Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শপথের পর ক্লাইম্যাক্সটা পাল্টাব

নরেন্দ্র মোদীর জীবন অবলম্বনে ছবি ‘নমো’। কান থেকে ছবির পরিচালক রূপেশ পল কথা বললেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত-র সঙ্গে।ছবির নাম ‘নমো’। কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম নরেন্দ্র। পদবিটা উহ্য। পরিচালকের নাম রূপেশ পল। আপাতত তিনি কান চলচ্চিত্র উত্‌সবে ব্যস্ত। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবি তৈরি করছেন রূপেশ। নাম ‘দ্য ভ্যানিশিং অ্যাক্ট’।

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

ছবির নাম ‘নমো’।

কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম নরেন্দ্র। পদবিটা উহ্য।

পরিচালকের নাম রূপেশ পল। আপাতত তিনি কান চলচ্চিত্র উত্‌সবে ব্যস্ত। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবি তৈরি করছেন রূপেশ। নাম ‘দ্য ভ্যানিশিং অ্যাক্ট’। সে ছবির টিজার লঞ্চ করে বিদেশে বেশ আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন তিনি। দেশে ফিরে তিনি দেখা করতে চান ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ইচ্ছে আছে তাঁকে দিয়েই ‘নমো’ ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করাবেন রূপেশ। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

তবে বিতর্ককে একদম ভয় পান না রূপেশ। তাঁর পরিচালিত ‘কামসূত্র থ্রিডি’ নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। এ বার কেউ বলেছেন এমএইচ৩৭০-এর ট্র্যাজেডি নিয়ে ছবি তৈরি করে ব্যবসা করছেন তিনি। “মিডিয়া যে সারাক্ষণ এই ঘটনা নিয়ে ব্রেকিং নিউজ করে ব্যবসা করে, সেটা নিয়ে তো কেউ কোনও কথা বলে না! ডিরেক্টর হয়ে ছবি বানালেই যত দোষ? আমি হলফ করে বলতে পারি যে আমার ছবির জন্য মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানের ২৩৯ জন নিখোঁজ যাত্রীর কোনও আত্মীয় দুঃখ পাবেন না। কর্পোরেট ফান্ডিং থাকলে রোম্যান্টিক ছবি বানাতে কোনও অসুবিধে নেই। কিন্তু সেটা না থাকলে তো এই ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করতেই হবে। মানুষের নজর কাড়তে অন্য ধরনের বিষয় নিয়েই ছবি করাটা জরুরি,” বলছেন পরিচালক।

‘নমো’কে ঘিরেও বিতর্ক শুরু হয়েছে। এক সময় শোনা গিয়েছিল পরেশ রাওয়াল অভিনয় করবেন ছবিটিতে। এখন উঠে এসেছে ভিক্টরের নাম। এ বছর লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব আহমেদাবাদ থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেছেন পরেশ। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিজেপির হয়ে ১৯৯১ সালে লড়েছিলেন নির্বাচনে। নরেন্দ্রর চরিত্রে কে অভিনয় করছেন, তা নিয়ে রূপেশ জানান, “প্রথম যখন ছবিটার কথা হয়, তখন আমি আর মিতেশ পটেল মিলে ছবিটা প্রযোজনা করার কথা ছিল। আমাকে বলা হয়েছিল যে, ছবিটা পরেশ রাওয়ালকে নিয়েই করতে হবে। পরেশ চেয়েছিলেন এই ছবিটা ওঁর মতো করে করতে। আমি জানি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পরেশ রাওয়ালের খুব ভাল যোগাযোগ।”

তা হলে অসুবিধেটা হল কোথায়? “পরেশ রাওয়াল বলিউডে এত ছবি করেছেন যে ওঁর একটা স্ট্রং ইমেজ তৈরি হয়েছে। ওই ইমেজ ভাঙাটা আমার পক্ষে খুব শক্ত। বলিউড ছবির ইমেজটা নিয়ে কাজ করলে সেটা আমার ‘নমো’কেও অ্যাফেক্ট করবে। কিন্তু ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে আমার এই সমস্যাটা হবে না। আর কী সাঙ্ঘাতিক ভাল সব সিনেমাতে অভিনয় করেছেন উনি। ওঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে বহু দিনের।”

তবে পরেশ রাওয়ালকে নিয়েও যে অন্য একটা মোদী-বায়োপিক হচ্ছে, সে খবর রূপেশের অজানা নয়। “মিতেশ পটেল যদি মোদীজিকে নিয়ে অন্য কোনও ছবি বানান তার নাম কী হবে, সেটা আমি জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি যে, ‘নমো’ টাইটেলটা আমার নামেই রেজিস্ট্রি করা আছে। আমি তো এটাও শুনলাম যে মধুর ভান্ডারকরও নাকি মোদীকে নিয়ে একটা ছবি বানাচ্ছে! সে দিক থেকে দেখতে গেলে তিনটে ছবি তৈরি হচ্ছে মোদীকে নিয়ে। মধুর যদি সত্যিই এমন ছবি করেন, তা হলে আমার কাছে সেটা ভাল খবর। মধুর ভাল ছবি তৈরি করে। তাই এখন মনে হচ্ছে কম্পিটিশনটা বেশ জোরদার হবে। একটা লম্বা বোরিং জীবনী বানাতে চাই না আমি। একদম থ্রিলার ফরম্যাটে তৈরি করব ছবিটা। অনেকটা ‘জেএফকে’র মতো হবে,” বলছেন পরিচালক।

সঙ্গে এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে তিনিই প্রথম পরিচালক যিনি ‘নমো’ ছবিটার কথা ঘোষণা করেছিলেন। “কিন্তু দু’মাস আগে আমার ইনভেস্টররা বলেছিলেন যে নির্বাচনের আগে যেন ছবিটা একটু হোল্ড করে রাখি,” বলেন রূপেশ।

কেন এমন সিদ্ধান্ত? “তখনও জাতীয় নির্বাচনের ফলটা কেউ জানত না। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এনসিপি যুগ্ম সরকার। ছবির সব ডিস্ট্রিবিউটররাই তো মুম্বইতে। তাই আমাকে ইনভেস্টররা বললেন যে ছবিটা যেন একটু থামিয়ে রাখি,” বলছেন পরিচালক।

এত সবের মধ্যে, বায়োপিকটা নরেন্দ্র মোদীর অথেন্টিকেশন করার কথা ভেবেছেন কখনও? “আমার সিনেমাটা কিন্তু মোদীজির জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। হুবহু জীবনী নয়। তবে চিত্রনাট্য লেখার সময় আমি এমন দু’জনকে কনসাল্ট করেছিলাম, যাঁরা আমাকে মোদীজির জীবনের সত্যি ঘটনাগুলো জানিয়েছিলেন। কোনও সংশয় থাকলে আমি সেগুলোকে ক্রসচেক করে নিতাম,” বলছেন পরিচালক।

এ দিকে ইতিমধ্যেই তিনি ছবির ১৬-টা দৃশ্যের শ্যুটিং করে ফেলেছেন। সব ক’টাই নরেন্দ্রর ছোটবেলাকে কেন্দ্র করে। অভিনেতা এক শিশুশিল্পী। নাম কিরণ। ছবিতে নরেন্দ্রর বাবার চায়ের দোকান। “নরেন্দ্রর স্কুল থেকে তার বাবার চায়ের দোকানের দূরত্ব খুব বেশি ছিল না। টিফিনের ঘণ্টি পরলেই দেওয়াল টপকে নরেন্দ্র সোজা চলে যায় তার বাবার চায়ের দোকানের এঁটো থালা মাজতে। সব কাজ সারতে সারতে টিফিনের ঘণ্টা বেজে যায়। আবার নরেন্দ্র ফিরে আসে স্কুলে। আমি শুনেছি এই রকম ঘটনা নাকি মোদীজির জীবনেও হয়েছে,” পরিচালক জানান।

সোমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী। সে ঘটনার উল্লেখও কি থাকছে চিত্রনাট্যে? “আগের চিত্রনাট্যে আমার ক্লাইম্যাক্সটা ছিল মোদীর শপথগ্রহণ। কিন্তু এখন আমি শুধুমাত্র ওই ধরনের একটা ক্লাইম্যাক্স রাখতে চাই না। তা হলে তো ব্যাপারটা ডকুমেন্টারি বা নিউজের মতো হয়ে যাবে। তাই সোমবারের শপথের পরে ছবির ক্লাইম্যাক্সটা রিওয়ার্ক করতে হচ্ছে। তবে এখনই সব কিছু বলব না,” বলছেন পরিচালক।

কথা শেষ করার আগে জিজ্ঞেস করা হল, ছবিতে কি গোধরাকাণ্ড দেখানো হবে? বা নরেন্দ্রর বিয়ে? উত্তরে রূপেশ জানান, “গোধরার উল্লেখ থাকবে। তবে বিয়ে নিয়ে আমি কিছু রিসার্চ করিনি। ‘নমো’ এমন একটা ছবি যেটা খুব অনেস্টলি বানাচ্ছি। সেখানে কোনও প্রোপাগ্যান্ডা থাকবে না। আবার কোনও কিছু অতিরঞ্জিত করেও দেখানো হবে না।”

নেহরু করিনি তবে নরেন্দ্র করতে কোনও আপত্তি নেই

মুসৌরি থেকে ফোনে জানালেন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়।

নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকায় তিনি কি অভিনয় করছেন? এটা জানতে চেয়ে যখন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করা হল, তিনি তখন মুসৌরিতে। বললেন, “আমাকে রূপেশ পল এ বিষয়ে ফোন করেছিল। ও দেশে ফিরে এলে আমার সঙ্গে দেখা হবে। অভিনেতা হিসেবে আমার নমোর চরিত্রে অভিনয় করতে কোনও আপত্তি নেই।”

এক সময় তিনি তো জওহরলাল নেহরুর চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হননি! “হ্যাঁ। রিচার্ড অ্যাটেনবরো আমাকে বলেছিলেন নেহরুর চরিত্রটি করতে। আমি রাজি হইনি। কারণ চরিত্রটা আমার মনঃপূত হয়নি। তা ছাড়া রোশন শেঠ যেন উইংসের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ওটা করার জন্য। তাই আমি আর সেটা করতে রাজি হইনি।”

তবে মোদীর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। “মোদীর নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। চিত্রনাট্য শুনব। ভাল লাগলে আমার এই চরিত্র করতে কোনও অসুবিধা নেই।”

বায়োপিক তো নানা ধরনের হয়। কোথাও অভিনেতার সঙ্গে বাস্তবের চরিত্রের চেহারার সাদৃশ্য থাকে। কোথাও সেটা একদমই থাকে না। তিনি মোদীর চরিত্রে অভিনয় করলে কী ভাবে নিজের লুকটা ঠিক করবেন? “আমি চেষ্টা করব মেক আপ দিয়ে সাদৃশ্যটা আনতে,” উত্তরে বলেন ভিক্টর।

আর পরেশ রাওয়াল? অভিনেতা হিসেবে তাঁকে খুব সম্মান করেন তিনি। “নানা জায়গায় আগেও বলেছি যে পরেশ রাওয়াল এ দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। ওর পরেই তো আমি রাখি জাভেদ জাফরিকে। নমোর চরিত্রটা পরেশ রাওয়াল করলেও খুব ভাল করবে,” তিনি জানান।

এখন অপেক্ষা রূপেশের সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়ার। কান থেকে রূপেশ রওনা হচ্ছেন ২৮ মে। তার আগেই ভিক্টরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে নেবেন কবে দেশে এসে ‘নমো’ নিয়ে দেখা করবেন দু’জনে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE