‘কিক’য়ের সেই হাসি
আবার কলকাতায় ফিরছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। এক সময় এ শহরে এসে শরৎ বোস রোডের এক গেস্ট হাউজে থেকে শ্যুটিং করে গিয়েছিলেন ‘কহানি’। সে ছবি আজ হলিউডে রিমেক হচ্ছে। নওয়াজ অবশ্য নেই তাতে। কিন্তু তাঁর কেরিয়ারেও বৃহস্পতি তুঙ্গে। সদ্য সলমন খানের সঙ্গে ‘কিক’ করে ১০০ কোটি ক্লাবের তারকাদের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছেন নওয়াজ। বলিউডে ছবি পিছু আজকাল না কি এক কোটি টাকা নিচ্ছেন তিনি। কলকাতায় আসছেন একটা কমিক-থ্রিলারের শ্যুটিং করতে। নাম ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’। পরিচালক কুশন নন্দী। ছবিতে রয়েছেন চিত্রাঙ্গদা সিংহ। তবে থ্রিলার বলে বেশি কিছু বলতে পারবেন না সিনেমা সম্পর্কে। শুধু এটুকু বলছেন, “ফিল্মে আমি একজন বাঙালিবাবু। দেড় মাস পরে কলকাতার আশেপাশে আবার যাব শ্যুটিং করতে। এছাড়াও ইচ্ছে আছে সার্থক দাশগুপ্তর ‘দ্য মিউজিক টিচার’ করার। রোলটা খুব ইন্টারেস্টিং। একজন শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের শিক্ষকের। তবে এখনও সই-সাবুদ হয়নি।”
ঈদে সলমন খানের বাড়িতে গেলেন না?
আরে কী করে যাব? আমি তো নাসিক-এ শ্যুটিং করছি।
তার মানে সলমনের বাড়ির বিরিয়ানিটা মিস হয়ে গেল তো!
হ্যাঁ, একদম তাই। শ্রীরাম রাঘবনের থ্রিলারের শ্যুটিং করছি নাসিক-এ। শ্রীরামের সঙ্গে কাজ করতে দারুণ লাগছে। প্রত্যেকটা দৃশ্যকে একদম অন্য একটা ধাঁচে দেখার চেষ্টা রয়েছে শ্রীরামের। তবে এ সবের মধ্যেও একটা কথা স্বীকার করছি। যবে থেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি, ঈদে আলাদা করে কিছু সেলিব্রেটই করতে পারি না। সব সময় শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত থাকি। আগের বার ‘লাঞ্চবক্স’য়ের শ্যুটিং করছিলাম। এ বার ‘বদলাপুর’য়ের শ্যুটিং। তাও আবার জেলে বসে শ্যুট করছি আমরা! সেখানে আর সেলিব্রেশন করার সময় কোথায়?
ছোটবেলার অনেক স্মৃতি তো রয়েছে ঈদ নিয়ে...
হ্যা।ঁ আমরা সাত ভাই ছিলাম। খুব একটা সচ্ছল অবস্থা ছিল না আমাদের পরিবারের। একটা থানকাপড় নিয়ে আসা হত। আর তার থেকে আমাদের সব্বার জামা তৈরি হত। মনে হত ইউনিফর্ম। সাত ভাই একসঙ্গে কোথাও গেলে মনে হত আর্মি থেকে আমরা আসছি। তাই আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। মাঝেমধ্যে ভাবি বন্ধুদের ডেকে সেলিব্রেট করব। কিন্তু কাজের চাপে যে সেটাও হয় না।
সলমনের কাছে ঈদি চাইলে কী নেবেন?
দেখুন, ওর সঙ্গে কাজ করে বুঝেছি যে সলমনের মতো সাচ্চা লোক খুব কম আছে। ঈদি চাইতে গেলে বলব ওর ‘অনেস্টি’টা ধার দিতে।
আর নিজে কী দেবেন?
সলমনের হাতে একটা ব্রেসলেট আছে না? ওটার ডুপ্লিকেট বানিয়ে ওকে গিফট করব।
‘কিক’য়ের পর আপনি দর্শক আর সমালোচক দু’তরফ থেকেই প্রশংসা পেয়েছেন। আপনার কেরিয়ারে এটা কি ‘কহানি’র থেকেও বড় ল্যান্ডমার্ক হয়ে গেল?
অবশ্যই তাই। হলে দেখেছি আমার এন্ট্রির পরেও লোকে সিটি দিচ্ছে। হাততালিও পড়ছে। এ এক অন্য অভিজ্ঞতা। ‘কহানি’র থেকে হাজার গুণ বেশি বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘কিক’!
‘কহানি’র রিমেক করছে হলিউড। শ্যুটিং হবে কলকাতাতেই। ইচ্ছে আছে হলিউড রিমেকে অভিনয় করার?
দেখুন, ছবিটা একবার করে ফেলেছি। আর ওই চরিত্রটা করার জন্য আমি দাঁত কামড়ে বসে নেই। তবে খবরটা পড়েছি। ভাল লেগেছে।
আচ্ছা, ‘কিক’য়ে ওই যে ‘টক’ আওয়াজ করে হেসেছেন, এটা কি আপনার নিজের আইডিয়া?
না, না। ওটা পরিচালক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার আইডিয়া।
আর ওই হাসিটা?
আরে ওটা তো আমি মনোজ বাজপেয়ীর কাছ থেকে টুকেছি! মনে আছে ‘অকস’-য়ে মনোজের ওই হাসিটা? আমি তো ওটা দেখেই অনুপ্রাণিত হয়ে ‘কিক’-এর ওই হাসিটা নকল করলাম।
মনোজকে জানিয়েছেন সে কথা?
হ্যাঁ, ও বলেছে সাক্ষাৎকার দিলে এটা বলে দিতে। তাই হাসি নিয়ে কথা উঠতেই এটা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বললাম!
সলমন নিজেও তো ওই হাসিটা ইউজ করেছিলেন ফিল্মের শেষে...
হ্যাঁ, করেছে তো। আমাকে প্রথমে বলেছিল ওটা ডাব করে দিতে। পরে অবশ্য ও নিজেই করেছে সেটা!
ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়লেন। নিজের জীবনের ভিলেনটা কে?
এটা কঠিন প্রশ্ন। ব্যক্তি হিসেবে কেউ নেই সে রকম। তবে বলব যে শক্তিরা আমার অভিনীত ছোট ছবিগুলোকে ঠিক মতো প্রচার করেনি তারাই আমার জীবনের ভিলেন।
ঈদে তো ‘কিক’য়ের বক্স অফিস কালেকশন দারুণ। শুনেছি ‘লাঞ্চবক্স’য়ের ইন্টান্যাশনাল কালেকশনও ভাল ছিল। লগ্নির তুলনায় ভাল সেল ছিল বিদেশে...
আমিও তাই শুনেছি। তবে এগজ্যাক্ট ফিগার বলতে পারব না। জানি না এই সাফল্য নিয়ে কেন প্রচার করা হল না। তবে এটাও বলব যে অভিনেতা হিসেবে ছবির ব্যবসা নিয়ে আমার অত মাতামাতি নেই। ওগুলোর খবর প্রযোজকরা রাখেন। আমি অ্যাক্টর। আমাকে যে রোলে দেবে, সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কালকে যদি আমি এ নিয়ে চর্চা করতে শুরু করি, তা হলে আমার কোনও ফিল্ম বক্স-অফিসে ভাল না করলে আমি তো খুব ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যাব। অ্যাক্টর হিসেবে আমার স্ট্র্যাগলটা অন্য ধরনের। যে রোলটা আমাকে দেওয়া হচ্ছে সেটা ভাল করতে পারছি কি না, সেটাই ইম্পর্ট্যান্ট।
‘কিক’-এর পর সবাই বলছে আপনি না কি ছবি পিছু ১ কোটি টাকা নিচ্ছেন! এটা কি ঠিক?
ওটা তো আমি ‘কিক’-এর আগেই নিতাম। বুঝি না কেন একজন অভিনেতার রেমুনারেশন একটু বেশি হলেই এত কথা ওঠে। আমার মতো অভিনেতা ছবিতে কাজ করলে তো জানপ্রাণ দিয়েই সেটা করি। কোন ঘরানার ছবিতে কাজ করছি সেটা ব্যাপার নয়। যেখানেই কাজ করি, ফাটিয়ে অভিনয় করি। সেটার জন্য কি ভাল রেমুনারেশন আমাদের প্রাপ্য নয়? অফিসে ভাল কাজ করলে অ্যাপ্রাইজালের সময় মাইনে তো বাড়ে। তা হলে অভিনেতারা ভাল কাজ করলে পারিশ্রমিক বাড়বে না কেন? তবে এখন বলিউডে আমাদের মতো অভিনেতাদের আর টাকা চেয়ে নিতে হয় না। এমনিতেই আমরা সেটা পেয়ে যাই।
শুনলাম আপনি না কি প্রযোজক হচ্ছেন। কী ধরনের ছবি প্রযোজনা করবেন? ‘কিক’-এর মতো, না কি ‘মিস লাভলি’ গোছের একটা কিছু?
মিডল পাথ ছবির প্রযোজনা করতে চাই। ২০১৫ নাগাদ শুরু করব। আমার মনে হয় ছবি যাই হোক না কেন, সেটার প্রোমোশন ঠিক মতো হওয়া দরকার। না হলে স্মল বাজেট ছবিগুলোতে ভাল কাজ করলেও সেগুলো কোথাও হারিয়ে যায়। ‘মিস লাভলি’ এত ভাল ছবি। কিন্তু সে ভাবে প্রচারই হল না।
সলমনের ফ্যানেরা তো নওয়াজউদ্দিনকে চিনে গেল। আপনার আর্টহাউস ছবির ফ্যানেরা কি ‘কিক’ দেখেছে?
হ্যাঁ, দেখেছে তো। ফিডব্যাক পাচ্ছি। যখন প্রথম ‘কিক’ সই করেছিলাম, অনুরাগ কশ্যপ শুনে খুব খুশি হয়েছিল। এখন একটাই ইচ্ছে ‘কিক’ যেন আমার স্মল বাজেট ছবিগুলোকে একটা ভাল কিক দেয়।
সেটাই কি হচ্ছে? ‘কিক’য়ের সাফল্যে ডিস্ট্রিবিউশন পাড়ায় কি আপনার অভিনীত ছোট ছবিগুলো বেশি দর হাঁকাতে পারবে বলে মনে হয়? বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘আনোয়ার কা অজব কিস্সা’ অনেক দিন হল শ্যুটিং হয়েছে। কিন্তু এখনও তা মুক্তি পায়নি...
আশা রাখছি পরিস্থিতি পাল্টাবে। ‘মাউন্টেন ম্যান’, ‘মনসুন শ্যুটআউট’ , ‘ঘুমকেতু’ সামনে মুক্তি পাবে। বুদ্ধদার ছবিটাও করে খুব ভাল লেগেছে। অনেক পরিশ্রম গিয়েছে ছবিটা করতে।
‘কিক’য়ের পর যদি এমন সিচ্যুয়েশন আসে যেখানে দু’টো ঘরানার ছবির অফার থাকল কিন্তু ডেট দিতে পারবেন একটাকেই। তা হলে কি ‘মিস লাভলি’র মতো ছবিতে ডেট দেবেন না ‘কিক’য়ের ঘরানার ফিল্মকে?
সব থেকে ইম্পর্ট্যান্ট হল চরিত্র। চিত্রনাট্য পড়ে প্রথমেই দেখি চরিত্রের মধ্যে নতুন কী আছে। আমি কি সেটা আগে করেছি? করে থাকলে আমি
নিজেকে রিপিট করতে চাই না। আর ‘মিস লাভলি’র মতো ছবি আমি আবার তখনই করব যদি আমি জানি যে ছবিটার প্রচার হবে। সে ক্ষেত্রে আমি ‘মিস লাভলি’ ঘরানার ছবি হয়তো সিলেক্ট করব না। কেরিয়ারে একটা ব্যালেন্স দরকার। স্মল বাজেট, ভাল ছবির প্রয়োজন আছেই। দু’বছরে একটা করলাম। স্যাটিসফ্যাকশনের জন্য আমাকে করে যেতেই হবে।
চেতন ভগত ‘কিক’য়ের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। ছবি দারুণ সফল কিন্তু চিত্রনাট্যে অনেক গলদ রয়েছে। আপনার কি মনে হয় চেতনের মতো লেখকের এই চিত্রনাট্যে সত্যিই আলাদা করে কিছু দেওয়ার ছিল?
অফকোর্স, আছে। আরে অনেক মিনিংফুল ছবি আছে যেগুলোর চিত্রনাট্যে অনেক গলদ থাকে। আমি নিজে আপনাকে সেগুলো দেখিয়ে দিতে পারি। আমার মনে হয় চেতন এমন একটা চিত্রনাট্য লিখেছেন যেটা ‘মাস’য়ের ভাল লাগছে। এবং সেখানেই চেতনের সার্থকতা।
মাঝে খবরে এসেছিল আপনার সঙ্গে না কি ইরফানের একটা দ্বন্দ্ব রয়েছে। তার পর উঠল রাজকুমার রাওয়ের গাড়ির মডেল দেখে না কি আপনার হিংসে হয়েছিল! এ সব গুজব কি আপনার সাফল্যের ফল?
দেখুন, ইরফান আর আমার গুজবটা শুনে আমি বোর হয়ে গিয়েছি। আসলে ডেটিং বা লিঙ্ক-আপ নিয়ে তো আমার কোনও গল্প নেই। কী নিয়ে আর কথা হবে? তাই এগুলো নিয়েই লেখালিখি চলছে সব জায়গায়। আমার গাড়ি আছে। তবে নিজে চালাই না। ছোটবেলা থেকে মারুতি ৮০০ ভাল লাগত। গাড়ি নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে এটাই বলি যে একটা মারুতি ৮০০ কিনতে পারলে আমি বর্তে যাব।
আচ্ছা সলমন হল, আমির হয়েছে। এ বার শাহরুখ খানের সঙ্গেও কাজ করবেন কি?
শাহরুখের ছবিতে কাজ করার ইচ্ছে তো আছে। ভাল কাজ করতে চাই। ভাল চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। ‘কিক’য়ে যেমন আমার চরিত্রটাও ইম্পর্ট্যান্ট ছিল। সেই ধরনের চরিত্র যদি শাহরুখের ছবিতে পাই, নিশ্চয়ই করব।
শেষ প্রশ্ন। নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির জীবনের কিক-টা কোথায়?
এমন একটা রোল দিন যেটা সব্বাই ভাববে আমি পারব না। সেটা করে দেখাতে পারলেই আমার কিক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy