকর্ডিস্ট যদি কোনও একটা সংলাপ বলার ধরন দেখিয়ে দেন, সেটা আমাকে শুনতে হবে। কারণ, তিনি এই বিষয়ে পারদর্শী।
প্রশ্ন: মুম্বইয়ে মাঝে কাজ করেছিলেন। এখন তো টলিউডের অনেকেই বাংলার তুলনায় সারা বছর মুম্বইয়ে বেশি সময় কাটাচ্ছেন। আপনার ইচ্ছে করে না?
আবীর: এখন সে রকম কোনও ইন্টারেস্টিং প্রস্তাব নেই। এলে তখন ভাবা যাবে। এখানকার কাজগুলো আপাতত মন দিয়ে করতে চাই।
প্রশ্ন: এই বছর তো আপনার বেশ কয়েকটা ছবি মুক্তির অপেক্ষায়।
আবীর: হ্যাঁ। ‘ডিপ ফ্রিজ’ এবং ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ ইফিতে (গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব) প্রশংসিত হয়েছে। অনীকদার (অনীক দত্ত) ‘যত কাণ্ড কলকাতায়’ ছবিটার ডাবিং বাকি আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy