Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

ঢাক-ঢোলে জোটের মনোনয়ন

রাজ্যে ভোটের উত্তাপ যত বাড়ছে, ময়দানে বিরোধী জোটের ছবিটা যেন ততই প্রকট হচ্ছে। জোটের বার্তা দিতে সবং-এ গিয়ে মানস ভুঁইয়ার সমর্থনে সূর্যকান্ত মিশ্রকে ভোট প্রচার করতে দেখা গিয়েছে।

বর্ধমানে জোটে মিছিল করে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছেন বাম প্রার্থীরা (বাঁ দিকে)। কাটোয়ায় ইন্দিরা গাঁধীর মূর্তিতে মালা দেওয়ায় সামিল সিপিএমও।

বর্ধমানে জোটে মিছিল করে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছেন বাম প্রার্থীরা (বাঁ দিকে)। কাটোয়ায় ইন্দিরা গাঁধীর মূর্তিতে মালা দেওয়ায় সামিল সিপিএমও।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০১:১১
Share: Save:

রাজ্যে ভোটের উত্তাপ যত বাড়ছে, ময়দানে বিরোধী জোটের ছবিটা যেন ততই প্রকট হচ্ছে। জোটের বার্তা দিতে সবং-এ গিয়ে মানস ভুঁইয়ার সমর্থনে সূর্যকান্ত মিশ্রকে ভোট প্রচার করতে দেখা গিয়েছে। আবার উল্টো দিকে মানসবাবুকেও সিপিএম কর্মীদের ‘কমরেড’ বলে সম্বোধন করতে দেখেছেন রাজ্যবাসী। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে উপলক্ষ করে জোটের ছবি এ বার বর্ধমানেও। বুধবার মনোনয়ন জমা গিতে গিয়ে কখনও সিপিএম প্রার্থীকে দেখা গেল কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গে হাতে হাত মেলাতে। কখনও বা আবার কংগ্রেস প্রার্থীর সঙ্গে গেলেন সিপিএম নেতা।

এ দিন শহরের পার্কাস রোডে সিপিএমের বর্ধমান জেলা দফতর থেকে ১১টা ১৫ নাগাদ বর্ধমান সদর ও দক্ষিণ মহকুমার ৮টি আসনের বাম প্রার্থীরা মিছিল করে জিটি রোড ধরে প্রশাসনিক ভবনের দিকে রওনা দেন। বাদামতলা মোড়ের কাছে বাম প্রার্থীদের শুভেচ্ছা জানতে ততক্ষণে উপস্থিত হয়ে গিয়েছেন জেলা কংগ্রেসের সভাপতি আভাষ ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়েরা। বামেদের মিছিল আসতেই আভাষবাবু জড়িয়ে ধরলেন বর্ধমান দক্ষিণের সিপিএমের প্রার্থী আইনুল হককে। এরপরই হাতে হাত ধরে বাকি পথটা রওনা দিলেন বাম-কংগ্রেস নেতারা। একই ভাবে মেমারির সিপিএম প্রার্থী দেবাশিস ঘোষের সঙ্গে মিছিলে পা মেলাতে দেখা যায় মেমারি পুরসভার কংগ্রেসের একমাত্র কাউন্সিলর শ্যামল সরকারকে। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘যৌথ ভাবে মিছিল, প্রচার সবই চলছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে আমরা এককাট্টা।”

জোটের ছবি দেখা গেল কাটোয়াতেও। এখানে বেলা ১২টা নাগাদ সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির দফতর থেকে কাটোয়ার কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামা মজুমদারকে নিয়ে মিছিল শুরু হয়। রাস্তার মধ্যে ইন্দিরা গাঁধীর মূর্তিতে মালা ও মহাত্মা গাঁধীর পায়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শ্যামাদেবী। কাছারি রোডের চড়কতলার কাছে মিছিল শেষ হয়। সেখান থেকেই মনোনয়ন জমা দিতে শ্যামাদেবীর সঙ্গে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে পড়েন সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।

কালনা মহকুমার ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেও জোটের মিছিল ঘিরে বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বুধবার কালনা, মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রের চার জন প্রার্থীকে নিয়ে বেলা ১০টা নাগাদ মিছিল শুরু হয় বৈদ্যপুর মোড় থেকে। তেঁতুলতলা প্রভৃতি এলাকা পরিক্রমা করে মিছিলটি। বিরোধীদের দাবি, এ দিন মিছিলে পা মেলাতে দেখা যায় প্রায় হাজার সাতেক বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মীকে। মিছিলের আগাগোড়া ঢাক আর ঢোলের বোলে ছিল কার্যত উৎসবের মেজাজ। সঙ্গে আবেদন, ‘নিজের ভোট নিজে দিন/ভোট লুঠ রুখে দিন।’ মিছিলটি বেলা ১২টা নাগাদ মহকুমাশাসকের দফতরে পৌঁছয়। তিনটের আগেই মনোনয়ন জমা দেন জোটের চার প্রার্থী। মিছিল থেকে শাসকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন বিরোধী নেতা-কর্মীরা। শহরের ভোটারদের একাংশ জানান, এ দিন জোটের মিছিল থেকে সারদা-নারদ কাণ্ড, টেট কেলেঙ্কারী, চাষের ক্ষতিপূরণের চেক বিলিতে অনিয়ম-সহ বিভিন্ন বিষয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দাগতে থাকেন বিরোধী নেতা-কর্মীরা।

প্রসঙ্গত পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রটিতে কে লড়বে, তা নিয়ে খানিকটা হলেও টানাপড়েন তৈরি হয় কংগ্রেস-সিপিএমে। এ দিনের মনোনয়ন-মিছিলে অবশ্য সে সব টানাপড়েনের ছবি অবশ্য উধাও। পূর্বস্থলী দক্ষিণের কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ ভট্টাচার্যের আশেপাশে সিপিএম নেতা-কর্মীদেরই বেশি দেখা মেলে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। অভিজিৎবাবুর গলাতেও জোটের সুর। তিনি বলেন, ‘‘সব সময় সিপিএমের থেকে সহযোগিতা মিলছে। বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখছি মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, ‘‘যৌথ প্রচার করছি আমরা। তার রেশ ধরে মনোনয়নও জমা দেওয়া হল।”

প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বর্ধমান গ্রামীণ এলাকার ১৬টি আসনের ১২টিতে সিপিএম, একটি করে আসনে মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং দু’টি আসনে কংগ্রেস প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া জামালপুরের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী উজ্জ্বল প্রামাণিকও মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। খণ্ডঘোষ, বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ, জামালপুর, মন্তেশ্বর, ভাতার, পূর্বস্থলী উত্তর, গলসি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীরা এবং কাটোয়া, মঙ্গলকোটে বহুজন সমাজবাদী পার্টির (বিএসপি) প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দেন। মেমারিতে এক নির্দল প্রার্থীকেও মনোনয়ন দিতে দেখা যায়।

তবে জোটের মিছিলকে মোটেই পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূল। কালনা ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায় বলেন, ‘‘আমরা চাইলে এর থেকে কয়েক গুন বেশি লোক নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে যেতে পারতাম। তৃণমূল তার জনসমর্থন ভোট বাক্সে দেখাবে।’’নিজস্ব চিত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy