দেবশ্রী রায়।
দল তাঁকে ‘ব্যবহার’ করেছে। কিন্তু ‘সম্মান’ দেয়নি। এমনই মনে করেন রায়দিঘির বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। ‘দাদার কীর্তি’-র অভিনেত্রী ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অনুযোগ করে মঙ্গলবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন, তৃণমূলের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখতে চান না তিনি। সোমবারই তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন দেবশ্রী। জানিয়েছেন, তিনি তৃণমূলের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান।
তবে কি তিনি ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ নেবেন? জবাবে দেবশ্রী বলেন, ‘‘টানা ১০ বছর মানুষের জন্য কাজ করেছি। সেটা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। তবে বেশি করে অভিনয়ে ফেরার কথা ভাবছি। ওটাই আমার আসল জগৎ। এখনও সম্মানের সঙ্গে ডাক পাই।"
তাঁর অভিমানের কারণ জানাতে গিয়ে দেবশ্রী বললেন, ‘‘দলের জন্য কী করিনি! দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) আমাকে মঞ্চে নাচতে বলেছেন। নেচেছি। পঞ্চকন্যা অনুষ্ঠানে রানিকে (অভিনেত্রী রানি মুখোপাধ্যায়) এনে দিতে বলেছেন। দিয়েছি। কিন্তু দল আমাকে কী দিয়েছে। দু'বার বিধায়ক হয়েছি। কিন্তু মন্ত্রিত্ব দূরের কথা, দল বা সরকারের কোনও কমিটিতেও জায়গা পাইনি।’’ কিন্তু তিনি তো রাজ্য সরকারের ‘অ্যানিম্যাল রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট’ বিভাগের কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন? ‘‘সেও এক কাহিনি।’’ বললেন দেবশ্রী। তাঁর দাবি, ‘‘আমি নিজে থেকে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলাম। কারণ আমি পশুপ্রেমী। কাজ করতে চেয়েছিলাম। তখন ওই দফতরের মন্ত্রী ছিলেন স্বপন দেবনাথ। কিন্তু আমায় বলা হল, চেয়ারম্যান করা যাবে না। নন্দ সাহা (নবদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা)-কে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয়েছে বলে তাঁকে একটা পদ দিতেই হবে। ওঁকে চেয়ারম্যান করা হল। আমায় ভাইস চেয়ারম্যান। তাতেও রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু কাজ করতে দেওয়া হয়নি। মাস ছ'য়েক আগে জানতে পারলাম আমাকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটাও আমায় না জানিয়ে।"
কেন তাঁকে সরানো হল? দেবশ্রীর জবাব, ‘‘সেটা আমি বলতে পারব না। আমি অনেক কাজ করতে চেয়েছিলাম। দিদিকে বলেছিলাম, আপনি তো এত কিছু করেন। গরিব মানুষকে ২ টাকা কেজি দরে চাল দেন। অনেক গরিব মানুষ পথের কুকুরদের খাওয়ান। তাঁদের জন্যও ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হোক। দিদি শোনেননি। তার পরে তো আমায় না জানিয়ে কমিটি থেকেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
তাহলে কি এবার তিনি বিজেপি-তে? দেবশ্রীর জবাব, ‘‘এখনও কিছু ভাবিনি। অভিনয়ে ফেরার ইচ্ছা। কয়েকটা অফারও পেয়েছি। তবে সম্মানের সঙ্গে কেউ ডাকলে ভেবে দেখব।’’ তাঁর প্রথম নায়ক মিঠুন চক্রবর্তী! ‘নদী থেকে সাগরে’ ছবিতে এক সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। তখন অবশ্য তিনি দেবশ্রী নন, ‘রুমকি’ নামে পরিচিত ছিলেন। ‘পাগল ঠাকুর’ ছবির ছোট্ট রামকৃষ্ণ নায়িকা হলেন প্রথমবার। সেই মিঠুন এখন বিজেপি-তে। এ বার কি তিনিও তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন? দেবশ্রী হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘সে অনেক কাল আগের কথা। সম্প্রতি একটা শ্যুটিংয়ে মিঠুনদার সঙ্গে দেখা হল। তার পরে পরেই উনি বিজেপি-তে যোগ দিলেন। আমার সঙ্গে অবশ্য মিঠুন’দার রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা হয়নি।’’
শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবারই বিজেপি ছেড়েছেন। শোনা যায়, তাঁদের বাধাতেই দেবশ্রী একবার চেয়েও বিজেপি-তে যেতে পারেননি। এখন কি তাহলে তাঁর রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেল? এক মুহূর্ত সময় না দিয়ে দেবশ্রী বললেন, ‘‘ওঁদের নিয়ে আমি মোটেও ভাবিত নই। ওঁরা এমন কিছু কেউকেটা নন যে, দেবশ্রী রায়কে সে সব মনে রাখতে হবে। কে কাকে ছাড়ল, ধরল তা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। আর আমি বিজেপি-তে যোগ দিতে চাই এমনও নয়। কেউ সম্মান দিয়ে ডাকলে ভেবে দেখব। না হলে নিজের জগৎ নিয়েই থাকব। সবার উপরে আমি একজন শিল্পী।’’
অভিনেত্রী দেবশ্রীকে রাজনীতিক পরিচয় দিয়েছিল তৃণমূল। শোভন বলেন, তিনিই দেবশ্রীকে বিধায়ক করেছিলেন। সেই তৃণমূল ছেড়ে যেতে খারাপ লাগছে না? দেবশ্রীর বলছেন, ‘‘একটুও না। আমায় কেউ বিধায়ক করেনি। দেবশ্রী না হয়ে কোনও ‘মালতি রায়’কে জেতাতে পারলে বুঝতাম। আমি কাকে হারিয়েছিলাম? কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। দলে ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে পরিচায় ছিল আমার।’’ তবে তৃণমূল যে তাঁকে অন্য পরিচয় দিয়েছে, সেটা কিছুটা হলেও ঠিক বলে মনে করেন দেবশ্রী। তাঁর কথায়, ‘‘সেটা কিছুটা হলেও ঠিক। আমাকে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি সে জন্য সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব। কিন্তু অসম্মানও কম করেনি। রায়দিঘিতে প্রার্থী হব না নিজে থেকে বলেছিলাম। কিন্তু তার পরে দলের কেউ একটা ফোনও করেনি। আমি কেমন আছি, সেই খবরটাও কেউ নেয় না। অথচ আমাকে ফোন করে দিনের পর দিন হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’ তবে অভিমান থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর উপর সরাসরি কোনও ক্ষোভ নেই দেবশ্রীর। বললেন, ‘‘দিদি আসলে এখন আর নিজে কিছু করেন না। অন্যের কথায় চলেন। তাই পুরনোরা একে একে দল ছাড়ছে। দিদির এখন অনেক পরামর্শদাতা।’’ কারা তাঁরা? অভিনেত্রী-বিধায়কের জবাব, ‘‘নাম বলব না। সবাই সব বুঝতে পারছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy